ভিডিও

উপহার থালা-বাটি, মানসিক দীনতা

অলোক আচার্য

প্রকাশিত: জুন ০৩, ২০২৪, ০৭:৪৯ বিকাল
আপডেট: জুন ০৩, ২০২৪, ০৭:৪৯ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

বইমেলা চলছে। বাঙালির প্রাণের উৎস বইমেলা। একটি বইপড়া প্রজন্ম গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের। সেই দায়িত্ব আমরা যথাযথভাবে পালন করছি না। কীভাবে গড়ে তোলা যায় সেই নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। গত বেশ কিছুদিন যাবৎ আলোচনা হচ্ছে শিশুদের বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় দেওয়া উপহার নিয়ে।

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সুশীল সমাজের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করেছি। লক্ষ্য করেছি সমালোচনা। এসব সমালোচনা যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। সারা দেশের বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই প্রতি বছর নানা ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকে। বিশেষত ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। এছাড়াও জাতীয়ভাবেও ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকে।

এরও বাইরে বিভিন্ন সংগঠনও আয়োজন করে প্রতিযোগিতার। সেসব প্রতিযোগিতায়ও একই চিত্র। কোমলমতি এসব শিক্ষার্থীদের হাতে পুরষ্কার হিসেবে তুলে দেওয়া হয় বিভিন্ন দামের প্লেট বা গ্লাস বা এ জাতীয় কিছু। দিন শেষে হাতে একটি প্লেট নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে।

তার মেধার স্বীকৃতি হলো সেই প্লেট! ওরা তখন থেকেই বুঝতে শেখে যে বইয়ের চেয়েও এসব থালা-বাটি দামী! কারণ এসব তাদের যোগ্যতার বিপরীতে দেওয়া হচ্ছে! সুতরাং বইকে দামী হিসেবে বা বন্ধু হিসেবে নেওয়ার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই! একজনকে আপনি শেখাবেন এক বিষয় আর পরবর্তীতে তার কাছ থেকে আশা করবেন অন্য কিছু সেটা তো হয় না।

আমাদের কাজ তো পাঠক তৈরি করা। কিন্তু হচ্ছে বিপরীত! হাতে প্লেট নিয়ে হাসি হাসি মুখ করে ফটোসেশনের জন্য দাঁড়িয়ে থাকছে। ছাত্র-ছাত্রীর হাতে প্লেট কেন থাকবে? একবার ভাবুন যে একটি থালা-বাটি নিয়ে বাড়ি ফিরলে সেটি কয়েকদিন বা বছর ব্যবহারের মাধ্যমেই শেষ হবে। আর বইটি তাকে সঙ্গ দিবে তার বেঁচে থাকা অব্দি।

বইয়ের জ্ঞান তাকে পথ দেখাবে, শেখাবে ও সাবধান করবে। সেই সাথে আরও বই পড়তে উৎসাহিত করবে। তখন ওদের হাতে থাকবে বই। বই ওদের মুক্ত জ্ঞান অন্বেষণের পথ দেখাবে। এবার ভাবি যে একটি করে বই উপহার দেওয়া কি খুব কঠিন কাজ? আসলে অত্যন্ত সহজ কাজ এটি। শুধু দরকার ইচ্ছা। আমরা ছাত্র-ছাত্রীর হাতে থালা-বাটি নয় বই তুলে দিতে চাই, এই ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে চাই।

জন্মের পর থেকেই শিশুর মনোজগত ধীরে ধীরে বিকশিত হতে থাকে। শিশুর চারপাশের জগৎ বিস্তৃত হতে শুরু করে। শিশু তার আশেপাশের শব্দ, বিভিন্ন বস্তু এবং মানুষ সম্পর্কে কৌতুহলদীপ্ত হয়ে ওঠে। এই সময়টায় শিশু মূলত খেলাধূলা করে। সে যা শেখে তা আনন্দের সাথে।

প্রথম ছয় বছর পর্যন্ত শিশুর শিক্ষা খেলাধূলার মাধ্যমেই হয়। সেই খেলাধূলার উপকরণের সাথে যদি হাতে বই তুলে দেওয়ার অভ্যাস করি তাহলে শিশুর মনোজগতে বই বিচরণ করবে। অভিভাবক হিসেবে সন্তানের জন্য জন্মদিন, মেলা, উৎসাহদানে বিভিন্ন সময় উপহার কিনে আনি।

আমাদের সেই দিন ফিরিয়ে আনতে হবে। অতিরিক্ত কোন কাজ হিসেবে নয় বরং আর দশটা স্বাভাবিক কাজের মতই বই পড়া একটি স্বাভাবিক কাজ হবে। খেলাধূলা বা বিনোদন লাভের উপায় যেমন আমাদের আনন্দের উৎস তেমনভাবে বই যদি আমাদের আনন্দ উপকরণ হতে পারে তখন তা হবে মনের ক্ষুধা মেটানোর অন্যতম অনুষঙ্গ।

তাছাড়া আমরা যত চেষ্টাই করি না কেন লাভ কিছু হবে না। এজন্য সব ধরনের উপহার হিসেবে আমরা শিশু-কিশোরদের হাতে বই তুলে দেই। এই প্রথাটাই চালু হোক সমাজের সর্বস্তরে। জাতির এ দীনতা কেটে যাক কালক্রমে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হোক আর কোনো সংগঠন হোক শিশু-কিশোরের হাতে বই-ই উঠুক, অন্য কোনো বস্তুুগত সামগ্রী নয়। আর সেটা হলেই কেবল একটি সুস্থ সুন্দর প্রজন্ম গড়ে তুলতে সক্ষম হবো। নচেৎ নয়।


লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

sopnil.roy@gmail.com

01737-044946



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS