ভিডিও

চাকরিতে অনিয়ম ঠেকাতে বায়োম্যাট্রিক

জোবাইদুজ্জামান সৌখিন

প্রকাশিত: জুন ১০, ২০২৪, ০৬:৩২ বিকাল
আপডেট: জুন ১০, ২০২৪, ০৬:৩২ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

বর্তমান বাংলাদেশ একটি ডিজিটাল দেশ। এটি দাবি নয় বরং বিশেষভাবে প্রমাণিত। বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে যে রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন তার মূল শিরোনাম ছিল ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’। ১২ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে ডিজিটাল বিপ্লবের ঘোষণা আসে।

তারই হাত ধরে আজ সগৌরবে বলতে পাচ্ছি আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের নাগরিক। আর প্রমাণ হিসেবে বলা যায় আমাদের জাতীয় পরিচয় পত্র। যেহেতু ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতকরণকে বোঝায় এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণাটির মূল বিষয় হলো সব ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার দেশের শিক্ষা স্বাস্থ্য কর্মসংস্থান এবং দারিদ্র মোচনের ব্যবস্থা করা।

তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান বাংলাদেশের সরকার প্রধান বিভিন্ন পদক্ষেপ প্রহণ করেছেন। এগুলো হলো-ওয়েবসাইট বা ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও দিকনির্দেশনা সরাসরি জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় ওয়েব পোর্টাল হলো- www.bangladesh.gov.bd।

এছাড়াও সরকারি সেবা ও তথ্য বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য দেশে তৈরি করা হয়েছে বেশ কয়টি সরকারি মোবাইল হেল্পডেস্ক। যেগুলো হটলাইন নম্বরের মাধ্যমে সেবা দিয়ে থাকে। সরকারি তথ্য ও সেবা -৩৩৩, জরুরি সেবা (পুলিশ, ফায়ার সার্ভস ও এ্যাম্বুলেন্স-৯৯৯, শিশু  ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধ-১০৯০, ভূমি সেবা হটলাইন-১৬১২২, জাতীয় পরিচয় তথ্য-১০৫, শিশুর সহায়তা-১০৯৮, কৃষক বন্ধু ফোন সেবা-৩৩৩১, কৃষি কল সেন্টার-১৬১২৩, মহিলা সংস্থা বা তথ্য আপা-১০৯২২।

আরো কিছু সেবা হলো- ই-সেবা থেকে জমি-জমা সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য। ই-কমার্স সাইটের মাধ্যমে অনলাইন বেচাকেনা। শিক্ষায় আছে ১০ মিনিট স্কুল। স্বাস্থ্যসেবায় আছে টেলিমেডিসিন সেবা কেন্দ্র। আয়কর হিসাব এবং রিটার্ন তৈরি ও দাখিল করা, মোবাইল ব্যাংকিং, বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস বিল দেয়া। যার কারণে এখন আর লাইনে দাঁড়ানোর প্রয়োজন পড়েনা।

পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ, স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, ট্রেন বাস ও প্লেনের টিকিট মানুষ এখন ঘরে বসেই করতে পাচ্ছে। ই-টেন্ডারের মাধ্যমে টেন্ডার নিয়োগে উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্নীতি হ্রাস পেয়েছে। ২০১৮ সালের ১২মে মহাকাশে প্রেরণ করা হয় বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’।

বিশ্বের ৯ম দেশ হিসেবে পরীক্ষামূলকভাবে ৫জি ইন্টারনেট চালু হয় ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর। দেশের প্রথম বাংলা ভাষাভিত্তিক ব্রাউজার ‘দুরন্ত’ যাত্রা শুরু করে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১। সম্পূর্ণ দেশিয় প্রযুক্তিতে বাংলাদেশের প্রযুক্তিবিদরা তৈরি করেছেন ‘ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন’ বা ইভিএম।

এস্তোনিয়াভিত্তিক ‘ই-গভর্নেন্স একাডেমি ফাউন্ডেশন’ এর করা জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা সূচকে বিশ্বের ১৬০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৮তম, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান ১ম (২৪/০৮/২০২১ তারিখের রিপোর্ট অনুযায়ী)।

এতো প্রযুক্তির ভিড়ে কিছু কিছু জায়গায় এর ছোঁয়া এখনো অনুপস্থিত মনে হয়। বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম পত্রিকার প্রধান শিরোনাম হিসেবে দেখা যায়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে শিক্ষকসহ ১২৬ জন আটক (এটিএন বাংলা ০৮/১২/২০২৩), প্রাথমিক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি,গ্রেপ্তার-৭(প্রথম আলো ০৩/০২/২০২৪), এসআই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে গিয়ে গ্রেপ্তার-২(বিজয় টিভি ১৮/০৬/২০১৯), নিয়োগ পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে গিয়ে ধরা, গ্রেপ্তার-৪(দিপ্ত নিউজ ০৪/০৬/২০২২)।

উল্লেখ্য এসব জালিয়াতি হয় কয়েকটি কায়দায়। হল কন্ট্রাক্ট, ডিভাইস এবং প্রক্সি। হল কন্ট্রাক্ট বিষয়টা আমাদের নৈতিকতা অবক্ষয় যা ঠেকাতে হলে প্রতিটি নিয়োগ পরীক্ষা অন্ততপক্ষে বিভাগে নেয়া জরুরি। বাকিগুলো ডিজিটাল চুরি। ডিভাইস ঠেকাতে প্রতিটি কেন্দ্রে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধের ডিভাইস স্থাপন করা জরুরি এবং প্রক্সির জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে বায়োম্যাট্রিক এটেন্ডেন্স।

যেহেতু বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের বায়োম্যাট্রিক প্রিন্ট নির্বাচন অফিসে আছেই তাই এটি নিয়োগ পরীক্ষায় সংযুক্ত করে দুর্নীতি ঠেকানো যেতে পারে। বলা যায় ডিজিটাল ভাবেই ডিজিটাল চুরি বন্ধ। আর এই প্রক্রিয়াটা মেধাবী বেকার যুবকদের কাছে একটি নতুন দ্বার উন্মোচন করতে পারবে বলে আমি মনে করছি।


লেখক : শিক্ষক-প্রাবন্ধিক

01723-056356



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS