ভিডিও

বাবা আর আমাদের চুমু দেয় না

সাজেদুর আবেদীন শান্ত, কবি ও গণমাধ্যমকর্মী

প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২৪, ১১:০০ দুপুর
আপডেট: জুন ১৬, ২০২৪, ১১:০০ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

বাবা চাকরির সুবাদে ঢাকায় থাকতো। ঢাকাতেই বাবা কাটিয়েছে তার জীবনের সিংহভাগ সময়। ছোটবেলায় আমরাও ঢাকায় থাকতাম। ছোটভাই জন্মগ্রহণ করার পর আমরা গ্রামে চলে এসেছি। আমরা আসার পরেও বাবা তখনও থাকতো ঢাকায়। কারণ আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনিই।

ছুটি পেলে বা না পেলেও একমাস পরপর গ্রামে আসতো বাবা। সাপ্তাহিক ছুটিতে চলে আসতো। এজন্য বাবা বেশিরভাগ সময়েই বৃহস্পতিবার রাতে আসতো। আবার শুক্রবার রাতে চলে যেত।

যে রাতে বাবা আসতো সে রাতে আমরা দুই ভাইয়ের কেওই ঘুমাইতাম না। সারারাত জেগে থাকতাম, যে বাবা কখন আসবে। আম্মু বলতো, 'ঘুমা। তোর আব্বু আসলে আমিই ডেকে দিবো'।

কিন্তু না! কিছুতেই আমরা আম্মুর কথা শুনে ঘুমাইতাম না, জেগে থাকতাম বাবা আসার জন্য। ঢাকা থেকে আমাদের গ্রামের বাসা পর্যন্ত আসতে বাবার প্রায় ৭-৮ ঘন্টা লেগে যেতো। জ্যাম থাকলে তো আরও বেশি। বাবা অফিস শেষ করেই বাসে উঠে চলে আসতো। কোনোদিন ফজরের আগেও বাসায় পৌঁছাইতো। কোনো কোনোদিন ফজরও পার হয়ে যেতো।

বাবা আসার খবরে আমরা অধিকাংশ সময় টিভিতে কার্টুন দেখে সময় কাটাতাম। আর প্রায় আধাঘণ্টা একঘণ্টা পরপর বাবাকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করতাম যে, বাবা কই এখন? কতদুর? আরও কত সময় লাগবে?

বাবা বিরক্ত হতেন না। বলতেন, 'এইতো টাঙ্গাইল এসেছি, এইতো সিরাজগঞ্জ এসেছি, এইতো বগুড়া, আর মাত্র দেড় ঘন্টা বা একঘণ্টা'।

আর আমরা শুধু বসেবসে অপেক্ষার প্রহর গুনতাম। এরপর বগুড়ার সোনাতলার বোচারপুকুর নামক এলাকায় আসলেই বাবা ফোন দিয়ে বলতেন, 'এখন বোচারপুকুর আছি, রাস্তায় বের হও'।

আমরা চিৎকার দিয়ে দুইভাই রাস্তায় বের হয়ে যেতাম। তারপর রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছোট ভাইকে বলতাম, 'এই সিএনজিতেই আসতেছে বাবা'। ছোট ভাই রাব্বি বলতো, 'না! এইটায় না তার পরেরটায় আসবে। এমন করে দুই তিনটা সিএনজি গুনতেই আম্মু বলতো, 'কি শুরু করলি তোরা! আসলে তো নামবেই গুনার কি আছে! তারপর হুট করে কোনো এক সিএনজি থেকে বাবা নামতো। বাবাকে নিয়ে বাসায় ঢুকতাম। বাবা ব্যাগটা রেখেই আমাদের দুই ভাইয়ের কপালে চুমু দিতো।

বাবা বাসায় ঢুকার পর রাব্বির প্রথম কাজ ছিল, বাবা ফ্রেস হতে যাওয়ার পর তার ব্যাগ চেক করা। আমাদের জন্য কি কি আনতেন তা দেখা। প্রতিবারই আসার সময় আমাদের জন্য কিছু না কিছু আনতেনই।

তারপর বাবা ফ্রেস হয়ে আসলে আমরা খাবার টেবিলে বসতাম। কারণ বাবাও জানে, তিনি আসবেন দেখে আমরাও না খেয়েই আছি।

একসাথে খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ গল্প করে শুয়ে পড়তাম। এভাবেই বাবা আসার দিন আমরা অপেক্ষা করতাম।

তারপর বাবা একদিন বা দুইদিন থাকলে যাওয়ার দিন আবার শুরু হতো আমাদের মন খারাপ। বাবার অভ্যাস ছিল বাসায় প্রথমে এসেই ও বাসা থেকে যাওয়ার আগে আমাদের কপালে চুমু দেওয়া। আমি ইন্টারমিডিয়েট পড়া অবস্থায়ও বাবা আমাদের চুমু খেয়ে বাহিরে যেতেন। এখন বাবা আর কোথাও যায় না। বাসাতেই থাকে। আমরাই এখন বাহিরে যাই বিভিন্ন কাজে। আর বাবার জন্য অপেক্ষা করা হয়না আমাদের। বুঝে গেছি আমরা বড় হয়ে গেছি।

কিন্তু চিত্রপট পালটে গেছে। আমরা কোথাও গেলে আসার সময় বাবাই এখন অপেক্ষা করে যে, কখন ফিরবো আমরা! ফেরার পরে মায়ের মুখে শুনি, রাস্তা থেকে বাসা পর্যন্ত সারাক্ষণ পায়চারি করে, যে কখন ফিরবো আমরা!

 



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS