ভিডিও

পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে

প্রকাশিত: জুন ২২, ২০২৪, ০৬:৪৯ বিকাল
আপডেট: জুন ২২, ২০২৪, ১১:১০ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় সিলেটসহ গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। সুরমা নদী উপচে এরই মধ্যে সিলেট নগরীর উপশহর এলাকাসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসাবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বন্যার্তদের। সিলেটে পানিবন্দি ২০ লাখ মানুষ পড়েছেন নানা সংকটে। সুনামগঞ্জে বন্যার্তদের আশ্রয় দিতে ৫১৬টি আশ্রয় কেন্দ্র চালু হয়েছে।

সিলেটে পানিতে ডুবে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্টে শিশুসহ সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ও বুধবার সিলেট ও মৌলভীবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় এ সব দুর্ঘটনা ঘটে। সীমান্তবর্তী গোয়াইন, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ, জকিগঞ্জ, বিয়ানী বাজার, দক্ষিণ সুরমা, বিশ্বনাথ, গোপালগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত।

রাস্তাঘাট ডুবে বন্ধ রয়েছে গ্রামীণ যোগাযোগ। জেলা প্রশাসনের হিসাব বলছে, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় গত বুধবার পর্যন্ত জেলায় মোট বন্যার্ত মানুষের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। একই অবস্থা সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভী বাজার এলাকায়। বিভিন্ন নদ-নদীর পানি উপচে রীতিমতো ভাসছে এসব জেলার নানা অঞ্চল। বাসাবাড়ি ছাড়াও পানি ঢুকে পড়েছে স্কুল, কলেজ সহ বিভিন্ন স্থাপনায়।

আগামী তিন দিন এসব জেলায় ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির শংকা রয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা ঢলে রংপুর ও কুড়িগ্রাম অঞ্চলের প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তিস্তা ও দুধকুমার নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বেড়ে বিপদসীমার খুব কাছাকাছি পৌছে গেছে।

আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে রংপুর ও কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চলে স্বল্প মেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রংপুরের কাউনিয়া, পীরগাছা ও গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা অববাহিকার বেশ কয়েকটি এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। লালমনিরহাটের তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি চলে এসেছে। পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের ৪৪টি স্ল্ইুসগেট খুলে রেখেছে কর্তৃপক্ষ।

দেশে বর্ষা মৌসুমে বন্যা স্বাভাবিক ঘটনা। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে সিলেটে বেশি বৃষ্টি হয়। গত কয়েক বছর ধরে সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যা ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। বর্ষাকালে টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত হচ্ছে সিলেট অঞ্চল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিলেটের বন্যার ভয়াবহতার পেছনে নদীর নাব্য সংকট যেমন ঘটে, তেমনি অপরিকল্পিত নগরায়ণ, দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার কারণেও সিলেট অঞ্চলের মানুষ ঘন ঘন বন্যার মুখোমুখি হচ্ছেন।

জানা যাচ্ছে, উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে মৌলভী বাজারের নদ-নদীর পানি বাড়ায় চার উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে বন্যা কবলিত এলাকার উঁচু স্থানের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেছে। জেলার সবকটি নদীতে উজানের ঢল নেমে আসায় নদীগুলো পানিতে টইটুম্বুর।

বাড়ছে মনু, ধলাই, কুশিয়ারা, জুড়ি, কান্টিনালা ও ফালাই নদীর পানি। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত সবকটি নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাশাপাশি দেখা দিয়েছে নদী ভাঙনের শংকাও। আমরা মনে করি, এ বিষয়গুলো এড়ানোর সুযোগ নেই।

এদিকে জানা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে কুড়িগ্রামের প্রধান দুই নদী তিস্তা ও দুধকুমার বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি প্রতিনিয়ত বেড়ে বিপদসীমার খুব কাছে রয়েছে। আমরা বলতে চাই, পানি বন্দী দশা কিংবা বন্যার মতো পরিস্থিতিতে, পানি বাহিত রোগ বালাই এবং বিশুদ্ধ পানি সংকট তৈরি হয়- যা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

ভুলে যাওয়া যাবে না, পানি বন্দি মানুষের দুর্ভোগ কতটা চরমে ওঠে। অভিন্ন নদীগুলোর গতি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার ব্যাপারে প্রতিবেশী দেশ বিশেষ করে ভারত ও নেপালের কার্যকর আলোচনার বিষয়েও সরকারকে উদ্যোগ নেওয়া উচিত, যাতে তা ফলপ্রসু হয়।

মনে রাখা দরকার, প্রাকৃতিক দুর্যোগকে রোধ করার কোনো উপায় নেই, কিন্তু প্রস্তুতি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হলে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কমানো সম্ভব। বন্যা কবলিত এলাকায় দুর্গত মানুষের কথা ভুলে গেলে চলবে না। তাদের মানবিক বিপর্যয়ের দিকগুলোর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়েও নজর দেওয়া জরুরি। বন্যার্তদের ত্রাণ সহায়তা দিতে সরকারকে দ্রুত এগিয়ে আসতে হবে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS