ভিডিও

চামড়ার বাজারে নৈরাজ্য

প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০২৪, ০৭:২৭ বিকাল
আপডেট: জুন ২৪, ২০২৪, ০৭:২৭ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

গত ৭-৮ বছরের মতো এ বছরও কোরবানির চামড়া বিক্রি হচ্ছে পানির দরে। যারা কোরবানি দেন তাদের সিংহভাগ চামড়াগুলো দান করেন এতিমখানা রয়েছে এমন মাদরাসায়। বিশেষত দেশের মাদরাসাগুলোর আয়ের প্রধান উৎস কোরবানির চামড়া।

কোরবানির চামড়ার অর্থ মানুষ গরিব-দুস্থদের মাঝে দান করে থাকেন। চামড়া পানির দরে বিক্রি হওয়ায় মাদরাসাগুলোর গরিব ও এতিমরা ন্যায্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। গরিবরা তাদের হক থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চামড়ার দরে ধস পড়ার পেছনে আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের কারসাজি দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের অনেকেই চামড়ার দাম কমে যাওয়ার জন্য বাজার কারসাজি, বিক্রির ভুল পদ্ধতি এবং মূল্য পরিশোধ না করার বিষয়গুলোকে দায়ী করেছেন। সরকার এ বছর প্রতি বর্গফুট চামড়া ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দর ঠিক করে দেয়। এই হিসেবে গরুর যে চামড়ার দাম এক হাজার থেকে ১১০০ টাকা হওয়ার কথা, সেই চামড়া স্থান ভেদে বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ৫০০ টাকায়।

ছাগল ও ভেড়ার চামড়া বিক্রি হয়েছে মাত্র ১০ টাকায়। ফলে রাজধানী ও দেশের অন্যান্য স্থানে অনেকেই ছাগল ও ভেড়ার চামড়া রাস্তা ও ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছেন। যে সব গরুর চামড়া আগে ১৫০০-১৮০০ টাকায় বিক্রি হতো তা এখন ২০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে সিন্ডিকেটের কারণে।

পত্র-পত্রিকার খবরে প্রকাশ দেশের বিভিন্ন জেলায় চামড়ার দামে ধস নামায় কোরবানিদাতারা ক্ষুব্ধ। কারণ চামড়ার এ টাকাটা গরিব দুস্থদের মধ্যে বিতরণ করা হতো। বগুড়া সহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় কোরবানির পশুর চামড়ার বাজারে এবারও ধস নেমেছে। গরুর চামড়া ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮০০ টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে। আর ছাগলও ভেড়ার চামড়া কেউ কিনছে না।

চামড়া ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, ট্যানারির মালিকদের কাছে তাদের পাওনা ৩২ কোটি টাকা বকেয়া থাকায় এবার তারা চামড়া ক্রয়ে বিনিয়োগ করেননি। বগুড়া শহরের থানা রোডে চামড়া কিনতে বসেছেন অনেকেই।  তাদের কাছে চামড়া বিক্রি করতে আসেন মৌসুমী ব্যবসায়ী ছাড়াও শহরের বিভিন্ন মহল্লার লোকজন। তারাও গরুর চামড়া ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮০০ টাকায় কিনছেন। ছাগল ও ভেড়ার চামড়া কিনছেন না। যারা ছাগল কিংবা ভেড়ার চামড়া নিয়ে আসছেন, তারা বাধ্য হয়ে রেখে চলে যাচ্ছেন।

মনে রাখা দরকার, এর আগের বছরগুলোতেও কোরবানির পশুর চামড়ার দাম বেধে দেয়া হলেও তা মানা হয়নি। কোরবানিদাতাদের কাছ থেকে নামমাত্র মূল্যে কিনে নেওয়া হয়েছে পশুর চামড়া। আমরা বলতে চাই, কোরবানির পশুর চামড়ার দামে বিপর্যয়ের ঘটনা কাম্য হতে পারে না। এতে শুধু গরিবদের হক থেকে তাদের বঞ্চিত করা হলো না-এ অল্প দামে চামড়া সংগ্রহ করে তা ভারতে পাচার হয়ে যাওয়ারও আশংকা রয়েছে।

ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও এ দেশের চামড়া সংগ্রহ করে অবৈধপথে। তারাও গোপনে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে থাকে। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের প্রতিটি জেলায় কোরবানির সময় দুই থেকে আড়াই লাখ পিস চামড়া আমদানি হয়। সে হিসেবে প্রতি বছর কোরবানির সময় ৩৫ থেকে ৪০ লাখ পিস গরুর চামড়া বিক্রি হয়। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে এসব চামড়ার অধিকাংশই সীমান্তের ওপারে পাচার হয়ে যায়।

সিন্ডিকেটের কারণেই চামড়ার বাজার এবং উৎপাদনকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ ন্যায্য দামে চামড়া সংগ্রহ করলে ব্যবসায়ী, ট্যানারি মালিক ও উৎপাদনকারীরা লাভবান হবেন। কিন্তু তা হচ্ছে না, প্রতি বছরই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে চলেছে। আমরা মনে করি, চামড়ার ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করুক-এটিই কাম্য।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS