ভিডিও

এই ধর্ষকদের রুখতে হবে

প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২৪, ১০:৪৪ রাত
আপডেট: জুন ৩০, ২০২৪, ১০:৪৪ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

সারা দেশে ধর্ষণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন, হত্যা ও শারীরিক নির্যাতনের যেন জোয়ার বইছে। কিছুতেই এর লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। মানুষ সভ্য হচ্ছে এটা যেমন ঠিক, একইভাবে এই সভ্যতার আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে মানুষের আদিম ও ঘৃণ্যরূপ। দু’দিন আগেই সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী চলন্ত ট্রেনে এক তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

এখন আবার দেখা গেল রাজধানীতে নববধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণ। পত্র-পত্রিকার খবরে প্রকাশ শুক্রবার মধ্যরাতে ওই নববধূ তার স্বামীকে নিয়ে খিলক্ষেতের এক বাসা থেকে ফিরছিলেন। পথে ৬-৭ ব্যক্তি তাদেরকে বনরূপা এলাকায় নিয়ে স্বামীকে আটকে রাখেন ও নববধূকে ধর্ষণ করেন। কৌশলে সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে ঘটনাটি পুলিশকে জানান ওই নববধূর স্বামী।

এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আবুল কাশেম সুমন নামে ওই নববধূর সাবেক প্রেমিক বলে জানা গেছে। পুলিশ জানায় গ্রেপ্তারকৃতরা দলবদ্ধ ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। ওই নারীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা হয়েছে।

এর আগেও আমরা সিলেটের এমসি কলেজে আরেক  দম্পতির কথা জানি। যার স্বামীকে বেঁধে রেখে তার সামনেই দুর্বৃত্তরা দল বেঁধে স্ত্রীকে ধর্ষণ করে। চলন্ত বাসে তো সংঘবদ্ধ ধর্ষণ হচ্ছেই। বিচারহীনতার সংস্কৃতি বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা বাড়িয়ে চলছে।

অনেক সময় রাজনৈতিক কারণে মূল আসামীদের আড়াল করে, অন্যদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে প্রকৃত আসামীদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে রাখে। মামলায় আইনের ফাঁক ফোকর গলিয়ে অপরাধীরা জেল থেকে বেরিয়ে আসে। কুমিল্লার তনু হত্যার তো কোনো তদন্তই করা গেল না। সব জায়গায় প্রভাবশালী আর ক্ষমতাশালীদের এত দৌরাত্ম্য যে- অপরাধীরা অপরাধ করেও খুবই সহজভাবে পার পেয়ে যাচ্ছে।

নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যকে দৃষ্টি কাড়া বলে অভিহিত করা হলেও প্রদীপের নিচে বিরাজ করছে ঘোরতর অন্ধকার। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে অপরাধীরা। শহর কিংবা গ্রামে সর্বত্রই পথ চলতে গিয়ে প্রতিনিয়তই বখাটেদের বেপরোয়া উৎপাতের শিকার হতে হচ্ছে নারীকে।

বাসগৃহ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে যাওয়া-আসার পথে দুর্বৃত্তদের নির্লজ্জ আচরণে তাদের হতে হচ্ছে বিব্রত আবার কখনও বা ধর্ষণ, কখনও ধর্ষণের পর হত্যা। দুর্বৃত্তের ছুড়ে দেওয়া এসিডে ঝলসে যাচ্ছে কারও দেহ। বর্বরতার ক্ষেত্রে এসব দুর্বৃত্ত কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইয়ামে জাহেলিয়াতকেও হার মানাতে চলেছে এ চিত্র যেন তারই প্রমাণ। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, হাটে-মাঠে-ঘাটে এত ‘ক্ষমতাশালী’র প্রয়োজন কেন চাঁদাবাজি, দখলবাজি, খুন, নারী নির্যাতন, মাদক ব্যবসা ছাড়া এদের আর কী করার আছে? এদের বেপরোয়া হওয়ার পেছনে কোন ক্ষমতা কাজ করে- এটা মানুষের জিজ্ঞাসা।

আইনের ফাঁকফোকর আর দীর্ঘ সূত্রতার কারণে হয় এসব অপরাধের বিচার হয় না অথবা অনেক সময় অপরাধী আইনের ফাঁকফোকর গলে বের হয়ে আবারও একই রকমের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। দেশব্যাপী বেকারত্ব, নৈতিক অবক্ষয়, মাদকাসক্তি এবং রাজনীতিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে- এসব দুর্বৃত্ত ভয়াবহ সব অপরাধ করে যাচ্ছে।

আমরা চাই, পরিকল্পিত ও বিন্যস্ত সমাজ। নীতিবোধ ও চারিত্রিক মূল্যবোধ সমাজ গঠনের প্রধান শক্তি- যা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। কোনোভাবেই আমাদের সমাজ যেন আলোর দিকে অগ্রসর হতে পারছে না। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও নারীরা নির্যাতন, হয়রানি ও ধর্ষণের শিকার হতে থাকবে -এটা-কোনোভাবেই চেয়ে চেয়ে দেখার বিষয় নয়। এ ধরনের অবক্ষয়কে প্রতিরোধ করতে হবে যে কোনো মূল্যে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS