ভিডিও

বসবাসযোগ্য শহরের তলানিতে ঢাকা

প্রকাশিত: জুলাই ০১, ২০২৪, ১১:০০ রাত
আপডেট: জুলাই ০১, ২০২৪, ১১:০০ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

দিনে দিনে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে ঢাকা। একটি দেশের রাজধানীর নিকৃষ্ট শহরের তলানিতে অবস্থান করাটা একেবারেই সম্মানের নয়। কিন্তু ঢাকা যে বসবাসের অনুপযোগী একটি শহর, তা মেনে না নিয়ে আমাদের উপায় নেই।

গত এক বছরে রাজধানী ঢাকায় বসবাসকারী মানুষের জীবনযাত্রার কোনো উন্নতি হয়নি। যে কারণে বাসযোগ্যের সূচকে আরও তলানিতে নেমেছে ঢাকা। যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের সহযোগী গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) দ্য গ্লোবাল লিভেবিলিটি ইনডেক্স-২০২৪ বলছে, বিশ্বের বাসযোগ্যতার দিক থেকে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে থাকা শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান একেবারে শেষের দিক থেকে ষষ্ঠ।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ‘দ্য গ্লোবাল লিভেবিলিটি ইনডেক্স ২০২৪’ অনুযায়ী, বিশ্বের ১৭৩টি শহরের মধ্যে রাজধানী ঢাকা বাসযোগ্য নগরীর বৈশ্বিক তালিকায় গত বছরের চেয়ে দুই ধাপ পিছিয়েছে। গত দুই বছর পর পর ১৬৬ তম স্থানে থাকা ঢাকা শহরের এবারের অবস্থান গিয়ে ঠেকেছে ১৬৮তে। ইআইইউ প্রতিবছরের মতো এবারও স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা, স্থিতিশীলতা, অবকাঠামো এবং পরিবেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ভিত্তিতে তালিকাটি তৈরি করেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত বছরগুলোতে ঢাকা শহরের উন্নয়নে ব্যয়বহুল অনেক প্রকল্প নিয়েছে সরকার। করোনা মহামারি সফলভাবে মোকাবিলার পর বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে কালাজ্বর নির্মূলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) স্বীকৃতি পেয়েছে। সড়ক যোগাযাগ ও অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটেছে। তারপরও ১৭৩টি দেশের মধ্যে গত বছরের চেয়ে দুই ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৮তম কেন, তা প্রশ্ন বটে।

সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, পরিবেশ, শিক্ষা ও জনগণের জন্য যানবাহনের সুযোগ-সুবিধাসহ অবকাঠামোগত বিশেষত্বের ওপর ভিত্তি করে শহরের এই মূল্যায়ন করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকা যে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে, তা প্রমাণর জন্য কোনো সমীক্ষার প্রয়োজন এখন নেই। এ জন্য রাজধানীতে বসবাসকারীদের উপলব্ধিই যথেষ্ট।

নাগরিক জীবনের ঝামেলা অনেক। শহুরে জীবনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, প্রকৃতি-বিবর্জিত জীবনযাপন, যা শরীর ও মনের জন্য খুবই ক্ষতিকর। যে প্রকৃতি শহরের জড়-জীবনের ক্লান্তি আর অবসাদ দূর করে মানুষকে দিতে পারে অনাবিল আনন্দ আর স্বস্তি-সেই প্রাকৃতিক পরিবেশের বড় অভাব এই রাজধানিতে। উপরন্তু পরিবেশ দূষণে রাজধানী এখন অতীতের যে কোনো রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শব্দদূষণ। ঢাকা শহরের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। পচনশীল ময়লা-আবর্জনার কারণে চারদিকে দুর্গন্ধ ও রোগ জীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে।

ঢাকা পৃথিবীর নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর শহর। ঢাকার পরিবেশ দূষণের কারণে মানুষ দিন দিন বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ও মারা যাচ্ছে। পরিবেশ দূষণের কারণে অধিক হারে মানুষ অ্যাজমা ও নানা রকম অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হচ্ছে। পরিবেশ দূষণের কারণে সংক্রামক রোগের হার বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। রাজধানী ঢাকায় বুক ভরে নি:শ্বাস নেওয়ার মতো স্থান একেবারেই নেই বললেই চলে। রাস্তায় দু:সহ যানজট।

সবুজায়নের পরিমাণ দ্রুত কমছে, বাড়ছে অক্সিজেনের ঘাটতি। জলাধারগুলো দ্রুত ভরাট হয়ে যাচ্ছে। নগরীর মধ্যে থাকা বহু খাল দখল ও দূষণে অস্তিত্ব হারিয়েছে। শিশু-কিশোরদের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য অত্যন্ত জরুরি শারীরিক কসরত ও খেলাধূলার সুযোগ নেই বললেই চলে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই শহরের বসবাসযোগ্যতার উন্নয়ন কিছু বিভিন্ন প্রয়াসের মাধ্যমে মোটেও সম্ভব নয়।

এর জন্য প্রয়োজন মহাপরিকল্পনা। পাশাপাশি অপরিকল্পিতভাবে নগরের যে বৃদ্ধি প্রতিনিয়ত হচ্ছে। তাকে রোধ করে পরিকল্পনার মধ্যে নিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি। শুধু ঢাকা নয়, দেশের অন্যান্য শহরকেও পরিকল্পনামাফিক গড়ে তুলতে হবে। সুষম উন্নয়ন করতে হবে গ্রামেও। শহরের জনসংখ্যার চাপ কমাতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS