ভিডিও

মানসিক অসুস্থতাই আত্মহত্যার কারণ

মোহাম্মদ ইয়াছিন

প্রকাশিত: জুলাই ০২, ২০২৪, ০৫:৫০ বিকাল
আপডেট: জুলাই ০২, ২০২৪, ০৫:৫০ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

মানুষের দৈনিন্দন শারীরিক সুস্থতার জন্য যেমন খাদ্যের প্রয়োজন তেমনি হতাশা, বিষন্নতা আর আত্মহত্যার মতো ভয়ংকর ব্যাধি থেকে বাঁচার জন্য মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতা প্রয়োজন। দীর্ঘস্থায়ী বিষন্নতা আর হতাশার পরবর্তী রূপ আত্মহত্যা। পরিবারের জোর করে চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত, বন্ধুবান্ধব, সমাজ বা রাষ্ট্র থেকে পাওয়া কোন আচরণ যা তার স্বার্থে আঘাত লাগে।

এমতাবস্থায় সে ওই বিষয়ে দীর্ঘদিন চিন্তার ফলে মস্তিষ্ক বিকল হয়ে যায়। সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। নিজেকে লোকচক্ষুর আড়ালে রাখতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। একাকিত্ব, নিঃসঙ্গতা, নীরবতা, কোলাহলহীন বদ্ধ পরিবেশ তার কাছে অমৃত মনে হয়। নিউরনগুলো মস্তিষ্কের পুরো দখল নিয়ে তাকে বুঝাতে সক্ষম হয় যে তার পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই

তার কাছ থেকে পৃথিবী কিছু আশা করে না আর পৃথিবীকে দেওয়ার মতো তার কাছেও কিছু নেই। সে সবার কাছে বোঝা স্বরূপ। সে ভাবে সে মারা গেলেই বন্ধুবান্ধব, পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও সমাজের সবাই শান্তি পাবে।

বাস্তবে আমরা অনুসরণ ও অনুকরণপ্রিয় জাতিতে পরিণত হয়েছি। পাশের বাড়ির আন্টির ছেলে পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। তাই আমার ছেলেকেও গোল্ডেন এ প্লাস পেতে হবে। অমুকের ছেলে বিচারপতি-ব্যারিস্টার, তমুকের ছেলে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে। অতএব আমার ছেলেকেও হতে হবে নয়তো সমাজে আমার মান-সম্মান ক্ষুন্ন হবে। সম্মান অক্ষুন্ন রাখার জন্য সন্তানের উপর এমন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেই।

কখনো ভেবে দেখি না এমন সিদ্ধান্ত সন্তানের উপর মানসিক চাপ ফেলছে কিনা? কখনো অনুধাবন করি না তাদের ভালো বা মন্দ লাগার কোন জায়গা আছে কিনা? পিতামাতার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে খেলাধুলা, ঘুম, শরীরচর্চা, বন্ধুবান্ধবের সাথে আড্ডা দেওয়া ইত্যাদি বাদ দিয়ে ঘরমুখো একগুঁয়ে হয়ে যায়।

নিজের পৃথিবীতে অন্যের দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় তার কাছে পৃথিবীটা সংকীর্ণ মনে হয়। অবশেষে কঠোর পরিশ্রমে আশাতীত ফল না পাওয়ায় সমাজের পাশাপাশি পিতামাতার কাছ থেকেও অনেক কথা শুনতে হয়। এই পরিস্থিতিতে সন্তান হতাশা আর বিষন্নতায় ভুগতে থাকে। কি করলে তার জন্য ভালো হবে তা চিন্তা করতে পারে না। কেউ ঘুমের ঔষধ খেয়ে কষ্ট হ্রাসের চেষ্টা করে কেউবা হাতে তুলে নেয়  সিগারেট, গাঁজা, হেরোইন, আর ফেনসিডিলের মতো জীবন ধ্বংসাত্মক মাদক।

পরিশেষে নিজেকে অন্যায় কাজে জড়িয়ে এক সময় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এসবের জন্য আপনি, আমি বা আমরা সবাই পরোক্ষভাবে দায়ী। কিছুদিন আগে বাংলাদেশের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর আট শিক্ষার্থী মানসিক স্বাস্থ্যের অসুস্থতার কারণেই আত্মহত্যার মতো ভয়ংকর পথ বেছে নিয়েছিল।

জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমাজের প্রত্যেক মানুষকে সৌহার্দ্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। ধনী-গরিব, উঁচু-নিচু সব জাতের মানুষ সামাজিকভাবে যথেষ্ট সম্মান নিয়ে একত্রে বসবাসের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। চায়ের আড্ডায় নিয়মিত উপস্থিত বন্ধু হঠাৎ অনিয়মিত তার কারণ জানতে হবে।

হাসিতে মত্ত থাকা বন্ধুর মন মরার কারণ আবিষ্কার করতে হবে। সন্তান ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া, ঘুম আর নিয়মিত শরীর চর্চা করছে কিনা তার খেয়াল রাখতে হবে। তাদের ভালো বা মন্দ লাগার উপর প্রাধান্য দিতে হবে। নিজের সিদ্ধান্ত জোর করে অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

সর্বোপরি যেসব কাজ মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতা রক্ষায় জরুরি তা করতে হবে আর যা করলে অবক্ষয় হয় তা পরিহার করতে হবে।


লেখক : শিক্ষার্থী,  ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

eyasinarafat455336@gmail.com

01601-813383



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS