ভিডিও

পরিকল্পিত নগর চাই, আলোকিত গ্রাম চাই

রবিঊল ইসলাম (রবীন)

প্রকাশিত: জুলাই ০২, ২০২৪, ০৭:২৬ বিকাল
আপডেট: জুলাই ০২, ২০২৪, ০৭:২৬ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

আশির দশকে আমি যখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, তখন রাজশাহী শহর পরিচ্ছন্ন নগর ছিল না। সরু সরু সড়ক ছিল, নোংরা পরিবেশ ছিল। নানা দিক থেকে পিছিয়ে ছিল সেই নগর। কালের পরিক্রমায় সেই রাজশাহী শহর এখন নানা দিক থেকে উন্নত। সুপ্রশস্ত সড়ক, নান্দনিক নানা রূপ এখন তার। পদ্মার তীর-কে আধুনিকীকরণ করা হয়ে হয়েছে।

শব্দদূষণ বা বায়ুদূষণ তেমন নেই। পুরস্কার পেয়েছে নানা দিক থেকে। রাজশাহীকে শিক্ষা নগরীও বলা হয়। রাজশাহী কলেজ দেশের সেরা কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সংস্কৃতি চর্চার দিকেও সেরা। আমি প্রায় সেখানে যাই এবং মুগ্ধ হই। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য হবে প্রতিটি শহর এবং গ্রামকে উন্নত করা। বসবাস যোগ্য তার লক্ষ্য হতে হবে।

আপনি যে শহরেই বসবাস করেন না কেন, সেখানে নির্মল বাতাস আছে? মাদকমুক্ত, যানজট মুক্ত কি সে শহর? সেখানে কি আপনার পরিবার নিয়ে অনায়াসে, স্বাচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারছেন ? গ্রামগুলি কি জসিম উদ্দীনের সেই পল্লী গ্রামে আছে। গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ আর গোয়াল ভরা গরু, আছে? গ্রামগুলিতে কি আগের মত মমতা ঘেরা পরিবেশ আছে?

গ্রামের বধূরা কি আগের মত পুকুর ঘাট থেকে কলস ভর্তি পানি নিয়ে আসে ঘোমটা মুখে? সন্ধ্যা হলে বাড়ি থেকে উচ্চ স্বরে শিক্ষার্থীদের পড়ার আওয়াজ পাওয়া যায়? মকতব,পাঠাগার, পুকুর বাধা ঘাট আছে সেখানে ? বৃদ্ধ, অবসরে যাওয়া ব্যক্তিদের কোথাও বিনোদন বা সংবাদপত্র পড়ার সুযোগ আছে? সব তরুণরা কি ভাগ্য পরিবর্তন করতে বিদেশে চলে যাচ্ছে?

কৃষক কি তার ফসলের ন্যায্য মূল্যে পাচ্ছে? আমি রেলওয়ে জংসন শহর সান্তাহারে বসবাস করি। একবার রাষ্ট্রপতি এরশাদ আমাদের শহরে এলেন। তিনি সমাবেশে ভাষণ দিচ্ছেন। কেউ কোন লিখিত কোন দাবি দেয় নি। সেই সমাবেশে বিভিন্ন দাবির ব্যানার নিয়ে কিছু ভক্তরা দাঁড়িয়ে আছে। এরশাদ একে একে সান্তাহারকে পৌরসভা আরো দুটি স্কুলকে সরকারিকরণ হিসেকে ঘোষণা দিলেন।

সেই থেকে আমরা পৌর শহরের বাসিন্দা হয়ে গেলাম। আমার সাথে একমত হবেন যে, যে সব শহর জংসন স্টেশন আছে, সে শহরের বিড়ম্বনার শেষ নাই। যদি সে শহরে ভাল শহর পরিকল্পনাবিদ না থাকে। প্রতিটি পৌর শহরে সেই পৌরসভায় একজন নগর বিশেষজ্ঞ পদ থাকতে হবে। তা না হলে শহর উন্নত হবে না।

আপনার মনের মধ্যে যদি ভোটের হিসেব সব সময় কাজ করে, তাহলে আপনি উন্নত নগর তৈরি করতে পারবেন না। প্রতিটি পৌরসভায় বর্জ্য ফেলার জন্য ড্যাম্পিং স্টেশন থাকতে হবে, যেটি হবে শহরের বাইরে। শহরের ফুটপাত হকারমুক্ত করতে হবে।

সড়কগুলিতে অবশ্যই ডিভাইডার থাকতে হবে। শহরে যথেষ্ট পরিমাণ বৃক্ষরোপণ করতে হবে। হাসপাতাল, পাঠাগার, বাস স্ট্যান্ড, প্রশস্ত সড়ক অবশ্যই থাকতে হবে। গ্রাম বা শহর বলুন সেখানকার উন্নয়ন থমকে যাবে যদি সেখনে সড়ক উন্নত না হয়।

রেলওয়ে জংসন শহরে প্রধান সমস্যা যে, রেললাইনগুলি শহরের মধ্য দিয়ে যাওয়াতে সেখানে রেলগেট থাকে। আর দিনের মধ্যে সে রেলগেট ৩০/৪০ বার বন্ধ হয়ে যায়। তখন সেই শহরটাতে প্রচন্ড যানযট সৃষ্টি হয়। তাই সরকারের উচিত হবে, যেখানে এই সমস্যা আছে, সেখানে একটি করে ফুট ওভার ব্রিজ করে দিতে হবে। যেটি আমার শহরে হয়। রেলগেট বন্ধ হয়ে যাবার সাথে সাথে এক ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হয়।

আজ প্রায় ৩০/৪০ বছর ধরে একটি ফুট ওভার ব্রিজের জন্য আমরা আন্দোলন করছি। পাচ্ছি না। আমাদের শহরে একটি ২০ শয্যা হাসপাতাল আজ প্রায় ২০ বছর ধরে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হচ্ছে না। বগুড়া জেলায় ৩টি স্থানে এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। অথচ বেসরকারি হাসপাতাল হচ্ছে প্রায় প্রতিটি শহরে ব্যাঙের ছাতার মত। দরকার আছে, কিন্তু কয়টা মানসম্মত? নিয়ম মেনে চলে কয়টা?

একটি পৌর শহরে হাসাপাতাল, ডাকঘর, রেলওয়ে হাসপাতাল, পৌরসভা, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা উন্নত হতে হবে। লক্ষ্য করুন তা নেই। ডাকঘর যেন নিজেই অসুস্থ। অজনপ্রিয় একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়ে পড়েছে। আমি অনেক স্কুল কলেজ-কে চিনি, যেখানে বৃষ্টি হলেই ফুটো টিন দিয়ে সেখানে পানি পড়ে। অবশ্য কোন কোন স্থানে স্কুল- কলেজের অবকাঠামো উন্নত হয়েছে।

আমার সাথে একমত হবেন যে পল্লী কবি জসিম উদ্দীনের কাক্সিক্ষত গ্রাম আর নেই। সেখানে মাদক ঢুকে গেছে। পরস্পরের সাথে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। তালাকপ্রাপ্ত নারীর সংখ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রামের সড়কগুলিও ভাল না। বিচার ব্যবস্থা অনেকটা ভেঙে পড়েছে। দলাদলি বেড়েছে।

যদিও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। আজকাল গ্রামের প্রায় বাড়ি পাকা করা। মাটির বাড়ি নেই বললেই চলে। আয় বেড়েছে। একটি অটো চার্জার চালিয়ে অনেকে দিনে ৭০০/৮০০ টাকা আয় করছে। আবার বেকার ছেলেদের বিদেশ যাওয়ার হিড়িক পড়েছে। একটি ঢাকা শহর, একটি রাজশাহী কলেজ, উন্নত রাজশাহী নগর- সার্বিকভাবে কোন সমাধান না।

তৃণমূল মানুষের সমস্যা দূর করতে হবে। তার জন্য যা যা করার তাই করতে হবে। ভারতের কণ্ঠ শিল্পী নচিকেতার একটি গান আছে, ‘শতক আছে, শতক যায়, সময় স্রোতের ডানায়, আমার জীবন একি অধ্যায়, দিন গোনা আশায় আশায়।’ আশাই আমাদের সম্বল। এ ছাড়া কি বা করতে পারি?


লেখক : সহকারী অধ্যাপক-কলামিষ্ট

01725-045105



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS