ভিডিও

বগুড়ার উন্নয়নে স্থবিরতা কাটবে কবে

রাহমান ওয়াহিদ

প্রকাশিত: জুলাই ০২, ২০২৪, ০৭:৩৬ বিকাল
আপডেট: জুলাই ০২, ২০২৪, ০৭:৩৬ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শাসক দল আওয়ামী লীগ ও তার জোটের প্রার্থীরা সব ক’টি আসনে জয় পাওয়ার পর প্রায় ছয় মাস পার হতে যাচ্ছে। বগুড়ায় শাসক দলের এই অভূতপূর্ব জয়ে জেলার উন্নয়নে গতি সঞ্চারিত হওয়ার যে প্রত্যাশা করেছিল উপেক্ষিত বগুড়াবাসী, তা ফিকে হতে শুরু করেছে।

দেশের সব এলাকায় সুষম উন্নয়নের নীতিতে বিশ্বাসী সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে কোন প্রশ্ন না থাকলেও সবকিছুতে স্থবিরতাই লক্ষণীয় বেশি। সেগুলো মোটা দাগে এভাবে বলা যায়-০১. ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজটিকে ৯ বছর ধরে উপেক্ষা করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

(করতোয়া, ১৩ মার্চ) ৩০ বছর আগে বিসিকের সব প্লট বরাদ্দ শেষ হয়ে যাবার পরেও শিল্প নগরী হিসেবে পরিচিত বগুড়ায় দ্বিতীয় বিসিক এলাকা ও প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কোন উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। ফলে, বগুড়ায় বিচ্ছিন্নভাবে শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে। এতে কৃুষিজমি নষ্ট হচ্ছে। এ কারণে এক স্থানে যাতে সব শিল্প কারখানা গড়ে ওঠে সেজন্য বিসিকের প্রস্তাবিত শিল্প পার্ক ও প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত অর্থনৈতিক অঞ্চল দ্রুত গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি।

০২. ২০০১ সালের বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইনটি ২১টি বছর ধরে অকার্যকর থাকার পর ২০২৩ সালে তার গেজেট প্রকাশ সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থান নির্বাচন, প্রকল্প পরিচালক বা উপাচার্য নিয়োগসহ কোন কার্যক্রম আজো দৃশ্যমান না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়ছে বগুড়া ও আশেপাশের শিক্ষার্থী ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। ০৩.মানুষের চলাচলেও কি স্বস্তি আছে? শহরের সংকীর্ণ রাস্তাগুলোতে প্রতিদিন বাস, স্কুলবাস, প্রাইভেট কারসহ হাজার হাজার  ইজিবাইক ও অটো রিকশা ঢুকে পড়ে সৃষ্টি করছে অসহনীয় যানজট।

এর উপর প্রতিদিন ১৮-২০টি ট্রেন চলাচল করায় ট্রেন সিগনালের বার ফেললেই অনেকটা সময় ধরে স্তব্ধ হয়ে থাকে যান চলাচল। এ জন্য প্রয়োজন যে রেলওভারব্রিজ ও করতোয়ার দু’পাশে রাস্তা নির্মাণ- তা নিয়েও কোন আশাব্যঞ্জক খবর চোখে পড়ে না। ০৪. গত বছরে বগুড়ায় বেকারত্ব নিরসনের লক্ষ্যে আইটি সেন্টার গড়ে তোলার যে ঘোষণাটি এসেছিল সেটি বাস্তবায়নের কাজও প্রশাসনিক প্যাঁচকলে আটকে গেছে।

পত্র-পত্রিকার (করতোয়া, ১৯ মার্চ) খবরে প্রকাশ-বগুড়ায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার ও জয় ডি-সেট সেন্টার স্থাপনের জন্য বগুড়া সদরের শিববাটি মৌজায় ১১৭ দাগে এক একর জায়গার উপর শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইউকিউবেশন সেন্টার এবং একই দাগে ২২ শতক জায়গার উপর জয় ডি-সেট সেন্টার নির্মাণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হলেও এক্ষেত্রেও কোন অগ্রগতি নেই।

এ দুটি প্রকল্পের কাজ আজো দুঃখজনকভাবে চিঠি চালাচালির মধ্যেই সীমিত হয়ে রয়েছে। প্রকল্পদুটি বাস্তবায়িত হলে বগুড়া জেলা ডিজিটাল প্রযুক্তিতে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরিতে অবদান রাখতে পারবে। ০৫.সব শর্ত পূরণ করা সত্ত্বেও দুশো বছরের পুরোনো বগুড়া পৌরসভাকে আজো সিটি কর্পোরেশনে পরিণত না করার প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতা বগুড়াবাসীর হতাশাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

অথচ বগুড়াকে সিটি কর্পোশেন করা হলে আইন অনুযায়ী বেশি বরাদ্দ পাওয়ার সুবাদে বিভিন্ন উন্নয়ন ও সংস্কারমূলক মূলক কাজ হাতে নিতে পারলে নাগরিক সুবিধা বহুগুণে বেড়ে যাবে, চেহারাই পাল্টে যাবে বগুড়ার। ০৬. বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট অনুযায়ী বগুড়া বিমান বন্দরের আরো কিছু জমি অধিগ্রহণ করে রানওয়ের দীর্ঘত্ব বাড়িয়ে বন্দরটিকে জনসাধারণ ও পণ্য পরিবহনের উপযোগী করে তোলার কাজটিও কোথায় কোন; গ্যাঁড়াকলে আটকে আছে, কে তা জানে? ০৭. কাজের মধ্যে চলমান দেখা গিয়েছিল যে বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণের কার্যক্রম, সেটির কাজও চুক্তি অনুযায়ী প্রাপ্য বিদেশী ঋণ না আসায় থমকে আছে বলে সাম্প্রতিক এক খবরে প্রকাশ।

দৃশ্যমান কেবল ফতেহ আলী ব্রীজ পুনঃনির্মাণ আর এক যুগেরও বেশি অপেক্ষা করার পর যৎসামান্য বরাদ্দের ভিত্তিতে অতি সম্প্রতি দখল-দূষণে পরিণত করতোয়া নদীর আংশিক পুনঃখনন ও দখল-দূষণ থেকে মুক্ত করার কাজ। কিন্তু স্থবির হয়ে যাওয়া বা অদৃশ্য গ্যাঁড়াকলে আটকে যাওয়া পূর্বে উল্লিখিত জনপ্রত্যাশার কাজগুলো কবে শুরু হবে,কারা নেবে সে উদ্যোগ- সে প্রশ্নের উত্তর তো মিলছে না।

তবে উত্তর হিসেবে বগুড়া উপশহরের একজন প্রকৌশলী আহম্মেদ আলী (১৩ মার্চের করতোয়া) বলেছেন- ‘বগুড়ার সব আসনেই আওয়ামী লীগ জোটের এমপি হওয়ায় বগুড়ার উন্নয়ন স্থবির হওয়ার তো কথা নয়। এমপিদের সংসদের ভেতরে বাইরে কথা বলতে হবে। সংশ্লিষ্ট সচিবদের তাগিদ দিতে হবে। তাঁরা জোর না দিলে কাজ হবে না।’ কথাটি অবশ্যই গুরুত্বের দাবি রাখে।

নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশনে বগুড়ার এসব কাক্সিক্ষত উন্নয়ন নিয়ে কোন কথা বলা হয়নি বলে একটি পত্রিকায় (২৪ জুন, ‘আজকের দর্পণ’) প্রকাশিত খবরে দাবি করা হলেও বগুড়াবাসী বিশ্বাস করতে চান যে-সম্মানিত সাংসদগণ বগুড়ার কাক্সিক্ষত উন্নয়নে স্থবিরতা কাটাতে সংসদের পরবর্তী অধিবেশনগুলোতে জোরালো বক্তব্য রাখবেন এবং প্রশাসনের যেখানে যতটা তাগিদ দেয়া দরকার সেখানে ততটাই সক্রিয় ভূমিকা রাখবেন অবশ্যই।


লেখকঃ কবি, কথাশিল্পী ও কলামিষ্ট

 



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS