ভিডিও

যৌতুক একটি সামাজিক ব্যাধি

মো: রুহুল আমিন

প্রকাশিত: জুলাই ০৯, ২০২৪, ০৭:৩৭ বিকাল
আপডেট: জুলাই ০৯, ২০২৪, ০৭:৩৭ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

যৌতুক একটি সামাজিক ব্যাধি, দিন দিন এটি সমাজে মহামারী আকারে রূপ নিয়েছে। আধুনিক সমাজে  সরাসরি যৌতুক উচ্চারণ না করে গিফট বা উপহার নাম ধারন করেছে। সমাজের শিরায় শিরায় এটি ছড়িয়ে পড়ছে। এক সময় এটি শুধু সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণির লোকের মধ্যে প্রচলিত থাকলেও এটি বর্তমানে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত সকল শ্রেণীর পরিবারের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।

যৌতুকের জন্য প্রতিদিন নির্যাতিত হচ্ছে হাজারো নারী- কাউকে আবার দিতে হচ্ছে প্রাণ। যৌতুকের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অনেক নারীর সোনার সংসার ভেঙে যাচ্ছে। নির্যাতিত হয়ে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। অনেক নারী সন্তান, সংসার ও পরিবারের মায়া ত্যাগ করে বেছে নিয়েছে আত্মহত্যার মতো কঠিন পথ। কন্যা দায়গ্রস্ত পিতা-মাতা তাদের কন্যার বিয়ের বিষয়ে যৌতুক দেওয়া নিয়ে চিন্তায় থাকেন।

তারা নিজের মেয়েকে সুখী করার জন্য শত কষ্ট সহ্য করে যোগাড় করছেন যৌতুকের টাকা। অনেক পিতা-মাতাকে যৌতুকের জন্য ঋণ নিয়ে, নিজের জমি জমা, পৈতৃক সম্পত্তি এমনকি নিজের শেষ আশ্রয়স্থলও জলাঞ্জলি দিতে হয়। সমাজে প্রচলিত হওয়ায় অনেকেই যৌতুককে নিজেদের অধিকার হিসাবে ভাবে এবং নিজেকে অপরাধী মনে করে না। কত শত নারী নিরবে নিভৃতে দিনের পর দিন অত্যাচার সহ্য করে যাচ্ছে তার হিসাব নেই। তাই যৌতুকের পরিসংখ্যান হিসাব করা কঠিন।

পেপার পত্রিকায় খুললেই যৌতুকের জন্য নির্যাতন নিয়ে প্রতিবেদন এখন নিত্য দিনের ঘটনা। শুধু যে অশিক্ষিতদের মধ্যে যৌতুক আদান প্রদান হয় তা নায়। শিক্ষিত ব্যাক্তিরাও এই জঘন্য কাজ করে আসছেন। কয়েকদিন আগে পত্রিকায় ( কালের কণ্ঠ) দেশের সুনামধন্য একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বিভাগীয় সভাপতির বিরুদ্ধে তার স্ত্রী অভিযোগ করেন যে যৌতুকের টাকার জন্য তার স্বামী প্রত্যেক দিন তাকে নির্যাতন করেন।

বাংলাদেশের  "যৌতুক নিরোধ আইন ২০১৮" এর মতে, বিবাহের সময় বা পরে কোন পক্ষ যদি বিবাহ টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে কোন অর্থ-সামগ্রী বা অন্য কোন সম্পক দাবি করেন সেটি যৌতুক হিসাবে বিবেচিত হবে তবে মুসলিম আইনের(শরিয়াহ) এর মহরানা এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়। কেউ যদি যৌতুক দাবি করেন বা যৌতুক প্রদান বা গ্রহনের চুক্তি, সহায়তা করেন  তাহলে অপরাধী হিসাবে বিবেচিত হবেন এবং তিনি অনাধিক ৫ বৎসর বা অন্যূন ১ বৎসর বা অনাধিক ৫০,০০০ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হবে।

শুধু আর্থিক লেনদেন নয়  সমাজে বিভিন্ন ভাবে যৌতুকের লেনদেন হয়ে থাকে। যেমন: ঘরবাড়ী, আসবাবপত্র, ফ্লাট, মোটরসাইকেল, ব্যবসার খরচ, বিদেশে পাঠানোর  খরচ ইত্যাদি। বিয়েতে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা পর্যন্ত উপহার হিসাবে দিতে পারবে তবে সেটি বিয়ের সাথে সম্পর্কিত নয় এমন কোন ব্যাক্তি দিতে পারবে। বিয়ের শর্ত হিসাবে যদি কোন ব্যাক্তি ৫০০ টাকা বা তার অধিক টাকা বা সমমূল্যের কোন উপহার দেন সেটও যৌতুক হিসাবে বিবেচিত হবে।

এছাড়াও আমাদের দেশে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন এলাকায় উপহার পাঠানো সংস্কৃতি তৈরি হয়ছে। যেমন: সাজন, ঈদে গরু, বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন উপলক্ষকে কেন্দ্র করে মেয়ের বাসায় উপহার পাঠাতে হয়। উক্ত অঞ্চলের সংস্কৃতি বলে সবাই উপহার পাঠায়। উপহার না পাঠাতে পারলে মেয়েকে তার শশুর বাড়িতে বিভিন্ন কথাবার্তা শুনতে হয়। কিন্তু তা অনেক পরিবারের জন্য কষ্ট সাধ্য হয়ে দাড়িয়েছে। অনেক পিতা নিজের মেয়ের দিকে তাকিয়ে ধারদেনা করে হলেও এসব উপহার সামগ্রী পাঠাতে বাধ্য হয়।

এসকল সংস্কৃতি সমাজের ক্যানসারের ন্যায় ব্যাধীতে রূপান্তরিত হয়েছে। এ সকল সংস্কৃতি সমাজ থেকে নির্মূল করা জরুরি হয়ে পড়েছে। আল্লাহ তায়লা মানব জাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখারা জন্য নারী পুরুষের মধ্যে বিবাহকে হালাল করেছেন। কিন্তু এই হালাল সম্পর্কে তৈরির প্রথম আলোচনাতেই আমরা দেনা পাওনা নিয়ে দর কষাকষি করি।

বিয়ের তারিখ স্থান নির্ধারণের পূর্বেই দেনা পাওনা হিসাব কষিয়ে নেই। বর কনে পছন্দ বিষয়টি যেন গৌন, মূথ্য বিষয় হচ্ছে দেনা-পাওনা। দেনা-পাওনা মন মতো হলে বিয়ে হয় না হলে ভেঙে যায়। ইসলাম বিয়েকে হালাল করলেও যৌতুক কে হারাম করেছেন। যৌতুক দ্বারা পরিবার, সমাজে ও রাষ্ট্র বিভিন্ন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটি রাষ্ট্রীয়, সামাজিক এবং পারিবারিক ভাবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

যৌতুকের বিরুদ্ধে আইনের সহায়তা নেওয়ার পাশাপাশি যৌতুক বিরোধী বিভিন্ন আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সমাজের মধ্যে যৌতুকের বিভিন্ন কুফল তুলে ধরতে হবে। যৌতুক প্রদান এবং গ্রহণকারী উভয় কে সমাজ চোখে অপরাধী হিসাবে চিহ্নিত করতে হবে।

সামাজিক ভাবে শাস্তির ব্যাবস্থা রাখতে হবে। মুসলিম সমাজের আলেমদের সরকারি আইনের পাশাপাশি মুসলিম আইন সম্পর্কে সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। ইসলাম ধর্মে জুলুমের স্থান নেই সেটি মানুষকে বুঝাতে হবে। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য এগিয়ে আসতে হবে। সরকারি ভাবে যৌতুক ও নারী নির্যাতন আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

sohanruhulamin@gmail.com

01792-742460



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS