ভিডিও

সীমান্ত দিয়ে সোনা পাচার

প্রকাশিত: জুলাই ১০, ২০২৪, ০৫:০৮ বিকাল
আপডেট: জুলাই ১০, ২০২৪, ০৫:০৮ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

সোনা চোরাচালানের ট্রানজিট পয়েন্ট এখন বাংলাদেশ। দেশি বিদেশি অনেক প্রভাবশালী চোরাচালানী চক্র বিমান বন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার কতিপয় কর্মকর্তার যোগ সাজশে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। মাঝে মধ্যে সোনার চালান ও বহনকারী আটক হলেও চোরাকারবারী গডফাদাররা রাজনৈতিক প্রশ্রয়ের কারণে থেকে যাচ্ছে পর্দার আড়ালে।

ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত এলাকার ভারতীয় অংশে অভিযান চালিয়ে ৩ কোটি ২৭ লাখ রুপির বেশি মূল্যের ৪.৭ কেজি সোনার বার সহ এক চোরাকারবারিকে আটক করেছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ। পত্র-পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, চোরাচালানের তথ্য পেয়ে গত শুক্রবার পশ্চিম বঙ্গের নদীয়া জেলার বিএসএফ’র সদস্যরা সীমান্ত চৌকি পুট্টিখালি এলাকা থেকে বিভিন্ন আকৃতির ২২টি সোনার বার জব্দ করে।

একই সঙ্গে তারা মাথুর দাস নামে এক চোরাচালানিকে আটক করে। তিনি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার বাসিন্দা, জিজ্ঞাসাবাদে ওই ব্যক্তি জানান, সোনার চালান নেওয়ার পরে সেটি তিনি বনগাঁয় পৌছে দিতে যাচ্ছিলেন। এ কাজের জন্য তিনি ভালো পারিশ্রমিক পেতেন। ধৃত ব্যক্তি এবং জব্দ করা সোনা পরবর্তী আইনি ব্যবস্থার জন্য রেভিনিউ ডিরেক্টরেট এর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবারও নদীয়া জেলায় বিএসএফ অভিযান চালিয়ে ৬ কোটি ৮৬ লাখ রুপি মূল্যের ৯ কেজি ৬০০ গ্রাম সোনা উদ্ধার করেছিল। বাংলাদেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর হয়ে আসে এসব অবৈধ সোনা। এরপর দেশের স্থল সীমান্ত পথ দিয়ে এগুলি ভারতে প্রবেশ করে। কখনও কখনও এসব চালান থেকে কিছু অংশ বিমান বন্দর থেকে আটক করা হয় আবার কখনও এগুলোর অংশ বিশেষ দেশের স্থল সীমান্ত পথে বিজিবি বা বিএসএফ আটক করে।

পত্র-পত্রিকার খবরের শিরোনাম দেখলে আঁৎকে উঠতে হয়। যেমন- ‘১০ কোটি টাকার সোনার বার উদ্ধার’, ‘৬৮টি স্বর্ণের বার উদ্ধার’, ‘৬ কেজি ¯¦র্ণ জব্দ’, ‘৭ কেজি স্বর্ণের বার উদ্ধার’ ‘১০ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার’ ‘সোনার খনি শাহজালাল’ ‘সোনা পাচার চক্র’- এভাবে মাঝে মাঝে সোনা আটক হলেও আরও কত যে চোরাচালানির সোনা বিমান বন্দর পেরিয়ে সীমান্তের ওপারে চলে যাচ্ছে-সেটা দেশের স্থল সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে সোনা আটকের খবরে আমরা আন্দাজ করতে পারি।

সোনার বেশ কয়েকটি চালান ধরা পড়ার পরও কেন অব্যাহতভাবে এ কাজে রুটটি ব্যবহার করা হচ্ছে তার কারণ নির্ণয় করতেই হবে। কিন্তু কারা এ কারবারের হোতা তাদের চিহ্নিত করার ক্ষেত্রেও কর্মকর্তাদের দ্বিধান্বিত দেখা যাচ্ছে। সোনা চোরাচালানের সঙ্গে রাজনৈতিক পরিচয়ে সংঘবদ্ধ মাফিয়া চক্র কাজ করছে বলে যে আশঙ্কা রয়েছে এটা কি তারই ফল? এজন্য কি নি:শঙ্ক চিত্তে চোরাচালানিদের পাকড়াও করার ক্ষেত্রে পুরোপুরি সফলতা দেখাতে পারছে না।

অপরাধীদের চিহ্নিত করতে কমিটির পর কমিটি গঠিত হচ্ছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এ ধরনের ঘটনায় বিমানের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-এমনকি নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিতদের মধ্যে একটি অসাধু চক্রও জড়িত থাকতে পারেন। কিন্তু কারা এর হোতা তা কিন্তু আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। এতে কিছু অপরাধীর শাস্তি হলেও শাহজালাল বিমান বন্দরে সোনা সহ বিভিন্ন পণ্যের চোরাচালান বন্ধ করা যাবে না।

ধারণা করা হচ্ছে, বর্তমান সময়ে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সোনা আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপিত থাকায় এই বিমান বন্দরটি চোরাচালানের ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি অন্যতম কারণ হলেও বাংলাদেশও অনেক চালানের ঠিকানা হতে পারে, সেটি ভুললে চলবে না। কারণ, আমাদের এখানেও সোনার বেশ চাহিদা রয়েছে।

বাংলাদেশে চোরাচালানের মাধ্যমে সোনা আনতে গিয়ে ক্লিনার থেকে বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারি, এমনকি নিরাপত্তা কর্মিদের কেউ কেউ গ্রেফতার হওয়ার নজির রয়েছে। অথচ প্রধান আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরকে চোরাচালান মুক্ত করা দেশের মর্যাদার সঙ্গেও যুক্ত।

পাশাপাশি সোনা চোরাচালান বন্ধে দেশের সোনা ব্যবসার দিকে তীক্ষ্ম নজর রাখা দরকার। কেননা আপন জুয়েলার্স থেকে ১৫ মণ সোনা উদ্ধারের ঘটনা- এই ব্যবসার ওপর তীক্ষ্ম নজর রাখার তাগিদ সৃষ্টি করেছে। চোরাকারবারিদের প্রতি কঠোর হওয়ার বিষয়টিও প্রাসঙ্গিকতার দাবিদার।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS