ভিডিও

ভিউ বাণিজ্যের আড়ালে কি হারিয়ে যাচ্ছে মূল ধারার সাংবাদিকতা? (ভিডিওসহ)

স্মৃতি সঞ্চায়িতা অর্থি

প্রকাশিত: এপ্রিল ৩০, ২০২৪, ০৬:৪৩ বিকাল
আপডেট: এপ্রিল ৩০, ২০২৪, ১১:৪৭ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

সাংবাদিকতা! যাকে বলা হয় সমাজের দর্পণ। তবে ভিউ বাণিজ্যের আড়ালে কি আজ সেই সাংবাদিকতাই প্রশ্নবিদ্ধ! নাকি লাইক, কমেন্ট, শেয়ারের ভিড়ে ক্রমেই ধূলো পরতে শুরু করেছে সেই চিরচেনা দর্পণে!

এখন কিছু ইউটিউব চ্যানেল, অনলাইন সাংবাদিক বা ইউটিউব সাংবাদিক কন্টেন্টের নামে ভাইরাল লোক জনের পেছনে ছুটছে। যা মূল ধারার সাংবাদিকতাকে করছে প্রশ্নবিদ্ধ। হোক, টিকটকার বা নিম্নমানের মিউজিক ভিডিওর নায়ক। প্রয়োজন ভিউ। আবার সেই ভিডিওর টাইটেলও হয় চটকদার। 

ডিবিসি নিউজ এর স্টাফ রিপোর্টার রাকিব জুয়েল দৈনিক করতোয়াকে জানান, ' কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, ইউটিউবারদের থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের মাঝে আকাশ পাতাল তফাৎ থাকলেও আমরা তা এক করে ফেলেছি।'

 

 

 

মুখ খললেন অমুক নায়িকা, এ কি করলেন তমুক নায়ক, কতো টাকার ঘড়ি পড়লেন তমুক টিটকার। ভিউ কামানোর জন্য এ ধরনের চটকদার শিরোনাম দিয়ে পাঠকের সামনে কন্টেন্ট উপস্থাপন করছে কিছু তথাকথিত গণমাধ্যম। এসব ভিউ ব্যবসায়ীর কারণে গণমাধ্যম পাঠকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে।

সস্তা জনপ্রিয়তা, লাখ লাখ ভিউজ পাওয়ার জন্য যখন নিম্নমানের, অর্ধসত্য, রুচিহীন, দৃষ্টিকটু ও আপত্তিকর কন্টেন্ট তৈরি করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, তখন সেটা ভয়াবহ ফলাফল বয়ে আনে সমাজে। 

এ বিষয়ে দৈনিক প্রথম আলোর স্টাফ রিপোর্টার আনোয়ার পারভেজ দৈনিক করতোয়াকে জানান, 'পূর্বে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জনপ্রিয়তা থাকলেও এখন পাঠক কন্টেন্ট নির্ভর হয়ে পরছে' এবং এটিএন নিউজের উত্তরাঞ্চলীয় ব্যুরো প্রধান , চপল সাহা দৈনিক করতোয়াকে জানান,বর্তমান সাংবাদিকতায় দায়বদ্ধতা নেই।'

তথাকথিত কিছু গণমাধ্যম এখন ক্লিকবেইট সাংবাদিকতায় বিশ্বাসী। অনেক নাম না জানা পত্রিকা ও অনলাইন প্ল্যাটফরম চটকদার শিরোনাম ব্যবহার করে তা পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করে, যাতে পাঠক বা দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণ করা যায়। তাদের এই কৌশলকে বলা হয় ক্লিকবেইট জার্নালিজম বা ক্লিক জার্নালিজম বা ক্লিকবেইট সাংবাদিকতা বা ক্লিক সাংবাদিকতা। এটি বিশ্ব জুড়েই নেতিবাচকভাবে দেখা হয়। আর এই ধারাতেই হারাতে বসেছে মূল ধারার সাংবাদিকতা। 

এ বিষয়ে আরও কথা হয় দৈনিক করতোয়ার বার্তা সম্পাদক প্রদীপ সংকর ভট্টাচর্যের সাথে। তিনি জানান, 'অপসাংবাদিকতার দৈরাত্নে প্রকৃত সাংবাতিকতা নাজুক অবস্থানে রয়েছে।'

আর তার থেকেও বড় কথা এখন অনেকটাই ভিউভিত্তিক হয়ে উঠছে সাংবাদিকতা। যে সংবাদের ভিউ যতো বেশি, তার গুরুত্ব ততো বেশি। এখানে মেধার দরকার নেই, শ্রমের দরকার নেই, চাই শুধু ভিউ।  আবার এই রুচির দুর্ভিক্ষে চটকদার ও নেগেটিভ খবরেই ভিউ বেশি লক্ষ করা যায়। তাই হয়তো আজ সাংবাদিকতাও ছুটছে সেদিকে।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও সংবাদপত্রের মৃত্যুর মূল কারণ হিসেবে ইন্টারনেটের রমরমা অবস্থাকেই দায়ী করেছেন। ওবামার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল সিনেমার জন্মের পরও তো সমানভাবেই বইয়ের আকর্ষণ ছিল। মানুষ তো বই পড়তে ভুলে যায়নি। তবে কেন ইন্টারনেট কেড়ে নেবে সংবাদপত্রের গুরুত্ব? ওবামা অল্প হেসে জবাব দিয়েছিলেন, 'কারণটা সহজ, ব্যবসা।' তিনি বলেছিলেন, 'দেখুন, মধ্যবিত্তের সুখের দিন গিয়েছে। রোদে পিঠ দিয়ে বসে খবরের কাগজ পড়াটা এখন বিলাসিতা।'

আসলে কিছু তথাকথিত গণমাধ্যমের পাশপাশি যখন প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যমগুলোও ভাইরালের পেছনে ছোটে তখন প্রশ্ন দাঁড়ায় আসলে কোন দিকে ছুটছে সাংবাদিকতা।

যমুনা টেলিভিশনের বগুড়া ব্যুরো প্রধান মেহেরুল হাসান সুজন দৈনিক করতোয়াকে জানান, 'এখন ভাইরালিজমের পেছনে ছুটছে সাংবাদিকতা। এখন ঘটনা অনুসন্ধানের থেকে ঘটনাস্থলের বিষয় নিয়ে ভিউয়ের ওপর গুরুত্ব বেশি।'

তবে কি সাংবাদিকতার সেই স্বর্ণযুগ এখন বিলুপ্তির পথে? 

 



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS