ভিডিও

রোগের লক্ষণ প্রকাশে পায়ের পাতা

প্রকাশিত: মে ১৪, ২০২৪, ০৮:৪৯ রাত
আপডেট: মে ১৪, ২০২৪, ০৮:৪৯ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

ত্বক থেকে চুল কিংবা চর্মরোগ থেকে চোখের পানি- এসবের বাহ্যিক অবস্থা থেকে দেহের অনেক রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়।

 

তবে শরীরবিদ্যায় একটি অঙ্গ প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। সেটা হল পায়ের পাতা।

“স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে শরীরের একেবারে নিচের অংশ থেকে মস্তিষ্ক পর্যন্ত যোগাযোগ স্থাপন করে পা ও পায়ের পাতা। এর মাধ্যমে দাঁড়ানো, ভারসাম্য রক্ষা এমকি রক্ত পাম্প করে ওপরের দিকে ঠেলে হৃদপিণ্ডে পৌঁছানোর ব্যাপারেও ভূমিকা রাখে দেহের এই অংশ”- সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করেন যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ু ও মনো-বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ডা. ড্যান বামগার্ডট।

 

তিনি আরও বলেন, “কার্যকারিতা ও অবস্থার প্রেক্ষিতে পা থেকে বিভিন্ন রোগ যেমন- ভাইরাসের সংক্রমণ, হৃদসংক্রান্ত রোগ বা স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যার লক্ষণ আঁচ করা যায়।”

হাত, পা, মুখের রোগ

ছোঁয়াচে রোগ দেহের বিভিন্ন অংশে প্রভাব ফেলতে পারে।

হাম সাধারণত মুখ বা মুখের ভেতর থেকে শুরু হয়। ছোট ছোট চিনির দানার মতো দেখতে গুটি ওঠে, যা ফাঙ্গাসের সংক্রমণে হয়। আর দেহের উপরের অংশেই সাধারণত বেশি আক্রান্ত হয়।

হাত, পা, মুখ অর্থাৎ ‘হ্যান্ড, ফুট অ্যান্ড মাউথ’ বা এইচএফএম রোগও দেহের ওপরের অংশে শুরু হয়। ‘কক্সসাকি’ ভাইরাস থেকে হওয়া এই রোগে লালচে-গোলাপি দানা দেখা দেয়। এই ধরনের ফুসকুড়ি পা ও পশ্চাৎদেশেও ওঠে।

তাই পায়ে কোনো নতুন ফুসকুড়ি দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। কারণ সেটা হতে পারে এইচএফএম রোগের লক্ষণ।

 

এটা ছোঁয়াচে রোগ সাধারণ শিশুদের মাঝে বেশি দেখা দেয়। তবে ভালো খবর হল সঠিক চিকিৎসায় কম সময়ে ভালো হয়ে যায়।

হৃদপিণ্ড, ধমনী ও পায়ের পাতা

সঞ্চালন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাথা থেকে পা পর্যন্ত রক্ত প্রবাহিত হয়। আর এরজন্য ধমনী ছাড়াও সারা শরীরে গাছের শাখা প্রশাখার মতো ছড়িয়ে রয়েছে শিরা উপশিরা।

“কোনো না কোনো সময় আমরা সবাই পা ঠাণ্ডা হওয়ার সমস্যায় ভুগি। বিশেষ করে শীতকালে খালি পায়ে হাঁটলে এমটা হয়। তবে পায়ের পাতা ঠাণ্ডা হওয়ার সাথে ব্যথা ও বিবর্ণতা বা নীলচে বর্ণ ধারণ করে তবে সাবধান হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে”- বলেন ডা. ড্যান বামগার্ডট।

একে বলা হয় ‘ব্লু টো সিন্ড্রম’। কোনো কারণে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হলে পায়ে অক্সিজেন সরবরাহ কমে গিয়ে এই অবস্থা তৈরি হয়।

ছোট কোলেস্টেরলের দানা থেকে রক্তে প্লাক জমে যা বড় ধমনী দিয়ে চলে যেতে পারলেও সরু শিরা উপশিরা দিয়ে বের হয়ে যেতে পারে না। এই ‘প্লাক’ যখন পায়ের পাতায় পৌঁছায় তখন আটকে যায়। ফলে রক্তে প্রবাহে বাধা পড়ে। যা থেকে কোষে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। আর তখনই নীলচে বর্ণ ধারণ হয় আর অনুভূত হয় ব্যথা।

মারাত্মক পরিস্থিতিতে গেলে কোষ ধ্বংস হয়, ভেঙে যায়- সেখান থেকে দেখা দেয় গ্যাংগ্রিন। ফলে অনেক সময় শুধু আঙ্গুল-ই নয়, পুরো পা কেটে ফেলতে হয়।

এই পরিস্থিকে ‘ট্র্যাশ ফুট’ হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। এটা ছাড়াও হৃদসংক্রান্ত রোগের আরও লক্ষণ ফুটে উঠতে পারে পায়ে।

যেমন- পায়ের পাতা লালচে হয়ে ফুলে ওঠার (হাতেও হতে পারে) মানে হতে পারে হৃদপিণ্ডে সংক্রমণ, যাকে বলা হয় ‘ব্যাক্টেরিয়াল এন্ডোকার্ডাইটিস’।

বাবিনস্কি লক্ষণ

পায়ের পাতায় ভোতা কোনো যন্ত্র দিয়ে আঘাত করে পায়ের ‘রিফ্লেক্স’ বোঝার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘বাবিনস্কি টেস্ট’। ফরাসি স্নায়ুবিজ্ঞানি জোসেফ বাবিনস্কি এই পদ্ধতির আবিষ্কারক।

এভাবে আঘাত বা টোক দেওয়ার ফলে পায়ের পাতা কুঁকড়ে যায়। এটা মস্তিস্কের স্বাভাবিক সংকেত ক্রিয়ার কারণে হয়। সাধারণ ছোট শিশুদের স্নায়ু ও নড়াচড়ার ক্ষমতা ঠিক আছে কিনা সেটা পরখ করতে এই পরীক্ষা চালান হয়।

তবে বড়দের ক্ষেত্রে অবস্থাটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। যদি পায়ের পাতায় এরকম টোকা দেওয়ার পরও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা না দেয় তবে নানান ধরনের রোগের কারণে হতে পারে। যেমন- থাইরয়েডের সমস্যা, ডায়াবেটিস, বৃক্কে সমস্যা ইত্যাদি।

তাই ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো জরুরি। এছাড়া পায়ে যে কোনো অস্বাভাবিক ব্যথা বা ব্যাখ্যাতীত কোনো সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি বলে মত দেন, ডা. ড্যান বামগার্ডট।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS