ভিডিও

মহানবির জীবনাদর্শ চর্চা ও অনুধাবন জরুরি

হাফেজ মাও: মোঃ আজিজুল হক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২৪, ০৯:৫৮ রাত
আপডেট: সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২৪, ০৯:৫৮ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

আলোচনার গুরুতে সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি কলমের মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করার তাওফিক দিয়েছেন এবং যিনি সমগ্র সৃষ্টি তথা বিশ্বজগতের প্রতিপালক। তারপর সৃষ্টির সেরা হজরত মুহাম্মদ (সা) এর উপর দরুদ ও সালাম এবং তাঁর বংশধর, আসহাব, স্ত্রী, সন্তানদের প্রতি রহমত বর্ষিত হোক।

গোটা বিশ্বে যত শিক্ষণীয় ও করণীয় কাজ আছে তার মধ্যে সর্ব প্রধান কাজ হচ্ছে মানবীয় সুকুমার বৃত্তির লালন ও বিকাশ সাধন এবং তাকে পূর্ণতার পর্যায়ে উন্নীতকরণের উদ্দেশ্যে নবিদের আগমন। বিশ্ব জগতের পরম প্রভু মহান আল্লাহর পরিচয়, তাঁর অভিপ্রায়, তাঁর বিধান পৃথিবীর মানুষকে জানিয়ে দেয়ার জন্য তিনি নবি ও রাসুল শ্রেণীর উদ্ভব ঘটিয়েছেন। এ উদ্দেশ্যে আল্লাহ বিশ্ব-সৃষ্টির শুরু থেকে এ পর্যন্ত অসংখ্য নবি রাসুল পাঠিয়েছেন।

অবতীর্ণ করেছেন বহু কিতাব ও সহিফা। পৃথিবীর এমন কোনো স্থান নেই যেখানে আল্লাহর পক্ষ থেকে নৈতিক চরিত্রের উত্তম প্রশিক্ষণদাতা প্রেরিত হননি। কুরআনের ভাষায়: ‘এমন কোনো সম্প্রদায় নেই যার প্রতি সতর্ককারী (নবি-রাসুল) প্রেরিত হননি’ (সুরা: ফাতির, আয়াত: ২৪)। সকল নবি-রাসুলের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ও শিক্ষা ছিলো এক ও অভিন্ন। তাঁরা একে অপরের সত্যতার সাক্ষী।

বনি আদমের মধ্যে তাঁদের ন্যায় পরস্পরের প্রতি অধিক সহানুভূতিশীল দ্বিতীয় আর কেউ ছিলো না, ছিলো না কোনো ব্যক্তি কিংবা কোনো ফেরেশতা অধিকতর যথার্থ ও বিশুদ্ধ শিক্ষার বাহক। আল্লাহর এ সকল পবিত্র বান্দা স্বকপোল-কল্পিত কিছু ব্যক্ত করেননি বরং তাদের শিক্ষা ছিলো আল্লাহরই প্রদত্ত শিক্ষা।

যা তারা আল্লাহর অন্যান্য বান্দার নিকট পৌছিয়ে দেয়ার মহান দায়িত্ব নিয়ে এসেছিলেন এবং তদনুযায়ী যথাসাধ্য স্বীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করেছিলেন। আজ এ বসুন্ধরার যে অংশেই এবং যে জনপদেই কিছু কিছু উত্তম চরিত্র সম্পন্ন লোকের সন্ধান পাওয়া যায় তা এ সব মহাপুরুষেরই শ্রমের ফসল। আল্লাহ তায়ালা কমবেশি ১ লাখ ২৪ হাজার নবি-রাসুল পাঠিয়েছেন।

এ ধারাবাহিকতার সমাপ্তি ঘটে আমাদের নবি, শেষ নবি ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবি হজরত মুহাম্মদ (সা)র নবুওয়াতের মাধ্যমে। তারপর আর কোনো নবি নেই। তাইতো আল্লাহর বিধান সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করার কাজ এখন মুসলিম প্রাজ্ঞসমাজের দায়িত্ব। ইসলামি শরিয়াতের আলেম ও সুযোগ্য ইসলাম প্রচারকগণের। আর ঐশী নির্দেশনার অপরিবর্তনীয় উৎস হিসেবে মানুষের সামনে স্থাপন করা হয়েছে পবিত্র কুরআন এবং সুন্নাহর অবিনশ্বর আদর্শ।

এ দু’য়ের আলোয় চিরদিন রচিত হবে বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের চলার পথ ও পাথেয়। আদর্শিক ও নৈতিক সংকট উত্তরণে নবির সুন্নাহর বিকল্প নেই। মহানবির জীবনাদর্শ চর্চা, অনুধাবন এবং বাস্তবায়ন একজন মুমিনের জীবনে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ তার বিস্তারিত ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ, জগতের আদর্শ মহামানব ও মহানবি, রাহমাতুল্লিল আলামিন হজরত মুহাম্মদ (সা) এর বর্ণধ্য, আলোকজ্জ্বল জীবন, রত্নগর্ভ অতলান্ত সমুদ্রের সঙ্গে তুলনীয়।

তাকওয়া ও ঈমানের রঙ্গে রঞ্জিত হয়ে সেই সমুদ্রে অবগাহন করলে কামিয়াবির রত্নসম্ভারে আমাদের আমলের ভান্ডার পূর্ণ থেকে পূর্ণতর হয়ে উঠে। বস্তুত পবিত্র কুরআন এবং রাসূলুল্লাহ (সা)এর প্রদীপ্ত জীবনের মধ্যে পার্থক্যের সীমারেখা টানা যায় না। অম্লান-অনির্বাণ মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের আসমানি জ্যোতিতে ভাস্বর রাসুল-জীবন তাই শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিশ্ব মানবকে দিয়ে চলেছে সিরাতুল মুসতাকিমের আলোকময় দিক-নির্দেশনা।

সিরাতুননবি তথা নবির জীবনী জানা আবশ্যক। কারণ, আল্লাহ তায়ালা কুরআনের বহু জায়গায় মহানবির অনুসরণ করতে বলেছেন, কাজেই রাসুলুল্লাহ (সা) সম্পর্কে জানা আমাদের জন্য ওয়াজিব। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেনঃ ‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ’ (সুুরা: আহজাব, আয়াত: ২১)।

তাই প্রত্যেক ব্যাপারে প্রতিটি কাজকর্মে, চিন্তা-চেতনায়, ওঠা-বসায় অর্থাৎ জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে সেই বরকতময় সত্তার সর্বোত্তম আদর্শের পদাংক অনুসরণ অনুকরণ করে চলা এবং সাহসিকতা ও দৃঢ়তা প্রভৃতিতে তাঁরই আদর্শ মান্য করা উচিত। সিরাতে আমাদের জীবনের  প্রত্যেক সমস্যা সমাধানের গাইডলাইন আছে। পবিত্র কুরআনের অনির্বাণ আলোকধারায় স্নাত রাসুলুল্লাহ (সা)র দীপ্ত জীবনাদর্শ বিশ্ব  মানবের জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়।

ব্যক্তি পরিবার সমাজ, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সর্ব পর্যায়ের সংকট ও ক্রান্তিকালে আমরা নবিজিকে পেতে পারি আমাদের মহান দিশারীরূপে, আত্মপ্রত্যয় ও আত্ম-উদ্বোধনের অফুরন্ত উৎসরূপে। এ কারণেই মহানবির মহিমান্বিত জীবনাদর্শের আলোকিত জ্যোতি-প্রভার নিকট আমাদের বার বার, শত-সহস্রবার ফিরে যেতে হয়। আর এ কারণেই মহান রাসুলের সিরাত চর্চাও গুরুত্ব পেয়েছে সর্বযুগে সর্বকালে।

রাসূলুল্লাহ (সা)র জীবনচরিতগ্রন্থ পাঠ করা ও চর্চা করা জরুরি। কেননা তাঁর প্রতিটি কথা, কাজ ও অনুমোদন ইসলামে দলিল হিসাবে  বিবেচিত। সিরাত তথা নবির জীবনী না জানলে কালিমার অর্ধেক তথা মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ এই অংশ অজানাই থেকে যাবে। এমনকি  সিরাত না জানলে পরিপূর্ণ কুরআন বুঝা অসম্ভব।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS