ভিডিও

শাওয়াল মাসের গুরুত্ব ও ছয়টি নফল রোজার ফজিলত

মোহাম্মদ মোস্তাকিম হোসাইন

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৫, ২০২৪, ১০:৪৫ রাত
আপডেট: এপ্রিল ২৫, ২০২৪, ১০:৪৫ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

শাওয়াল মাসের এক তারিখ ছিল মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন এই দিনে রোজা রাখা হারাম। আমরা জানি বছরে ৫ দিন রোজা রাখা হারাম এছাড়া অন্যান্য দিনে নফল রোজা রাখা যায়। পবিত্র মাহে রমজানের সিয়াম সাধনার একটি মাস পর আমাদের মাঝে হাজির হয়েছে হিজরি বছরের দশম মাস পবিত্র শাওয়াল মাস।

এ মাস হচ্ছে পূর্ণ প্রার্থনা করা, পরিপূর্ণতা, বুঝে নেওয়া। এ মাসে ছয়টি রোজা সম্পর্কে আল্লাহ রাসূল বলেছেন যে এ মাসে ছয়টি রোজা রাখবে সে পূর্ণ এক বছরের সোয়াব পাবে। (মুসলিম) শাওয়াল মাস সম্পর্কে নবী (সা.) আরও বলেছেন, 'আল্লাহ তাআলা শাওয়াল মাসের ছয় দিনে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি এই মাসে ছয় দিন রোজা রাখবে, আল্লাহ তাআলা তাকে প্রত্যেক সৃষ্ট জীবের সংখ্যার সমান নেকি দেবেন, সমপরিমাণ গুনাহ মুছে দেবেন এবং পরকালে তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করবেন।'

হযরত উবাইদুল্লাহ (রা:) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, একদিন রাসুল (সা:) কে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ আমি কি সারা বছর রোজা রাখতে পারবো? তখন রাসুল সা: বললেন, "তোমার উপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে", কাজেই তুমি সারা বছর রোজা না রেখে. রমজানের রোজা রাখ এবং রমজানের পরবর্তী মাস শাওয়ালের ছয় রোজা রাখ, তাহলেই তুমি সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাবে (তিরমিযি)।

শাওয়াল মাসের যেকোনো সময় এই রোজা আদায় করা যায়। ধারাবাহিকভাবে বা মাঝে মধ্যে বিরতি দিয়েও আদায় করা যায়। উল্লেখ্য, রমজান মাসে ফরজ রোজা ছাড়া অন্যান্য সব রোজার নিয়ত সাহ্রির সময়ের মধ্যেই করতে হবে। ঘুমানোর আগে বা তারও আগে যদি এই দিনের রোজার দৃঢ় সংকল্প থাকে, তাহলে নতুন নিয়ত না হলেও চলবে এবং সাহ্রি না খেতে পারলেও রোজা হবে। (ফাতাওয়া শামি)।

রমজানের ছুটে যাওয়া কাজা রোজা পরবর্তী রমজান মাস আসার আগে যেকোনো সময় আদায় করা যাবে। রমজানের কাজা রোজা রাখার জন্য সময় সংকীর্ণ হলে তার আগে নফল রোজা রাখা বৈধ ও শুদ্ধ। সুতরাং ফরজ রোজা কাজা করার আগে নফল রোজা রাখতে পারবেন।

তবে সম্ভব হলে আগে ফরজ রোজার কাজা আদায় করাই উত্তম। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ, খন্ডণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১৬৬)। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমার ওপর রমজানের যে কাজা রোজা বাকি থাকত; তা পরবর্তী শাবান ব্যতীত আমি আদায় করতে পারতাম না।’ (বুখারি: ১৯৫০; মুসলিম: ১১৪৬)।

হাদিসমতে, শাওয়াল মাসে বিয়ে-শাদি সুন্নত, যেরূপ শুক্রবারে ও জামে মসজিদে ও বড় মজলিশে আকদ অনুষ্ঠিত হওয়া সুন্নত। কারণ মা আয়েশার বিয়ে শাওয়াল মাসের শুক্রবারে মসজিদে নববিতেই হয়েছিল। (মুসলিম)। শুভ কাজের শুভসূচনার জন্য এ মাস খুবই উপযোগী।

এ মাসে বিভিন্ন ইসলামি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মবর্ষ শুরু করে থাকে। ইসলামি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এ মাসে তাদের শিক্ষাবর্ষের নতুন ভর্তি ও নব পাঠদান শুরু করে। আমাদের দেশে কওমি মাদ্রাসাগুলোতেও শিক্ষা ব্যবস্থা নতুন ভর্তির পরে ক্লাস  শুরু হয়।

এ মাসেই শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখা রমজানের রোজা কবুল হওয়ারও পরিচায়ক। আল্লাহ তাআলা কোনো বান্দার আমল কবুল করলে, তাকে অনুরূপ আরও আমল করার তৌফিক দান করেন। নেক আমলের প্রতিদানের একটি রূপ হলো আবার আরও নেক আমল করার সৌভাগ্য অর্জন করা। তাই নামাজ, রোজা, তিলাওয়াত ও অন্যান্য ইবাদতবন্দেগি বাকি ১১ মাসও বজায় রাখতে হবে।

শাওয়াল ইসলামি মাসগুলোর মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মাস। এ মাসের বহুবিধ তাৎপর্য রয়েছে। আরবি চান্দ্রবর্ষের দশম মাস শাওয়াল। এটি হজের তিন মাসের (শাওয়াল, জিলকদ, জিলহজ) অগ্রণী। এ মাসের প্রথম তারিখে ঈদুল ফিতর বা রমজানের ঈদ। পয়লা শাওয়াল সদকাতুল ফিতর বা ফিতরা আদায় করা এবং ঈদের নামাজ পড়া ওয়াজিব।

এই মাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে হজের, এর সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে ঈদের; এর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে নফল রোজা ও সদকা। তাই তাৎপর্যময় এই মাছটি ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করা দরকার বিশেষ করে নফল রোজা কোরআন তেলাওয়াত দান, ছদকা, দরুদ সালাম। হজে গমন হাজী সাহেবগণ হজের প্রস্তুতি নিচ্ছে । আগামীতে হজের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করব ইনশাল্লাহ। মহান আল্লাহ আমাদেরকে এই মাসে বেশি বেশি নফল ইবাদত করার তৌফিক দান করুন।


লেখক : কলামিস্ট, ইসলামী গবেষক ও কলেজ প্রভাষক

01712-777058



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS