ভিডিও

সাতটি ধ্বংসাত্মক মহাপাপ

আলহাজ্ব হাফেজ মাও: মুহাম্মদ আজিজুল হক

প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২৪, ১০:২৮ রাত
আপডেট: জুন ২৮, ২০২৪, ১০:২৮ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বিরত থাক। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেই সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজ কী?

তিনি বললেন,

(১) আল্লাহর সাথে শরিক করা,

(২) জাদু করা,

(৩) অন্যায় ভাবে মানুষ হত্যা করা,

(৪) সুদ খাওয়া,

(৫) এতিমের সম্পদ আত্মসাত করা,

(৬) জিহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে যাওয়া,

(৭) সতী মুমিন নারীদের অপবাদ দেওয়া।

(বুখারি, হাদিস নং : ২৭৬৬)

শিরক করা : পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় গোনাহ, সবচাইতে বড় অপরাধ হলো আল্লাহর সাথে শরিক করা। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয় শিরক সবচেয়ে বড় জুলুম (সূরাঃ লুকমান, আয়াতঃ ১৩) শিরক ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। মানুষ যত ভালই হোক যত ভাল কাজই করুক।

কোনোভাবে যদি তার আমলের সঙ্গে শিরকের মিশ্রণ ঘটে তাহলে তার সমস্ত আমলই বাতিল হয়ে যাবে। এমনকি নবী-রাসুলগণকেও আল্লাহতায়ালা এই বলে সতর্ক করেছেন যে, আপনারাও যদি এমন কোনো কাজ করেন, যা তাওহীদের পরিপন্থী, তাহলে আপনাদের ধ্বংস অনিবার্য।

ইরশাদ হয়েছে, হে রাসূল! আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতি এই মর্মে ওহী নাযিল করা হয়েছে যে, যদি আপনি শরিক করেন তাহলে আপনার আমল বাতিল হয়ে যাবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবেন (সূরাঃ যুমার, আয়াতঃ ৬৫)

জাদু করা : জাদু বলা হয় এমন কোনো বিষ্ময়কর বিষয়কে, যার উপকরণ বা কার্যকারণ গোপন থাকে, বা সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম কোনো কথা বা কর্মকান্ডের প্রকাশ, যা তন্ত্র-মন্ত্র, কুফরী কালাম বা শয়তান ও জিনের সাহায্যে হয়ে থাকে এবং যা মন্দকে শোভনরূপে প্রদর্শন করে, যার উৎস সূক্ষ্ম ও দুর্বোধ্য। জাদু একটা কুফরি ও ধ্বংসের কাজ। জাদুর কারণে মানুষের নেক আমলগুলো ধ্বংস হয়ে যায়।

জাদুকরদের জন্য পরকালে কোনো অংশ নেই বলে কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা জানিয়ে দিয়েছেন। শয়তানের মূল মিশন হলো মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা। শয়তান এ মিশন বাস্তবায়নে জাদুকে হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেছে।

মানুষ হত্যা : ইসলামে মানব হত্যা, রক্তপাত, অরাজকতা, সন্ত্রাস ও সহিংসতাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মানুষ আল্লাহতায়ালার অনন্য সৃষ্টি। তিনি মানুষকে সৃষ্টিকুলের সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদায় আসীন করেছেন। তাঁর এই সৃষ্টির পেছনে রয়েছে এক মহৎ রহস্য। তাঁর মায়াময় এই সৃষ্টিকে ধ্বংস করা মানে আল্লাহকেই কষ্ট দেয়ার নামান্তর। তাই শান্তির ধর্ম ইসলামে মানব হত্যাকে বড় পাপ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এমনকি অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা,পুরো জাতিকে হত্যার শামিল।

মহান আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি কাউকে (অন্যায়ভাবে) হত্যা করলো, সে যেন পৃথিবীর সব মানুষকেই হত্যা করলো। আর যে ব্যক্তি কারো জীবন রক্ষা করলো, সে যেন পৃথিবীর সব মানুষের জীবনই রক্ষা করলো। (সূরাঃ মাযিদাহ, আয়াত : ৩২) হত্যাকারীর শেষ পরিণতি হলো জাহান্নামের বিভীষিকাময় উত্তপ্ত আগুন। হত্যাকারী কখনো সাচ্চা মুসলমান নয়।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, খাঁটি মুসলিম হচ্ছে সে, যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে (বুখারী)।

সুদ খাওয়া : যে ঋণ ঋণদাতার জন্য কোনো ধরনের মুনাফা বয়ে আনে সেটাই সুদ। ইসলামে সব ধরনের সুদই হারাম। চাই তা সরল সুদ হোক বা চক্রবৃদ্ধি সুদ, কিংবা ব্যাংকিং সুদ হোক। কম হোক বা বেশি হোক। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয় হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন। (সূরাঃ বাকারা, আয়াত : ২৭৫) পবিত্র কুরআনে বহু ধরনের গোনাহের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে।

সে সবের জন্য কঠোর শান্তি ও ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। কিন্তু সুদের ক্ষেত্রে যত কঠোর ভাষা প্রয়োগ করা হয়েছে অন্য কোনো গোনাহের ব্যাপারে এমনটি করা হয়নি। সুদের সঙ্গে জড়িত সবাইকে রাসূল (ﷺ) অভিশাপ দিয়েছেন। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, সুদখোর স্বয়ং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে।

এতিমের মাল ভক্ষণ করা : ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় এতিম বলা হয় ওই অপ্রাপ্তবয়ষ্ক, অনুপযুক্ত ছেলে বা মেয়েকে যার পিতা জীবিত নন। কুরআন-সুন্নায় এতিমের অধিকার, এতিমের প্রতি দয়া-অনুগ্রহের মর্যাদা ও পুরস্কারের কথা বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। এতিমের সম্পদে অবৈধ হস্তক্ষেপ করা থেকে সতর্ক করে এবং তাদের সাথে কৃত অঙ্গিকার পূর্ণ করার আবশ্যকীয়তা সম্পর্কে সূরা বনী ইসরাঈলের ৩৪নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।

এতিমের সম্পদ গ্রাস করা আগুন ভক্ষণের নামান্তর। ইরশাদ হয়েছে, যারা এতিমের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করে তারা নিজেদের পেটে আগুনই ভর্তি করে এবং অতিসত্বর তারা জ¦লন্ত আগুনে জ্বলবে (সূরা : নিসা, আয়াত : ১০)

জিহাদের ময়দান থেকে পালানো : জিহাদ ইসলামের এক শাশ্বত বিধান। যা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। আবার জিহাদ ও সন্ত্রাস কখনোই এক নয়। কুরআন হাদীসে সন্ত্রাসের নিন্দা ও সন্ত্রাস দমনে ইসলামে যে শাশ্বত বিধান রয়েছে তা বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে।

ইসলামের সমরনীতি অনুযায়ী কাফের বাহিনীর মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার পর যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া জায়েয নয়। যুদ্ধাবস্থায় পশ্চাদপসরণ এবং যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালায়নকারীদের সুকঠিন আযাবের কথা সূরা আনফালের ১৬ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।

সতী নারীকে অপবাদ দেয়া : সতী-সাধ্বী নারীকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া কঠিন অপরাধ। মিথ্যার সর্বোচ্চ পর্যায় হলো কারো ওপর অপবাদ দেয়া। আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয়ই যারা সুচরিত্রবান সরলমনা মুমিন নারীদের ব্যভিচারের অপবাদ দেয় তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য আছে মহা শাস্তি (সূরা : নুর, আয়াত : ২৩)



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS