ভিডিও

বগুড়ার শাজাহানপুর ও শিবগঞ্জে শীতকালীন সবজি চারা উৎপাদন ও চাষে ব্যস্ত কৃষক

মৌসুমে চারা বিক্রি হয় ৮ থেকে ১০ কোটি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪, ১০:১৪ রাত
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪, ১০:১৪ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

হাফিজা বিনা : শীতকালীন সবজির আগাম চাষ করলে দাম পাওয়া যায় দ্বিগুন। এজন্যই চারা উৎপাদনে সেরা বগুড়ার শাজাহানপুরের শাহ নগর এবং সবজির জন্য বিখ্যাত শিবগঞ্জ এলাকার কৃষকরা মহাব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

এই অঞ্চলের কৃষক শাহনগর থেকে চারা নিয়ে শীতকালীন সবজি চাষ করেন প্রতি বছর। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। সূর্য ওঠার পর থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত পরিশ্রম করছেন সবার আগে শীতের সবজি বাজারে তুলতে। প্রতিবছর এই এলাকার নার্সারীমালিকেরা ৮ থেকে ১০ কোটি চারা বিক্রি করে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা বিক্রি করেন।

চারা উৎপাদনে বিখ্যাত শাজাহানপুর উপজেলার চুপিনগর ও খোট্টাপাড়া ইউনিয়নের শাহনগর নার্সারি মালিক সমিতির আওতায় দুই শতাধিক নার্সারিতে রোগবালাইমুক্ত ও উচ্চ ফলনশীল জাতের সবজি চারা উৎপাদন হয়।

এই দুই ইউনিয়নের রাস্তার পাশে নাঈম নার্সারী, আনোয়ার নার্সারী, দুলাল নার্সারী, আলাল, উজ্জল, দুই ভাই, তিনবোন, আল আমিন, মোজামেদুল নার্সারীর প্রায় প্রত্যেকটিতে চোখে পড়ে কৃষদের ব্যস্ততা। কেউ জমি ঠিক করছেন, কেউ চারা ফেলছেন, কেউ পলিথিন মুড়িয়ে দিচ্ছেন, আবার কোন কোন নার্সারীতে তৈরি করা চারা বাইরে থেকে আসা কৃষকের কাছে বিক্রি করছেন।

জানা যায়, প্রত্যেক মৌসুমে এই এলাকার সবজির চারা উত্তরাঞ্চলের প্রায় সব জেলাতে সরবরাহ করা হয়।  আর এখান থেকেই প্রতি মৌসুমে তাদের কয়েক কোটি চারা বিক্রি করে, কয়েক কোটি টাকা  আয় করেন। কথা হয় শাহনগর এলাকার সবজির চারা উৎপাদনকারী নাঈম নার্সারীর স্বত্তাধিকারী লাল মিয়ার সাথে তিনি জানান, মূলত আষাঢ় মাসের শুরুতেই  তিনি সবজির চারা তৈরিতে নেমে পড়েন।

তা চলে  অগ্রহায়ন মাস পর্যন্ত। এবছর এখনকার এই চারাগুলো তার দ্বিতীয় কিস্তির চারা। প্রথম পর্যায়ের চারাগুলো থেকে তেমন একটা লাভ হয়নি। দেশের  চলমান পরিস্থিতিতে ও আবহাওয়ার কারণে শুধু  উৎপাদন খরচে বিক্রি করেছেন  চারাগুলো। তার প্রায় দুই বিঘার এই নার্সারীতে  বিশেষভাবে  পলিথিনের ছাউনীর নিচে হাজার হাজার চারা। কোনটাতে মরিচ, কোনটাতে ফুলকপি ও বাধা কপির চারা আবার কোনটাতে  টমেটো চারা।

তিনি আরও জানান, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভালমানের চারা নিতে আসেন কৃষক।  প্রতিটি চারা তারা  ১ থেকে দেড়টাকা  পিস হিসেবে বিক্রি করেন। প্রতিদিন প্রায়  ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকার চারা বিক্রি হয় বলে জানান।

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ থেকে মরিচের চারা নিতে এসেছেন  হায়দার আলী ও জাহাঙ্গীর আলম।  তারা জানান. প্রতিবছর এই শাহ নগর থেকে  মরিচ, টমেটো,  ফুলকপি ও বাধাকপির চারা নিয়ে যান। কিন্তু এবছর মরিচের দাম বেশি  তাই শুধুমাত্র মরিচের চারা কিনেছেন।  দুই্ জনে ২ হাজার  মরিচের  চারা কিনেছেন ২ হাজার টাকা দিয়ে। বললেন, তাদের এলাকার চারার চেয়ে এখানকার চারার গুণগতমান ভাল।

অন্যদিকে জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার সাদুল্লাপুর, এনায়েত পুর, উত্তর শ্যামপুর, মাঝপাড়া, বাকসন, জামালপুর, বারুগারী, মেদিনীপাড়া, উথলী, নারায়নপুর, রায়নগর, হরিপুর, কাজীপুর, মহাস্থান এলাকার কৃষকেরা শীতকালীল সবজি মুলা, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, সিম, লালশাক, পালংশাক, পুঁইশাক ও পেঁয়াজ শীত নামার আগেই বাজারে তোলার জন্য চারা রোপন শুরু করেছেন। তারা আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করে সরবরাহ করেন বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন  জেলায়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, বগুড়ায় প্রতিবছর শীতকালীন সবজির ভালো চাষ হয়ে থাকে। এ বছর বৃষ্টি না হওয়ায় চারা ভাল হয়েছে। শীত আসার এখনও দেরি থাকলেও এখনই শিবগঞ্জের সবজি চাষীরা আগাম সবজি চাষ শুরু করে দিয়েছেন। শীতকাল আসার আগেই এ উপজেলাগুলোতে প্রতিবছর ৩ থেকে সাড়ে তিন হাজার  হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়।

শাহনগর নার্সারি মালিক সমিতির সভাপতি আমজাদ হোসেন দৈনিক করতোয়া’কে বলেন, প্রতিবছর জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এসব চারা বিক্রি হয়। প্রতিটি নার্সারিতে এক মৌসুমেই দুই থেকে তিন দফা চারা উৎপাদন করা হয়। বীজ বপনের ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যেই চারা বিক্রি শেষ করে আবারও নতুন চারার জন্য রেডি করতে হয়। এবছর  নাসার্রীগুলোতে ৮ থেকে ১০ কোটি চারা  উৎপাদনের আশা আছে বলে জানান  এই নেতা।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS