ভিডিও

মেয়াদ শেষ দেড় বছর আগে, পূর্ণাঙ্গ কমিটি পেলো না বগুড়া পৌর আওয়ামী লীগ

সভাপতি-সম্পাদকে পার সাড়ে চার বছর

প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২৪, ১১:০০ রাত
আপডেট: জুন ১৩, ২০২৪, ১২:৪৬ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

শাওন রহমান : তিন বছরের কমিটির মেয়াদ পেরিয়ে সাড়ে চার বছর, তারপরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি পায়নি বগুড়া পৌর আওয়ামী লীগ। এতে পদপ্রত্যাশী নেতা যেমন হয়েছেন পদবীবিহীন ‘পৌর আওয়ামী লীগনেতা’, তেমনি হতাশ নেতার অনুসারী কর্মীরাও।

শহরের ২১টি ওয়ার্ডের বেশিরভাগ কমিটিই আবার ২০১৩ সালের আগের মকুল-বিমলের নেতৃত্বাধীন কমিটির গঠন করা। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন নিয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অদৃশ্য দ্বন্দ্বে সাড়ে চার বছরে দু’জনই জেলা আওয়ামী লীগের কাছে দিয়েছেন আলাদা তালিকা। এদিকে বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের এমন দৈন্যদশা কাটানোর উদ্যোগ নিতেও দেখা যায়নি জেলা নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকেও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর ভেঙে দেওয়া হয় পৌর আওয়ামী লীগের এড. মকবুল হোসেন মুকুল ও বিমল ঘোষের কমিটি। এরপর রফি নেওয়াজ খান রবিনকে আহবায়ক এবং শাহাদত হোসেন শাহিন, সুলতান মাহমুদ খান রনি, শেখ শামিম, মিজানুর রহমান বকুল, আবু ওবায়দুল হাসান ববি ও এ্যাডোনিস তালুকদার বাবুকে যুগ্ম আহবায়ক করে আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এই আহবায়ক কমিটি পার করে ছয় বছর।

অনেক প্রতীক্ষার পর ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে প্রায় ৬ হাজার ডেলিগেট ও ৪৪৯ জন কাউন্সিলরের উপস্থিতির কথা জানানো হয়। সম্মেলনটি সফল করতে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রদীপ কুমার রায়কে আহবায়ক ও আসাদুর রহমান দুলুকে সদস্য সচিব করে ৬ সদস্যের সম্মেলন প্রস্তুত কমিটিও গঠন করা হয়।

পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে চারজন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিলেও শেষ পর্যন্ত আব্দুল মান্নান আকন্দ ও মিজানুর রহমান বকুল তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন। এছাড়াও আরেক পদ প্রত্যাশী ফারুক খান লিটনের প্রার্থীতা বাতিল হলে রফি নেওয়াজ খান রবিন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হন। এছাড়াও এ কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে চার নেতা-আবু জাফর মো. মাহমুদুন্নবী রাসেল, শাহাদৎ হোসেন শাহিন, শেখ শামিম ও আবু ওবায়দুল হাসান ববি নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাখেন।

কাউন্সিল ভোটে আবু ওবায়দুল হাসান ববি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সংগঠন সূত্র জানায়, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ৬৯ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবেন। তবে কেটে গেছে সাড়ে চার বছর। দুই মেয়াদে দীর্ঘ সাড়ে ১০ বছরে বগুড়া শহরে আওয়ামী লীগের কোন পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকা সাংগঠনিক দুর্বলতার সাথে অন্তর্কলহের চিত্রই ফুটে ওঠে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে পৌর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলছেন, দলীয় পদ-পদবী ব্যবহার করে দুই নেতা সব সুবিধা ভোগ করছেন, আর আমাদের করে রেখেছেন ‘পৌর আওয়ামী লীগনেতা’। দুই নেতার মধ্যে সব বিষয়ে মিল থাকলেও দ্বন্দ্ব শুধু পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন নিয়ে।

শহরের ২১টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কমিটি থাকলেও তাদের বেশিরভাগই এক যুগের বেশি সময় ধরে ধুঁকছে, যার প্রমাণ মেলে নৌকা প্রতীক নিয়ে গত পৌর নির্বাচনে অংশ নেওয়া সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদকের ভরাডুবিতে। তাদের অভিযোগ, বিএনপি’র ঘাঁটিতে শহর আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে উদ্যোগ নেননি জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দসহ কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাও।

জানতে চাইলে বগুড়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু ওবায়দুল হাসান ববি বলেন, ২০১৯ সালের শেষের দিকে তারা দায়িত্ব পাওয়ার পর বিশ^ব্যাপী করোনার ধাক্কায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে ভাটা পড়ে। তবে দেড়-দু’বছর আগে জেলা নেতৃবৃন্দের কাছে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা জমা দিলেও তা আজও অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

তবে বগুড়া জেলা নেতৃবৃন্দের কাছে যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেওয়া হয়েছে তাতে যথাযথ নিময় মানা হয়নি দাবি করে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আল রাজী জুয়েল বলেন, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দু’জন আলাদা পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা দিয়েছেন, অথচ দু’জনের যৌথ স্বাক্ষরে একটি তালিকা জমা দেওয়ার নিয়ম।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আবু ওবায়দুল হাসান ববি বলেন, বগুড়া পৌর কমিটির সভাপতি গাবতলী উপজেলা আওয়ামী লীগকে আত্মীয়করণ করার পর, বগুড়া পৌর আওয়ামী লীগকে গাবতলীকরণ করার জন্য আলাদা কমিটি জমা দিয়েছেন, অথচ এই কমিটি হওয়া উচিত বগুড়া শহরের নেতাকর্মীদের নিয়ে। তবে এ নিয়ে কোন দ্বন্দ্ব নেই বলে দাবি করেন তিনি।

এ ব্যাপারে বগুড়ার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফি নেওয়াজ খান রবিন বলেন, প্রায় দু’বছর আগে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের কাছে যে তালিকা জমা দিয়েছেন তা ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠন থেকে উঠে আসা ত্যাগী এবং দীর্ঘদিন থেকে আওয়ামী লীগের সাথে জড়িত নেতাকর্মী তালিকা। আর সাধারণ সম্পাদক যে তালিকা দিয়েছেন তা হচ্ছে আওয়ামী লীগে নতুন আসাদের তালিকা।

পরীক্ষিত ও ত্যাগীদের নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা জন্যই তার এই দ্বিমত। জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু এমপি বলেন, বগুড়া পৌর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির কোন তালিকা এখন পর্যন্ত তিনি পাননি।

এমনকি এই শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন নিয়ে তার কাছে কেউ আসেননি দাবি করে এই নেতা বলেন, এই ধরণের কমিটির তালিকা প্রথমে দপ্তর সম্পাদকের কাছে জমা হয়।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS