ভিডিও

বার্সেলোনা ৯ বছর পর হারাল বায়ার্নকে

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২৪, ১১:৩৫ দুপুর
আপডেট: অক্টোবর ২৪, ২০২৪, ০২:৫৬ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

স্পোর্টস ডেস্ক: চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সব মিলিয়ে বায়ার্নের সঙ্গে ১৪ বারের দেখায় বার্সেলোনার মাত্র তৃতীয় জয় এটি।২০১৫ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের পথে সবশেষ বায়ার্ন মিউনিখকে হারিয়েছিল বার্সেলোনা। তারপর থেকে এই বায়ার্নই হয়ে ছিল দলটির কাছে এক আতঙ্কের নাম। পরে যতবার দেখা হয়েছে, বড় ব্যবধানে বার্সাকে হারিয়ে জয়োল্লাস করেছে বাভারিয়ানরা। তবে ৯ বছর পর দুর্দান্তভাবে জিতে সেইসব ক্ষতে প্রলেপ দিয়েছে হান্সি ফ্লিকের শিষ্যরা।চ্যাম্পিয়ন্স লিগের তৃতীয় রাউন্ডের ম্যাচে বুধবার (২৩ অক্টোবর) রাতে অলিম্পিক স্টেডিয়ামে বায়ার্ন মিউনিখকে ৪-১ ব্যবধানে হারিয়েছে হান্সি ফ্লিকের ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া বার্সেলোনা। এ দিন রাফিনিয়ার হ্যাট্রিকের পাশাপাশি অন্য গোলটি করেন রবের্ট লেভানডোভস্কি। আর বায়ার্নের একমাত্র গোলটি আসে হ্যারি কেইনের পা থেকে।ইউরোপ সেরার এ প্রতিযোগিতায় বায়ার্নের বিপক্ষে টানা ছয় ম্যাচ হারের পর জয়ের মুখ দেখল বার্সেলোনা। তাদের সবশেষ জয়টি ছিল প্রায় সাড়ে ৯ বছর আগে; ২০১৫ সালের মে মাসে ক্যাম্প নুয়ে সেমিফাইনালের প্রথম লেগে নেইমারের একটি ও লিওনেল মেসির জোড়া গোলে ৩-০ ব্যবধানে জিতেছিল কাতালানরা।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সব মিলিয়ে বায়ার্নের সঙ্গে ১৪ বারের দেখায় বার্সেলোনার মাত্র তৃতীয় জয় এটি; এছাড়া একটি ম্যাচ ড্র এবং হেরেছে ১০টি।ম্যাচের তখনও এক মিনিট পার হয়নি, এর আগেই গোল করে বার্সেলোনাকে এগিয়ে নেন রাফিনিয়া। মাঝমাঠ থেকে ফের্মিন লোপেসের বাড়ানো বল ধরে বায়ার্নের হাই লাইন ডিফেন্স ভেঙে এগিয়ে যান রাফিনিয়া। এরপর ম্যাচের ৫৭তম সেকেন্ডে মানুয়েল নয়ারকে পরাস্ত করেন তিনি। এরপর দশম মিনিটেই দারুণ এক হেডারে বায়ার্নকে সমতায় ফেরান হ্যারি কেইন। তবে ভিএআরের সাহায্যে অফসাইডের বাঁশি বাজান রেফারি। অবশ্য এর আট মিনিট পর আর কেইনকে থামাতে পারেননি রেফারি।

অষ্টাদশ মিনিটে বক্সের বাঁ পাশ থেকে সের্গে গেনাব্রির পাস ধরে চমৎকার ভলিতে দলকে সমতায় ফেরান ৩১ বছর বয়সী এই ইংলিশ স্ট্রাইকার। এই গোলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের চলতি মৌসুমে তিন ম্যাচে তার গোল হলো ৫টি। আর সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে বায়র্নের জার্সিতে ১১ ম্যাচে ১৪ গোল করলেন কেইন।

সমতায় ফিরে এগিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বার্সেলোনার ওপর চাপ বাড়ায় বায়ার্ন। তবে ম্যাচের ৩৬তম মিনিটে ফের রক্ষণের ভুলের খেসারত দিতে হয় তাদের।

লামিন ইয়ামালের ক্রস হেডে ক্লিয়ার করতে গিয়ে ব্যর্থ হন বায়ার্নের কোরিয়ান ডিফেন্ডার কিম মিন-জায়ে। তার পেছনেই থাকা ফের্মিন বল ধরে বক্সে ঢুকে পড়লে এগিয়ে আসেন নয়ার। ফলে অন্যপ্রান্তে থাকা লেভানডোভস্কিকে পাস বাড়ান তিনি। আর এমন সুযোগ হাতছাড়া করেননি লেভা। এ সময় লাফিয়ে উঠলে কিমকে ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ফের্মিনের বিরুদ্ধে, কিন্তু সেই অভিযোগ আমলে না নিয়ে গোলের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন রেফারি।

ফলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের চলতি আসরে তিন ম্যাচে ৩ গোল করলেন ৩৬ বছর বয়সী এই পোলিশ স্ট্রাইকার। সব মিলিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তার মোট গোলসংখ্যা হলো ৯৭টি। আর চলতি মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১৩ ম্যাচে ১৫ করলেন তিনি।পরে প্রথমার্ধের খেলা যখন শেষের দিকে, ঠিক সে সময়ে চকিতে গোল করে বসেন রাফিনিয়া। ডান পাশ থেকে মার্ক কাসাদোর লম্বা পাস ক্ষিপ্র গতিতে এগিয়ে গিয়ে নিয়ন্ত্রণে নেন রাফিনিয়া। এরপর কিছুটা এগিয়ে গিয়ে ডি-বক্সের সামান্য বাইরে থেকে ডান পায়ের কোনাকুনি শট নেন তিনি। বায়ার্নের দুই ডিফেন্ডারের পায়ের মধ্যে দিয়ে তিনি এমনভাবে শটটি নেন যে, হতচকিত হয়ে ঝাঁপ দিয়েও তা আটকাতে ব্যর্থ হন নয়ার। ফলে বলের দখল ও আক্রমণের মতো পরিসংখ্যানে পিছিয়ে থেকেও ৩-১ গোলে এগিয়ে গিয়ে বিরতিতে যায় বার্সেলোনা।

দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমেও বার্সার ওপর চাপ অব্যাহত রাখে বায়ার্ন। তবে কোনোভাবেই ব্যবধান কমানোর পরিষ্কার সুযোগ তৈরি করতে পারছিল না তারা। এ ধারাবাহিকতার মাঝে দুর্দান্ত এক পাল্টা আক্রমণে উঠে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করে বায়ার্নকে আরও হতাশায় ডোবান রাফিনিয়া।

ম্যাচের ৫৬তম মিনিটে নিজেদের বক্সের ভেতর থেকে বল কেড়ে নিয়ে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। এরপর মাঝমাঠের কিছুটা আগে এগোতে থাকা রাফিনিয়ার উদ্দেশে দারুণ একটি পাস উড়িয়ে দেন লামিন। অসাধারণ দক্ষতায় বুক দিয়ে বল রিসিভ করে একটু এগিয়ে গিয়েই বক্সের বাইরে থেকে একই কায়দায় দূরের পোস্টে কোনাকুনি শট নেন রাফিনিয়া, আর বল আরও একবার নয়ারকে ফাঁকি দিয়ে জড়িয়ে যায় জালে।

বার্সেলোনার হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে হ্যাটট্রিক করা চতুর্থ ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার রাফিনিয়া। তার আগে ব্লাউগ্রানা জার্সি গায়ে চেপে ইউরোপসেরার মঞ্চে হ্যাট্রিকের দেখা পেয়েছেন রিভালদো, রোনালদিনিয়ো ও নেইমার। ৪-১ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়ার পর বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে মনোযোগী হয় বার্সা। এরইমাঝে মাঝমাঠ থেকে ফের্মিনকে তুলে ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংকে মাঠে নামান ফ্লিক। ফলে অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের ভারসাম্যে মাঝমাঠের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় বার্সেলোনা, যার প্রভাব পড়ে মাঠের খেলায়ও।

প্রয়োজন মতো খেলার গতি কমিয়ে দিয়ে বায়ার্নের সুযোগ কমিয়ে দিয়ে এবং হঠাৎ আক্রমণে উঠে রক্ষণ কাঁপিয়ে বায়ার্নকে নিয়ে একপ্রকার ছেলেখেলা শুরু করে তারা। ম্যাচের ৭০ মিনিট পার হলে দুই উইং দিয়ে বার্সার রক্ষণ ভাঙার চেষ্টা শুরু করে বায়ার্ন, অন্যদিকে কিছুটা রক্ষণাত্মক খেলতে থাকে বার্সা। ফলে আক্রমণ শাণাতে থাকে সফরকারীরা। তবে বার্সার জমাট রক্ষণ ও ইনিয়াকি পেনিয়ার দক্ষতায় খুব বেশি বিপদ তৈরি করতে পারছিল না বাভারিয়ানরা।এর মাঝে ৭৮তম মিনিটে পাল্টা আক্রমণে উঠে পঞ্চম গোল আদায়ের চেষ্টা করেন লামিন। তবে শেষ মুহূর্তে কর্নারের বিনিময়ে তা প্রতিহত করেন বায়ার্ন ডিফেন্ডাররা। ৮০তম মিনিটে বার্সার আরও একটি দলীয় প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। ৮৩তম মিনিটে লামিনের দূরের পোস্টে বাড়ানো ক্রসে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হয়ে আরও একটি নিশ্চিত গোলের সুযোগ নষ্ট করেন লেভানডোভস্কি।

এরপর আরও কয়েকবার চেষ্টা করেও ব্যবধান বাড়াতে না পেরে অবশেষে ৪-১ গোলের জয়ে উল্লাসে মাতে ফ্লিকের শিষ্যরা। এই জয়ে তিন ম্যাচে দুটি জয় ও একটি হারে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ২০তম স্থান থেকে এক লাফে ১০ নম্বরে উঠে এসেছে বার্সেলোনা।
তবে, ঘরের মাঠে অঘটন ঘটিয়েছে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। শুরুতে হুলিয়ান আলভারেসের গোলে এগিয়ে গিয়েও লিলের বিপক্ষে ৩-১ গোলে হেরেছে দিয়েগো সিমিওনের দল। ফলে এক জয়ে ৩ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ২৭তম অবস্থানে রয়েছে তারা। সমান পয়েন্ট নিয়ে বায়ার্নের অবস্থান ২৩তম।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS