ভিডিও

নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে নতুন জীবনে কাজিপুরের নারগিস

প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২৪, ০৪:৪৭ দুপুর
আপডেট: মার্চ ২২, ২০২৪, ০৪:৪৭ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

আবদুল জলিল, কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) থেকে ঃ বাবা-মা আর তিন বোনের সংসারে নারগিস খাতুন ছিলেন বেশ সুখেই। বড় হয়ে তিনি একজন শিক্ষক হবার স্বপ্নও দেখেছিলেন। কিন্তু মাত্র তেরো বছর বয়সে তাকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। পুতুল খেলার বয়সে তিনি ঢুকে পড়েন বাবা-মার সংসার থেকে স্বামীর সংসারে। সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার বরইতলী গ্রামের শ্বশুরবাড়িতে কিছুদিন ভাল থাকার পর শুরু হয় স্বামী ও শাশুড়ির দ্বারা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। দিনমজুর স্বামীর আয় রোজগার না থাকায় অত্যাচারের মাত্রা দিন দিন বাড়তে থাকে। একদিন তার স্বামী নিজেই বাড়ি থেকে বের হয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যান।

এরই মধ্যে ঘরে এসেছে তিনটি সন্তান। সাথে অক্ষম শ্বশুর  ও শাশুড়িকে নিয়ে বিপদে পড়ে যান নারগিস খাতুন। সহায়তা করার মতো কেউ না থাকায় অনেকদিন উপোস করতে হতো তাদের। কিন্তু এভাবে আর কতদিন চলবে। অবশেষে রাস্তায় মাটি কাটার কাজ নেন নারগিস খাতুন। কিন্তু এই কাজেও আসে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে বাধা। সমাজে নানাজন নানাকথা বলতে থাকে। প্রতিবেশিরাও তাকে কটাক্ষ করে কথা বলে। কিন্তু সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তিনি সব সহ্য করে  এগিয়ে যান তার অভিষ্ট লক্ষ্যের দিকে।  

মাটি কাটার পাশাপাশি তিনি নিজ বাড়িতে হাঁস, মুরগি ও ছাগল পালন শুরু করেন। বাড়ির আঙিনায় লাউ-কুমড়ো, ডাটা, সীমগাছ লাগান। সেইসাথে ছেলেমেয়েদের তিনি আবারো স্কুলমুখী করেন। নিজে লেখাপড়ায় এগুতে না পারলেও সন্তানদের মাঝে নিজের স্বপ্ন পূরণের পথ খুঁজে পেতে তিনি দিনরাত পরিশ্রম করতে থাকেন। এখন জীবিকার জন্যে নারগিস খাতুনকে অন্যের কাছে হাত পাততে হয়না। তার বড় মেয়ে কাজিপুর সরকারি মনসুর আলী কলেজে স্নাতক(সম্মান) শ্রেণিতে পড়ালেখা করছেন।  মেঝ ছেলে ৯ম শ্রেণিতে এবং ছোট ছেলে পড়ছে স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণিতে। 

সন্তানদের পড়ালেখার খরচ চালিয়েও নারগিস খাতুন কিছু টাকা জমিয়ে কয়েক শতক জমি বন্ধক নিয়ে চাষ করছেন। সেই জমির উৎপাদিত ফসল দিয়ে তাদের সংসারের চাকা ঘুরতে ঘুরতে যেন সফলতার গল্পই শুনিয়ে চলেছেন। পূর্বের চেয়ে তিনি এখন আর্থিকভাবে অনেকটাই স্বচ্ছল। নারগিসের এই ঘুরে দাঁড়াবার প্রচেষ্টা যেকোন অসহায় নারীর নিকট দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। 
নারগিস খাতুন জানান, আমার জীবনের উপর দিয়ে যে ঝড় গেছে, যে অত্যাচার সহ্য করেছি তার কথা মনে হলে এখনও শিউরে উঠি। কিন্তু আমি কখনো দমে যাইনি। বাঁচার জন্যে ক্ষুদ্র কাজও করেছি। এমনি করে আজ আমি অনেকটাই সফল। 

কাজিপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা চিত্রা রাণী সাহা জানান, নারগিসের ঘুরে দাঁড়াবার গল্প যে কোন নারীর জন্যে অনুকরণীয় হতে পারে। তার সবকিছু জেনে তাকে ‘নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছেন যে নারী’ ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে।  

কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার  সোহরাব হোসেন জানান, নারগিস একজন সাহসী নারী। তিনি অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও দমে যাননি। এরকম নারগিসদের সম্মান জানাতে আমরা তাকে জয়িতা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে পাশে থাকার প্রত্যয় করেছি। 



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS