ভিডিও

মাদকে সয়লাব বগুড়া, গড়ে তোলা হচ্ছে মজুদ

প্রকাশিত: অক্টোবর ০৩, ২০২৪, ০৯:৫৮ রাত
আপডেট: অক্টোবর ০৪, ২০২৪, ০৪:৪৮ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

স্টাফ রিপোর্টার : মাদকে সয়লাব বগুড়া। হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা, ট্যাপেন্টাডল, মদ, গাঁজা, হেরোইন ও ফেনসিডিলসহ সব ধরণের মাদক। আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে কারবারিরা মাদকের মজুদ গড়ে তুলছে। শহরের ২০টির বেশি স্পটে মাদকের কারবার চলছে। এছাড়া অনলাইনেও মাদক কেনাবেচা হচ্ছে। মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে পড়েছে কিশোর-যুবা। এমনকি শিক্ষার্থীরও মাদকের নেশায় নীল হয়ে অকালেই ঝড়ে পড়ছে। কিন্তু মাদককারবারিদের বিরুদ্ধে পুলিশের তেমন জোড়ালো অভিযান নেই। এই সুযোগে মাদককারবারিরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শহরের অন্যতম মাদকের ঘাঁটি সেউজগাড়ী ও চকসুত্রাপুরের হাড্ডিপট্টি। সেউজগাড়ী এলাকায় মোট চারটি স্পটে মাদকের কারবার চলে। এর মধ্যে সেউজগাড়ী আমতলা মোড়ে রেলওয়ের বস্তিতে দু’টি স্পটে ইয়াবা, ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট ও গাঁজা প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সেউজগাড়ী পালপাড়ায় একটি স্পটে ফেনসিডিল বিক্রি হচ্ছে। একই সাথে সেউজগাড়ী রেলওয়ে মাঠের কাছে আরও একটি স্পটে ইয়াবা ও  গাঁজা বিক্রি হয়। এসব স্থানে পুলিশের তেমন অভিযান নেই বললেই চলে। তবে কয়েকদিন আগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা সেউজগাড়ী পালপাড়ায় একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১২৫ বোতল ফেনসিডিলসহ তাসলিমা ও তার ছেলেকে গ্রেপ্তার করে। তারপরও সেউজগাড়ী এলাকার চারটি স্পটে মাদকের কারবার থেমে নেই। 
তবে সেউজগাড়ীসহ বগুড়া পৌরসভার ৮নম্বর ওয়ার্ডে মাদক নির্মূল করতে মাঠে নেমেছেন স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর মো. এরশাদুল বারী এরশাদ। ইতোমধ্যে তিনি কয়েকটি মাদক আস্তানা গুড়িয়ে দিয়েছেন। সেইসাথে মাদকসহ কয়েকজন মাদককারবারিকে আটক করে যৌথবাহিনীর কাছে সোপর্দ করেছেন।
এ ব্যাপারে এরশাদুল বারী এরশাদ বলেন, মাদক এখন সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। মাদক নির্মূলে এলাকাবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে। মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
এদিকে, স্টেশন সড়কে বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন কার্যালয়ের পেছনে সুইপার পট্টির আশেপাশে মাদকের রমরমা বাণিজ্য চলে। সেখানে চোলাই মদ ও গাঁজার কারবার বেশি হচ্ছে। সেখানে তিনটি স্পট ছাড়াও ভ্রাম্যমাণভাবে এসব মাদক বিক্রি হয়ে থাকে। সেই ভোর থেকে রাতভর সেখানে মাদক কেনাবেচা হয়। কয়েকদিন আগে স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর এরশাদুল বারী এরশাদ গাঁজাসহ দুই কারবারিকে আটক করে যৌথ বাহিনীর কাছে সোপর্দ করেন।
বগুড়া শহরের আরও একটি বড় মাদক স্পট চকসুত্রাপুরের হাড্ডিপট্টি। সেখানে তিনটি স্পটে ভ্রাম্যমাণভাবে ইয়াবা, ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট ও গাঁজাসহ সব ধরণের মাদক বিক্রি হচ্ছে। প্রকাশ্যেই এসব মাদক কেনাবেচা হলেও পুলিশের তেমন অভিযান নেই। এছাড়া হাড্ডিপট্টির অদূরে চকসুত্রাপুর সুইপার পট্টির আশেপাশে চোলাই মদ বিক্রি হয়। বছর দু’য়েক আগে মদের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে সেখানে ছুরিকাঘাতে এক যুবক নিহত হয়। এছাড়া আরও এক যুবক ছুরিকাঘাতে আহত হয়। তবুও মদ কেনাবেচা থেমে নেই।
এছাড়া পুরান বগুড়ায় দু’টি স্পটে, উত্তর চেলোপাড়ায় দু’টি, সুলতানগঞ্জ পাড়ায় একটি, ঘোনপাড়ায় একটি, বাদুড়তলায় একটি, কাটনারপাড়ায় একটি, বৃন্দাবনপাড়ায় একটি, ফুলবাড়িতে দু’টি, মালগ্রামে একটি, নারুলিতে একটি ও ২১নং ওয়ার্ডের বাইপাসসংলগ্ন এলাকার একটি স্পটে ইয়াবা, ট্যাপেন্টাডল ট্যাবেলট ও গাঁজাসহ সব ধরণের মাদকদ্রব্য বিক্রি হচ্ছে।
স্পটগুলো ছাড়াও অনলাইনে বিভিন্ন ধরণের মাদক কেনাবেচা হচ্ছে। মুঠোফোনে অর্ডার পাওয়ার সাথে সাথে কারবারিরা বাড়ি গিয়ে সেবনকারিদের কাছে মাদক পৌঁছে দিচ্ছে। মোটর সাইকেলে করে ভ্রাম্যমাণভাবেও ইয়াবা, ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট, গাঁজা ও হেরোইন পৌঁছে দেওয়া হয়ে থাকে। 
এদিকে, শুধু শহরেই নয়, গ্রামে গ্রামে হানা দিয়েছে মাদক। বগুড়া সদর ছাড়াও শাজাহানপুর, কাহালু, নন্দীগ্রাম, আদমদিঘী, দুপচাঁচিয়া, শিবগঞ্জ, গাবতলী, সোনাতলা ও সারিয়াকান্দি, শেরপুর ও ধুনট উপজেলার গ্রামে গ্রামে, বন্দরে বন্দরে মাদকের রমরমা বাণিজ্য চলছে। পাশাপাশি বাড়ছে মাদকসেবির সংখ্যাও।
আসন্ন দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে কারবারিরা মদসহ সব ধরণের মাদকের চাহিদা মেটাতে মজুদ গড়ে তুলছে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষ্যে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মাদক নিয়ন্ত্রণ বিষয়েও আলোচনা করা হয়। সভায় পূজা চলাকালে আশেপাশে মাদক, হাউজি ও জুয়ার আসর বসতে না পারে সেজন্য আইনশৃংখলা  রক্ষাকারী বাহিনী ও  স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। সেইসাথে পূজায় সকল প্রকার লাইসেন্সপ্রাপ্ত মাদকের দোকানে পারমিট ছাড়া কেউ যেন মাদক কেনাবেচা করতে না পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া নবমী ও দশমীর তিনদিন আগে থেকেই মাদকের কেনাবেচা বন্ধ করতে বলা হয়েছে।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া ও ট্রাফিক) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, মাদককারবারিদের বিরুদ্ধে পুলিশেন অভিযান জোরদার করা হয়েছে। সেইসাথে মাদকের বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলমান রয়েছে। মাদক নির্মূলে জনগণের সহযোগিতা প্রয়োজন। জনগণের সহযোগিতা পেলে পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযানের গতি আরও বাড়বে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বগুড়া কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রাজিউর রহমান বলেন, মাদক নির্মূলে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। মাদক বিক্রেতা ও সেবনকারিদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রায়ই মাদকসহ কারবারিদের গ্রেপ্তারও করা হচ্ছে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS