ভিডিও

প্রাথমিকে ফের বৃত্তি পরীক্ষা চালু হোক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪, ১১:২৭ রাত
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪, ১১:২৭ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

মৃৎশিল্প তৈরির আগে মাটিকে মৃৎশিল্পের উপযোগী করে নিতে হয় তারপর একটা ছাঁচে পরিণত করতে হয়। তেমনি একজন শিশুর আত্ম-উন্নয়নে শৈশব ও কৈশোর থেকে বাড়তি নজর রাখতে হয়। পড়াশোনা, খেলাধুলা ও চলাফেরায় ইতিবাচক প্রতিযোগিতা রাখতে হয়। ইতিবাচক প্রতিযোগিতা শিশুর মানসিক বিকাশ করে। তন্মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা একটি ইতিবাচক প্রতিযোগিতা। কিন্তু কয়েক বছর থেকে পঞ্চম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।

শিশুদের ইতিবাচক প্রতিযোগিতাকে দৃষ্টিপাত করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফের বৃত্তি পরীক্ষা চালু করা হোক। যখন একটি শিশু  বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে তখন তার পড়াশোনার প্রতি মনোবল দ্বিগুণ হারে বেড়ে যায়। নিজের প্রতি একটা বোধ তৈরি হয় "আমাকেও পারতে হবে"।

শিশুরা তাদের রোল মডেল কে অনুসরণ করে সামনের দিকে চলতে থাকে। যেমন- একটি শিশুকে যদি একটি ফুল কিংবা ফলের ছবি এঁকে দেই এবং অনুরূপ একটা আঁকতে বলি তাহলে সে সহজেই তা আঁকতে পারবে কারণ তার সামনে একটি রোল মডেল থাকবে। তেমনি তার স্কুলে অথবা বাসায় যদি সাফল্যের রোল মডেল থাকে তাকেও শিশু সহজে অনুসরণ করে চলবে।

ইতিবাচক প্রতিযোগিতা শিশুকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করে। ঝধহ ফবৎ াবহ ফবৎ ষরহফবহ এর মতে, "প্রতিযোগিতা মানুষের অনুপ্রেরণার প্রধান উৎস, প্রতিযোগিতা শেষ হলে তারা আর অনুপ্রেরণা পায় না"।

আমরা সবাই জানি শিশুদের মন থাকে সাদা কাগজের ন্যায়। সাদা কাগজে চাইলেই যেমন যেকোন কিছু আর্ট করা যায় এবং সহজে তা ফুটে উঠে তেমনি শিশুকে শৈশব ও  কৈশোরে যা শেখানো হবে তা পরবর্তী জীবনে লালন করবে। শিশুর প্রথম জীবনের সামাজিকীকরণ সঠিক হলে পরবর্তী সময়ে বিরাট প্রভাব রাখবে।

শিশুরা অনুকরণ প্রিয়। যখন আশেপাশের সাফল্য দেখে ঠিক সেভাবে নিজেকেও কল্পনা করে এবং কল্পনা কে বাস্তবে প্রস্ফূটিত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টায় রত হয়। সাফল্যের স্বাদ পেয়ে গেলে আনন্দিত হয় অথবা ব্যর্থ হলেও নিজেকে শুধরে নিতে পারে। তাছাড়া শিশুরা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আত্ম-সমালোচনা করার সুযোগ পায়। আত্ম-সমালোচনা শিশুর মনস্তাত্ত্বিক বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রাখে। তখন নিজের ভালো-মন্দ, সঠিক-ভুল  অনুধাবন করতে পারে।

বৃত্তি পরীক্ষা ঘিরে কত শত স্মৃতি জমা থাকে পরতে পরতে। বইয়ের সাথে নতুন বইয়ের সংযোজন, জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সাহস শিশুর মনোবল বৃদ্ধি করে, নতুন নতুন নিয়ম শৃঙ্খলা শেখায়, সময়ানুবর্তিতা ইত্যাদি অভিজ্ঞতার সঞ্চয় হয়। এছাড়াও সাফল্যের পরবর্তী সবার অনুপ্রেরণা সামনের দিকে অগ্রসর হতে সাহায্য করে। শৈশবের আবেগঘন এমন স্মৃতিগুলো শিশু মনে অঙ্কিত থাকে।

অনেকেই পঞ্চম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষার নেতিবাচক দিক সম্পর্কে আলোকপাত করে বলবে ইহা শিশুর মনে চাপ ফেলবে, শিশুর জন্য বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে। কিন্তু আমি মনে করি ইহা তার চেয়েও বেশি  ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে শিশুর মনে যেমন- পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শিখবে, অধিক প্রেসার নিতে সক্ষম হবে, সময়ানুবর্তিতা শৈশব থেকে রপ্ত হবে, আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে, উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে অভিযোজন করতে পারবে।

সর্বোপরি, শিশুর মনোবৃত্তি বিকাশে সহায়তা করবে। হাজারো নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির ভিড়ে পঞ্চম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা শিক্ষার্থীর জন্য ইতিবাচক হোক। আমরা নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা বর্জন করে ইতিবাচক ভাবনা শুরু করি। শিক্ষার্থীর মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ বা সঠিক সামাজিকীকরণের কথা ভেবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃত্তি পরীক্ষা আবার শুরু হোক-এই প্রত্যাশা। সঠিক সামাজিকীকরণে শিশুর জীবন হোক পুষ্পের মতো কোমল ও সুবাসিত।


লেখক শিক্ষার্থী : বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS