ভিডিও

জলাতঙ্কে মৃত্যুর সংখ্যা কমলেও উদ্বেগজনকহারে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৪, ১০:০৫ রাত
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪, ০৯:৪৪ সকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

হাফিজা বিনা : অনেক দিন হলো একটা বিড়ালের জন্য মায়ের কাছে আবদার করে আসছিল একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রেরণা। মা কিছুতেই রাজি হননি। আর তাই মাঝে মাঝেই বাড়ির গেটের বাইরে থেকে দেশি বিড়ালের বাচ্চাদের  ডেকে  ডেকে খাবার দেয় চুপি চুপি।

এমনি করেই একদিন খাবার খাওয়ানোর জন্য কাছে ডাকতেই হাতে আঁচড় দিয়ে বসে বিড়ালটি। প্রথমদিন ভয়ে মাকে আর বলেনি সে। কিন্তু  ইন্টারনেট সার্চ করে প্রেরণা জানাতে পারে বিড়ালের আঁচড়েও জলাতঙ্ক রোগ হয় এবং এর  প্রকাশ পেলে আক্রান্ত ব্যক্তি বাঁচে না।

তখন সে মায়ের কাছে গিয়ে বলে তাকে বিড়াল আঁচড় দিয়েছে। মা প্রথমে একটু রাগারাগি করলেও পরে তাকে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্রে গিয়ে জলাতঙ্ক প্রতিরোধের ১ম ডোজের টিকা দিয়ে আসেন। এরপর আরও দুটি টিকা দিতে হয়েছে। তার মত প্রতিদিন কুকুর-বিড়াল ছাড়াও অন্যান্য প্রাণির কামড়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে উদ্বেগজনকভাবে।

বগুড়ায় কুকুরের পাশাপাশি বিড়াল ও অন্যান্য প্রাণির কামড়ের রোগীর সংখ্যা বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। কুকুরের ভ্যাকসিন বন্ধ থাকায় পাড়া মহল্লায় দলবেঁধে ঘুরে বেড়ানো কুকুরের দল পথচারীদের  কামড়ে দিচ্ছে। এর মধ্যে ১৫ বছর বয়সের চেয়ে কম বয়সি কিশোর-কিশোরীর হার শতকরা ৪০ ভাগের বেশি।

বিশ্বে এ রোগে এখনও প্রতি মিনিটে ৯ জন এবং বছরে ৫৯ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। মৃত্যুর হারও কমেছে ৭০ শতাংশ। যদিও সরকারের টিকা কার্যক্রমের গতি বাড়ানোর ফলে জলাতঙ্কের মৃত্যুর সংখ্যা আগের তুলনায়  কমলেও  গত পাঁচ বছরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমেনি বরং বেড়েছে।

বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল সূত্র দৈনিক করতোয়া‘কে জানায়, বগুড়াসহ আশেপাশের জেলা  জয়পুরহাট, নওগাঁ, গাইবান্ধা ও সিরাজগঞ্জ জেলা থেকে প্রায় প্রতিদিন ১ থেকে ১২০ জন রোগী এন্টি র‌্যাবিস ভ্যাকসিন নিতে আসেন। এর মধ্যে বেশিরভাগই বিড়ালের আঁচড় ও কামড়ানো রোগী। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে কুকুরে কামড়ানো রোগীর সংখ্যা। এরমধ্যে নতুন রোগী আসেন ৩০ থেকে ৪০ জন।

ভ্যাকসিনের একটি ভ্যায়েল ৪ জন রোগীকে ভাগ করে দেয়া হয়। এভাবে আরও তিন ডোজসহ মোট ৪ ডোজ  ভ্যাকসিন দেয়া হয়। সুত্র জানায়, গতবছরের  অক্টোবর থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত  ৫৭ হাজার ৭শ’ ৯৪ জন কুকুর, বিড়াল ও অন্যান্যা প্রাণির কামড়ের রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে কুকুরে কামড়ানো রোগী ৫ হাজার ৪শ’ ২৭ জন  এবং অন্যান্য প্রাণি  কামড়ানো রোগীর সংখ্যা  ১৫ হাজার ১৩ জন।

গত ১১ মাসে মাসে এই কেন্দ্র থেকে চিকিৎসাসহ টিকা নিয়েছেন ১৫ হাজার ৫৭০ জন। এদের মধ্যে বেশি ক্ষত হওয়া আরআইজি (র‌্যাবিস  ইমিউনোগ্লোবিন) প্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ৫৭৭ জন। আরআইজি’র  ভ্যাকসিনের সংখ্যা  ৬ হাজার ১৭০ টা। এদের বেশিরভাগকে ভ্যাকসিনেশন সেন্টার থেকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে।

এব্যাপারে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের ভ্যাকসিনেশন সেন্টারের সিনিয়র স্টাফ নার্স নিগার সুলতানা জানান, হাসপাতালের কুকুর ও অন্যান্য প্রাণির কামড় দেয়া রোগীদের প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা ১ টা পর্যন্ত চিকিৎসাসেবা ও টিকা কার্যক্রম চালানো হয়। ভ্যাকসিনেশন সেন্টারে  চিকিৎসার  পাশাপাশি বিনামূল্যে  জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা ইনজেকশন অ্যান্টি র‌্যাবিস ভ্যাকসিন (এআরভি) ও কামড়ের ধরণ  অনুযায়ী  ইনজেকশন র‌্যাবিস ইমুনোগ্লোবুলিন (আরআইজি) প্রদান করা হচ্ছে।

তিনি আরও জানান কুকুরের কামড়ে আক্রান্তদের সাথে সাথে অন্যান্য প্রাণির কামড়ানো রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। হাসপাতালে ভ্যাকসিন সরবরাহ স্বাভাবিক আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, ২০১০ সালের আগে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় আড়াই হাজার মানুষ জলাতঙ্কে প্রাণ হারাত। গবাদি প্রাণির মৃত্যুর সঠিক পরিসংখ্যান এখনও অজানা। যার অর্থনৈতিক মূল্য অপরিসীম।

প্রাথমিক অবস্থায় রোগটি সুপ্ত থাকলেও প্রকাশ পেলে জলাতঙ্ক রোগে মৃত্যু অনিবার্য। তবে এর আগে এ রোগ শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য। এদিকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে কুকুর কামড়জনিত জলাতঙ্কমুক্ত বিশ্ব গড়তে হবে।

বৈশ্বিক উদ্যোগের অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশও ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ জলাতঙ্ক রোগ নির্মূল করার লক্ষ্যে জুনোটিক ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম, সিডিসি, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এবং স্থানীয় সরকার বিভাগ সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS