আন্ধা পুস্কুনি
পুকুরের চারপাশে বিশাল বড়ো বড়ো আমগাছ, জামগাছ, গাবগাছ, শেওড়াগাছ, তালগাছসহ আরও অনেক গাছপালা এবং ঝোপঝাড়ে ভরপুর। দিনদুপুরেও পুকুরটি অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে। গাছে গাছে কাক, বক, শালিক, টিয়া, ঘুঘু, বাদুড়, পেঁচাসহ অনেকরকম পাখপাখালির বাস। ঝোপঝাড়ে বাস করে শিয়াল, কুকুর, বাগডাশ ইত্যাদি। সaন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে পাখিদের ঘরে ফেরার সময় তাদের কিচিরমিচির শব্দে কান ঝালাপালা হওয়ার অবস্থা। অবশ্য প্রকৃতি ও পাখি প্রেমিদের কাছে এ এক অসাধারণ দৃশ্য, অনন্য প্রাপ্তি। কারণ আজকাল পশুপাখির এমন অভয়ারণ্য খুঁজে পাওয়া দুস্কর।
পুকুরটির নাম আন্ধা পুস্কুনি। আন্ধা পুস্কুনি বলতে গ্রামের মানুষ অন্ধকার পুকুরকেই বুঝায়। সম্ভবত সবসময় অন্ধকার হয়ে থাকে বলেই এই নামকরণ করা হয়েছে। দূরদূরান্তের লোকজনও এই পুস্কুনির কথা জানে। পুস্কুনি ঘিরে রয়েছে অনেক রকমের ভৌতিক গল্প। কিছু অদ্ভুত বিষয় আজও রহস্যময় হয়ে আছে।
দিনের ঠিক দুপুর বেলা এবং সন্ধ্যা হয় হয় এমন সময় খুব কলিজা ওয়ালা লোকও এই পুকুর পাড়ে যেতে রাজি হয়না। কারণ এই দুই সময় এবং মধ্য রাতে পুকুর এবং পুকুর পাড়ের গাছগাছালিতে ওনাদের খাওয়াদাওয়া, আসর, আড্ডা চলে। দুপুর বেলায় পুষ্কুনির আশপাশ থেকে প্রায়ই পোলাও কোরমার গন্ধ ভেসে আসে। অথচ পুকুরের আশেপাশে কোনো বসতবাড়ি নাই। গ্রামের এক নতুন জামাই একবার ভুল করে ঠিক দুপুর বেলা আন্ধা পুষ্কুনির পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছিলেন আর তখনই ওনারা নতুন জামাইকে ধরে পুকুরে চুবিয়ে তাল গাছের একদম মাথায় নিয়ে বসিয়ে রাখে। দূর থেকে অনেকেই দেখেছে কিন্তু ভয়ে কেউ নতুন জামাইকে উদ্ধার করতে এগিয়ে যায়নি। অবশ্য বিকেলের দিকে ওনারা জামাইকে ছেড়ে দেয়। তখন শ^শুর বাড়ির লোকেরা নতুন জামাইকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে সবাই মিলে গরম পানি দিয়ে ভালো করে গোসল করিয়ে, আগুনে সেকা দিয়ে, হুজুরের পানি পড়া খাইয়ে তারপর ঘরে তুলে। এলাকার লোকজন কখনো ওনাদের (জীন-পরীদের) নাম মুখে উচ্চারণ করেনা, করলে নাকি ওনারা ভীষণ রাগ করেন তাই।
প্রায়ই মাঝরাতে পুষ্কুনির দক্ষিণ-পশ্চিম কোণার শেওড়া গাছের মাথায় অদ্ভুত আলোর দেখা মিলে। হঠাৎ গাছের ডালপালা নড়ে ওঠার শব্দ শোনা যায় কিন্তু কিছুই নড়তে দেখা যায়না। তখন ওনারা খাওয়াদাওয়া করে এবং তাদের কর্ম পরিকল্পনা ঠিক করে।
গা শিউরে ওঠা গোঙ্গানির অদ্ভুদ আওয়াজ বিভিন্ন সময় শুনতে পাওয়া যায়, কখনো আবার অদ্ভুদ হাসির শব্দ। পুষ্কুনির পশ্চিম দিক থেকে মাঝে মাঝে মহিলার কান্নার শব্দ ভেসে আসে কিন্তু কোথাও কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়না। গভীর রাতে পুকুরে কারা যেন দাপিয়ে গোসল করে কিন্তু কিছুই দেখতে পাওয়া যায়না।
এই পুকুরে বিশাল বিশাল মাছ আছে কিন্তু মাছ ধরা তো দূরের কথা ভয়ে কেউ কখনো পুকুরে নামারও সাহস করেনা। এক শনিবার অমাবস্যার রাত, ঘুটঘুটে অন্ধকারে পাশের বাড়ির মুরুব্বি, প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে ঘরের বাইরে গেলে দেখতে পান পুকুরের বিশাল বড়ো বড়ো কয়েকটা মাছ বেয়ে বেয়ে তালগাছে উঠছে, দেখতে দেখতে মাছগুলো বিড়াল হয়ে যায়, তারপর হঠাৎ হাওয়ায় মিশে যায়।
গল্প শুনতে শুনতে তাসফিয়া ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বালিশের তলায় মাথা লুকানোর চেষ্টা করলে নানাভাই খোরশেদ বুঝতে পেরে এখানেই গল্প থামিয়ে তাসফিয়াকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন।
আরও পড়ুন
মন্তব্য করুন