ভিডিও রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

কিশোর অপরাধের সবচেয়ে জঘন্য মামলা : জুনকো ফুরুতা

সংগৃহীত,কিশোর অপরাধের সবচেয়ে জঘন্য মামলা : জুনকো ফুরুতা

জুনকো ফুরুতা ছিল একজন জাপানিজ উচ্চ মাধমিক শিক্ষার্থী, যাকে ১৯৮০'র দশকের শেষের দিকে অপহরণ করে ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যা করা হয়েছিল। তার হত্যা মামলাটিকে বলা হত "concrete-encased high school girl murder case"

জুন্‌কো ফুরুতা। সমবয়সী আর আট-দশটি ছেলেমেয়ের মতো ফুরুতার চোখ জুড়েও খেলা করতো হরেক রকম রঙিন স্বপ্ন। জীবনকে এক সুন্দর ছাঁচে ফেলে গড়ে নেয়ার আকাঙ্ক্ষা তার মনের কোণেও উঁকি দিয়ে যেতো। এভাবে স্বপ্ন দেখতে দেখতেই একসময় ১৭ বছর বয়সে পা রাখে মেয়েটি।  ১৭তম জন্মদিন পালনের মাত্র তিন দিন পরের কথা, তারিখটি ছিলো ১৯৮৮ সালের ২৫ নভেম্বর। 

১৯৮৮ সালের ২৫ নভেম্বর, মিয়ানো এবং মিনাতো স্থানীয় মহিলাদের ছিনতাই এবং ধর্ষণ করার উদ্দেশে মিসাতোর চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। রাত সাড়ে আটটায় তারা দেখল যে ফুরুতা তার চাকরীতে এক শিফট শেষ করার পর তার বাইকে চেপে বাসায় যাচ্ছিল। মিয়ানোর নির্দেশে মিনাতো তার সাইকেল থেকে ফুরুতাকে লাথি মারে এবং ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। কাকতালীয়ভাবে আক্রমণ প্রত্যক্ষ করার ভান করে মিয়ানো ফুরুতার কাছে গিয়ে তার বাড়িতে নিরাপদে হেঁটে হেঁটে পৌঁছে দেয়ার প্রস্তাব দেয়। ফুরুতা, এই প্রস্তাব গ্রহণ করে, কারণ সে জানত না যে মিয়ানো তাকে নিকটবর্তী একটি গুদামে নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে মিয়ানো ইয়াকুজার (একটি স্থানীয় অপরাধ চক্র) সাথে তার জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ করবে। সে তাকে প্রথমে গুদামে ধর্ষণ করে এবং পরে পাশের হোটেলে আবারও ধর্ষণ করে সেই সাথে তাকে হত্যার হুমকি দেয়। হোটেল থেকে মিয়ানো মিনাতো এবং তার অন্যান্য বন্ধুরা, জো ওগুরা এবং ইয়াসুশি ওয়াতানাবেকে ডেকেছিল এবং তাদের কাছে ধর্ষণের বিষয়ে বড়াই করে। ওগুরা আরো বেশি লোকেদেরকে যৌন নির্যাতনের সুযোগ দিতে মিয়ানোকে তাকে (ফুরুতাকে) বন্দী করে রাখতে বলেছিল বলে জানা গেছে। এই গ্রুপটির গণধর্ষণের নজির ছিল এবং সম্প্রতি অন্য একটি মেয়েকে অপহরণ করে এবং ধর্ষণ করে, যাকে তারা পরে ছেড়ে দেয়।

ভোর ৩ টা নাগাদ মিয়ানো ফুরুতাকে কাছের পার্কে নিয়ে যায়, যেখানে মিনাতো, ওগুরা এবং ওয়াতানাবে অপেক্ষা করছিল।তারা তার ব্যাকপ্যাকের একটি নোটবুক থেকে তার বাড়ির ঠিকানা জেনে নেয় এবং তাকে জানায় যে সে (ফুরুতা) কোথায় থাকে তা তারা জানে আর সে যদি পালানোর কোন চেষ্টা করে তবে ইয়াকুজার সদস্যরা তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করবে। ঐ চারটি ছেলে তাকে জোর করে তাকে আদাচি প্রদেশের আইয়াস জেলার একটি বাড়িতে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করেছিল। মিনাতোর বাবা-মা'র মালিকানাধীন এই বাড়িটি শীঘ্রই তাদের নিয়মিত গ্রুপ আড্ডায় পরিণত হয়েছিল।

২৭ নভেম্বরে, ফুরুতার বাবা-মা তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে পুলিশে যোগাযোগ করেছিলেন। তবে তদন্ত যেন আর না আগায় তাই অপহরণকারীরা ফুরুতাকে বাধ্য করে তার মাকে ফোন করে বলতে যে সে পালিয়ে গেছে আর তার কিছু বন্ধুর সাথে নিরাপদেই আছে। তারা ফুরুতাকে দিয়ে পুলিশি তদন্ত বন্ধ করতে বাধ্য করেছিল। যখন মিনাতোর বাবা-মা উপস্থিত ছিলেন, তখন ফুরুতা তার প্রেমিকা হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে বাধ্য হয়েছিল। যখন তারা স্পষ্ট হয়ে গেল যে মিনাতোর বাবা-মা তাদের পুলিশে খবর দেবে না তখন তারা এই অভিনয় বাদ দিল। মিনাতোর পরিবার জানিয়েছিল যে তারা এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়নি কারণ তারা মিয়ানোর ইয়াকুজার সাথে সম্পর্কের বিষয়টি জানত এবং পাল্টা প্রতিশোধের ভয় করত কারণ তাদের নিজেদের ছেলেও তাদের প্রতি ক্রমশ সহিংস হয়ে উঠছিল। মিনাতোর ভাইও পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতেন, তবে তা প্রতিরোধের জন্য কিছুই করেননি।

গ্রুপটি মিনাতোদের বাড়িতে ৪০ দিন ধরে ফুরুতাকে বন্দী করে রেখেছিল, সেখানে তারা বারবার তাকে মারধর, ধর্ষণ ও নির্যাতন করে।তাদের বক্তব্য অনুসারে, চারজন তার যৌনাঙ্গের লোম কামাত আর নগ্ন অবস্থায় গানের তালে তালে নাচতে এবং তাদের সামনে হস্তমৈথুন করতে বাধ্য করত। সেই সাথে মাঝরাতে ছোট পোশাক পরিয়ে তাকে বারান্দায় রেখে দিত। তারা তার যোনি এবং মলদ্বারে দিয়াশলাই, ধাতব রড ও বোতলসহ বিভিন্ন জিনিস ঢুকিয়ে দিত এবং একবারে একাধিক সিগারেট সেবন করতে, রঙয়ে মেশানোর থিনার পান করতে আর প্রচুর পরিমাণে অ্যালকোহল, দুধ ও জল পান করতে বাধ্য করত। একটি ঘটনায় মিয়ানানো বারবার ফুরুতার হাত ও পায়ে দিয়াশলাইয়ের আগুন দিয়ে পোড়াতে লাগল। ডিসেম্বরের শেষে, খুব অল্প পরিমাণ খাবার, যা শেষ পর্যন্ত কেবল দুধে গিয়ে ঠেকেছিল, খাওয়ানোর পরে ফুরুতা মারাত্মকভাবে অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়েছিল। তার গুরুতর জখম এবং সংক্রামিত পোড়ার কারণে, সে নিচের টয়লেটে যেতে পারত না এবং চরম দুর্বল অবস্থায় মিনাতোর ঘরের মেঝেতে আবদ্ধ হয়ে থাকত।

আরও পড়ুন

১৯৮৯ সালের ৪ জানুয়ারী, মাহজংয়ের একটি খেলায় হেরে মিয়ানানো ফুরুতার উপর তার রাগ মেটানোর সিদ্ধান্ত নিল। ওরা তাকে লাথি মারল, ঘুষি মারল, একটি মোমবাতি জ্বালালো এবং তার মুখের উপর গরম মোম ঢালল, দুটি চোখের পাতায় দুটি ছোট মোমবাতি রাখল এবং তাকে নিজের প্রস্রাব পান করতে বাধ্য করল। তাকে লাথি মারার পরে, সে একটি স্টেরিও ইউনিটে পড়ল এবং ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল। যেহেতু তার মারাত্মকভাবে রক্তপাত হচ্ছিল এবং তার সংক্রামিত পোড়া থেকে পুঁজ বেরোচ্ছিল, তাই চারটি ছেলে তাদের হাত প্লাস্টিকের ব্যাগে ঢেকে নিল, যাতে তার পুঁজ তাদের হাতে না লাগে। তারা তাকে মারধর করতে থাকে এবং লোহার অনুশীলনের বলটি বেশ কয়েকবার তার পেটে ফেলে দেয়। তারা তার উরু, বাহু, মুখ এবং পাকস্থলিতে দিয়াশলাইয়ের জ্বালানি ঢেলে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। ফুরুতা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছিল কিন্তু ধীরে ধীরে সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। জানা যায় এই আক্রমণ দু'ঘণ্টা ধরে চলেছিল। ফুরুতা শেষ পর্যন্ত তার প্রতি হওয়া নির্যাতনের কাছে হার মানতে বাধ্য হয় এবং মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে।

তার মৃত্যুর ২৪ ঘন্টার পার হওয়ার আগেই, মিনাতোর ভাই তাকে ফোন করে বলে ফুরুতা মনে হয় মারা গেছে। হত্যার জন্য দণ্ডিত হওয়ার ভয়ে এই গ্রুপটি ফুরুতার দেহটি কম্বলে জড়িয়ে দেয় এবং তাকে ট্র্যাভেল ব্যাগে ঢুকিয়ে দেয়। তারপরে তারা তার দেহটিকে ৫৫০ গ্যালন (২০৮ লিটার) ড্রামে রেখে ভেজা কংক্রিট দিয়ে ভরাট করে। রাত ৮ টা নাগাদ তারা ড্রামটি টোকিওর কোটোতে সিমেন্টের ট্রাকে ফেলে দেয়।


তবে,কিশোর অপরাধীর দোহাই দিয়ে ১৯৯৯ সালের আগস্ট মাসে মাত্র আট বছর জেল খেটেই ছাড়া পেয়ে যায় কামিসাকু। ১৯৯০ সালের জুলাইয়ে নিম্ন আদালত তাদের দলনেতাকে ১৭ বছরের, একজন সহযোগীকে ৪-৬ বছর, একজনকে ৩-৪ বছর এবং আরেকজনকে ৫-১০ বছর মেয়াদী কারাদন্ডাদেশ দেন। এদের মাঝে প্রথম তিনজন এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করে। কিন্তু সেখান থেকে আরো বেশি শাস্তি দেয়া হয় তাদের। এদের মাঝে দলনেতাকে ২০ বছরের কারাদন্ডাদেশ, একজনকে ৫-৯ বছরের (আগে ৪-৬ বছর) এবং অপরজনকে ৫-৭ বছরের (আগে ৩-৪ বছর) কারাদন্ডাদেশ দেয়া হয়। এ রায়ে সন্তুষ্ট হতে পারেন নি ফুরুতার বাবা-মা। তারা আরেকটি মামলা দায়ের করেন অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে। সেই মামলায় তারা জিতে যান। যে বাড়িতে ফুরুতাকে খুন করা হয়েছিলো সেই বাড়ি এবং ক্ষতিপূরণ হিসেবে কিছু অর্থও পান তারা।

খুনীরা সবাই এখন খোলা প্রকৃতির বুকে হাওয়া খেয়েই বেড়ায়। নাম পাল্টে পূর্বের কুকর্মের ইতিহাসকেও অনেকটাই ঢেকে ফেলতে সক্ষম হয়েছে তারা। হিরোশি মিয়ানো হয়েছে হিরোশি ইয়োকোইয়ামা, জো ওগুরা হয়েছে জো কামিসাকু, শিন্‌জি মিনাতো হয়েছে নবুহারু মিনাতো এবং ইয়াসুশি ওয়াতানাবে স্বনামে বহাল তবিয়তে বেঁচে আছে।

এমন একটি লেখার উপসংহার কীভাবে টানতে হয় তা আমার জানা নেই। শুধু সৃষ্টিকর্তা ফুরুতা এবং তার মতো অমানবিকতার শিকার হওয়া অন্যান্যদের জীবন নষ্ট করে দেয়া সেই পশুদের কঠিন শাস্তির মুখোমুখি করুন এ প্রার্থনাই করি।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আন্দোলনে যাচ্ছেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা

রাজশাহীতে নেসকো’র ভৌতিক বিল বন্ধসহ নানা হয়রানির প্রতিবাদে বিক্ষোভ

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শীতকালীন ছুটি, বহিরাগতদের প্রবেশে বিধি-নিষেধ

টাঙ্গাইলে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বাবা-ছেলের মৃত্যু

ছেলের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মায়ের মৃত্যু

বগুড়ার ধুনটে পাট মজুদ করায় ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা: গুদাম সিলগালা