ভিডিও বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারি ২০২৫

রেলক্রসিং নিরাপদ করুন

রেলক্রসিং নিরাপদ করুন। প্রতীকী ছবি

পৃথিবীতে ট্রেনকে সবচেয়ে নিরাপদ যানবাহন ভাবা হয়। একই সঙ্গে ট্রেন ভ্রমণ সাশ্রয়ীও বটে। কিন্তুু বাংলাদেশে চলাচল ব্যবস্থা মোটেই নিরাপদ নয়। হরহামেশা দুর্ঘটনা ঘটছে। আর এসব দুর্ঘটনার প্রধান কারণ অরক্ষিত রেলক্রসিং। সারা দেশে ২ হাজার ৮৭৭ কিলোমিটার রেলপথে ২ হাজার ৫৪২টি রেলক্রসিং আছে। এর মধ্যে ২ হাজার ১৭০টিতে অর্থাৎ ৮৫ শতাংশেরই গেট বা যান নিয়ন্ত্রণ করার কোনো কর্মীও নেই।

বুধবারের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ট্রেন-মাইক্রোর সংঘর্ষের খবর প্রচারিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ফরিদপুরে ট্রেন ও মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে দম্পতি সহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিরা সবাই নিকটাত্মীয়। তাদের মধ্যে তিনজন ঘটনাস্থলে মারা গেছে। বাকি দুজনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসক। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ফরিদপুর সদরের গেরদা এলাকায় রাজবাড়ী-ভাঙ্গা রেলপথের মুন্সিবাজার ক্রসিংয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, মুন্সিবাজার রেলক্রসিং সংলগ্ন রাস্তার দুই পাশে বেশ কয়েকটি দোকান ও গাছপালা আছে।

গেরদার দিক থেকে মুন্সিবাজারের দিকে সড়কটি সোজাসুজি চলে গেছে। তবে দুই পাশে দোকান থাকায় হুইসেল না দেওয়ায় ট্রেন আসা- যাওয়ার বিষয়টি বোঝা যায় না সেভাবে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাইক্রোবাসটি মুন্সিবাজারের দিকে যাচ্ছিল। এটি রেললাইনে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ট্রেন ওই মাইক্রোবাসটি সামনের দিকে প্রায় একশগজ ঠেলে নিয়ে যায়। পরে রেললাইনের পাশে একটি পিলারে ধাক্কা খেয়ে গাড়িটি পূর্ব দিকে একটি খাদে পড়ে যায়। এই রেলক্রসিংটি অরক্ষিত। এখানে কোনো গেট নেই। দোকানের কারণে হুইসেল না দিলে ট্রেন আসছে কিনা বোঝা যায় না। ট্রেনটি পার হওয়ার আগে কোনো হুইসেল দেয়নি।

তবে দুর্ঘটনার পর হুইসেল দিয়েছে। মুন্সিবাজার এলাকার লোকজন বলেন, এই রেলক্রসিং এ মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে। এই সড়কটিও গুরুত্বপূর্ণ। চরভদ্রাসন ও সদরপুর বাসস্ট্যান্ডে যেতে এ সড়কটি ব্যবহার করা হয়। এই রেলক্রসিংয়ে গেট থাকলে ও গেটম্যান থাকলে দুর্ঘটনাটি ঘটত না। আমরা বলতে চাই, এমন ঘটনা এই প্রথম নয়, এর আগেও বিভিন্ন সময়ে অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ের কারণেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া একদিকে অরক্ষিত রেলক্রসিং, অন্যদিকে সুরক্ষিত রেলক্রসিংয়েও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছে বারবার। বলা দরকার রেলওয়ের অনুমতি ছাড়াই যেসব রেললাইনের ওপর দিয়ে অবৈধভাবে যানবাহন ও পথচারী চলাচল করছে, সেখানেও প্রায় প্রতিনিয়ত ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যত দ্রুত সম্ভব সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়া।

আরও পড়ুন

আমাদের রেলপথে এত বেশি সংখ্যক অরক্ষিত রেলক্রসিং, যা বিস্ময়কর, এখানে নেই যান নিয়ন্ত্রণের কোনো কর্মীও। নেই সংকেত বাতি। এ ছাড়া রেললাইনের ওপর দিয়ে স্থানীয় লোকজন অবৈধ রাস্তা নির্মাণ করায় এ হিসাবের বাইরে আরও বিপুল সংখ্যক মরণফাঁদ তৈরি হয়েছে বলেও জানা যায়। আমরাও মনে করি, এই পরিস্থিতি কতটা ভয়ানক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে তা আমলে নেওয়ার বিকল্প থাকতে পারে না।

নানা ধরনের অসচেতনতা, অব্যবস্থাপনা সহ বিভিন্ন কারণে মানুষ চলে যাবে না ফেরার দেশে যা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যে রেললাইনের ওপর দিয়ে প্রতিদিন শত শত যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করে, সেই রেল লাইনে এভাবে অনিরাপদ রাখা কেবল দায়িত্বহীনতা নয়, অমার্জনীয় অপরাধ। দুর্ঘটনার পর প্রতিবারই তদন্ত কমিটি করা হয়।

কমিটি প্রতিবেদনও দাখিল করে। কিন্তু তারপর সবকিছু আগের নিয়মেই চলে। আমরা দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করছি। নিহত ব্যক্তিদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক। আমরা আশা করব এ দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতে যথাযথ সতর্কতা পালন করবে। কারণ, যে কোনো অসতর্কতা বা অবহেলার পরিণতি কি হতে পারে, নানা সময়ে নানা দুর্ঘটনা আমাদের তা দেখিয়ে দিয়েছে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চার দিনের গ্যাস সংকটে পড়তে যাচ্ছে দেশ

নেতাকর্মী গুম-খুনের অভিযোগ নিয়ে ট্রাইব্যুনালে বিএনপি

চট্টগ্রাম আদালত থেকে চুরি হওয়া ৯ বস্তা মামলার নথি উদ্ধার

পাঁচ জেলায় বইছে শৈত্যপ্রবাহ, বাড়তে পারে বিস্তৃতি

সঞ্চয়পত্রে বাড়ছে মুনাফার হার  

টেস্ট ক্রিকেট ইস্যুতে আইসিসিকে একহাত নিলেন সাবেক তারকারা