তিন শর্তে মিলবে পিতৃত্বকালীন ছুটি

মাতৃত্বকালীন ছুটির পাশাপাশি এবার মিলবে পিতৃত্বকালীন ছুটিও। এ ক্ষেত্রে মানতে হবে তিনটি শর্ত। এক. শিশুকে সময় দিতে হবে। দুই. শিশুর যত্ন নেওয়ায় সমান অংশগ্রহণ থাকতে হবে। তিন. প্রসূতির সেবা করতে হবে।
সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত কর্মশালায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘কর্মশালায় অনেকে মাতৃত্বকালীন ছুটির পাশাপাশি পিতৃত্বকালীন ছুটির কথা বলেছেন। আমি জানি না কয়জন মা বললেন পিতা ছুটি নিলে উনার খুব সুবিধা হবে।
নাকি, আবার সকালে নাশতা দিতে হবে, দুপুরের খাবার দিতে হবে। কারণ আমি একজন মা। আমার মনে হয় না পিতৃকালীন ছুটি দরকার আছে।’
তিনি বলেন, ‘যদি দিতে হয় তাহলে সেখানে লিখিত শর্ত থাকবে।
একজন পিতা কতক্ষণ বাচ্চাকে দেখেছেন, বাচ্চার পেট পরিষ্কার করেছেন, মায়ের সেবা করছেন এসব লিখিতভাবে দিতে পারলে আমি রাজি আছি।’
কর্মশালার আয়োজন করে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ। সহযোগিতা করে বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশন (বিবিএফ)। এবারের প্রতিপাদ্য ‘মাতৃদুগ্ধপানকে অগ্রাধিকার দিন, টেকসই সহায়ক পরিবেশ গড়ে তুলুন’।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য শিক্ষার সচিব ডা. সারোয়ার বারী বলেন, ‘আমাদের কর্মজীবী মায়েদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিতে হয়।
শিশুকে দুগ্ধপান করাতে অনেক কষ্ট করতে হয়। ডে কেয়ার নেই। চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণেও ঘাটতি তৈরি হয়েছে। অনেক দেশেই পিতৃত্বকালীন ছুটি আছে। আমরাও চিন্তা-ভাবনা করছি, প্রস্তাবনা কেবিনেটে পাঠানো হয়েছে। অন্তত ৪ সপ্তাহের পিতৃত্বকালীন ছুটির ব্যবস্থা করা যায়।’
অনুষ্ঠানের শুরুতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, বোর্ড অব টাস্টিজ অধ্যাপক ড. এস কে রায়। তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে দেশে মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানোর হার কমছে। ২০১৭-২০১৮ সালে প্রথম ৬ মাস শুধু মায়ের দুধ খাওয়ানোর হার ছিল ৬৫ শতাংশ। সর্বশেষ ২০২২ সালের জরিপের তথ্য বলছে এ হার বর্তমানে ৫৮ শতাংশ।
আরও পড়ুনতিনি বলেন, মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানোর হার কমার পেছনে কারণ হলো, মাতৃদুগ্ধপানের কৌশল ও উপকারিতার ওপর বৃহৎ পরিসরে নিয়মিত কার্যক্রম বাস্তবায়ন না করা; সরকারি-বেসরকারি প্রচারণা মাধ্যমে প্রচার না করা; বিএমএস আইন-২-২৩ ও বিবিমালা ২০১৭ লঙ্ঘনের কারণে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া; এবং কর্মজীবী মায়েরা সীমিতভাবে অথবা একবারে ছুটি না পাওয়া। তিনি আরো বলেন, কর্মস্থলে যোগগদানের জন্য মায়েরা খুব দ্রুত বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করে গুঁড়া দুধ খাওয়ান।
শিশুকে শুধু মায়ের দুধ না খাওয়ালে জন্মের ১ ঘণ্টার মধ্যে ৩১ শতাংশ নবজাতকের মৃত্যু হয়, নিউমোনিয়ার মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১৫ গুণ বৃদ্ধি পায়, ডায়রিয়া মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১১ গুণ বৃদ্ধি প্রায়, শিশুদের অপুষ্টি ও অন্যান্য কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১৪ গুণ বৃদ্ধি পায়।
অধ্যাপক ড. এস কে রায় জানান, প্রতি শিশুর পেছনে বার্ষিক গুঁড় দুধের খরচ হয় প্রায় ৭২ হাজার ৩০৩ টাকা। জাতীয় আমদানি খরচ (২০২৩-২০২৪) প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। ৫৫ শতাংশ শিশু ৬ মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই ফর্মুলা দুধ খায়। হাসপাতালে জন্ম নেওয়া শিশুদের ফর্মুলা দুধ খাওয়ানোর প্রবণতা ২০ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক সারিয়া তাসনিম বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যা ও ইউনিসেফের ২০২২ সালের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৭ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের ৫৭ শতাংশ স্বাস্থ্য পেশাজীবীরা আইন লঙ্ঘন করে অপ্রয়োজনীয়ভাবে শিশুকে গুঁড়াদুধ খাওয়ানো জন্য মায়েদের পরামর্শ দেন।
কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আশরাফী আহমদ বক্তব্য দেন।
মন্তব্য করুন