সালমান শাহ’র সেই চিরকুট এখনো আছে- ববিতা
অভি মঈনুদ্দীন : বাংলাদেশের সিনেমার ইতিহাস সৃষ্টিকারী নায়ক সালমান শাহ। মৃত্যুর এতো বছর পরও সালমান শুধুমাত্র তার দুর্দান্ত অভিনয় এবং ফ্যাশন’এ ভিন্নমাত্রা দিয়েই আজো দর্শকের হৃদয়ে গেঁথে আছেন। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নায়িকা ববিতার সঙ্গে সালমান শাহ তিনটি সিনেমাতে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলেন।
সিনেমাগুলো হচ্ছে বাদল খন্দকারের ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, দীলিপ সোমের ‘মহামিলন’, শিবলী সাদিকের ‘মায়ের অধিকার’ ও জাকির হোসেন রাজুর ‘জীবন সংসার’। দুটি সিনেমাতে সালমানের মায়ের ভূমিকায় এবং দুটি সিনেমায় সালমানের ভাবীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ববিতা। দীলিপ সোমের ‘মহামিলন’ সিনেমার শুটিং-এর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ববিতা বলেন,‘ কক্সবাজারে এই সিনেমার শুটিং হয়েছিলো।
একটি দৃশ্য ধারণ করা হচ্ছিলো পাহাড়ের উপর। আমার হাতে পিস্তল ছিলো। দৃশ্যটিতে শুটিং-এ অংশ নিয়েছিলাম আমি, রাজীব ভাই, শারমিন, সালমান শাহ, শাবনূর। সেই দৃশ্যটির ধারণের নানান সময়ে আমি শুটিং-এ আনা অন্য একটি চেয়ারে বসি। কারণ হোটেল থেকে আমার চেয়ারটি নিতে মনে ছিলোনা। সালমান বিষয়টি খেয়াল করে এবং শুটিং-এ তার নেয়া চেয়ারটি আমাকে গিফট করে। আমি না করার পরও সালমান তার নিজের ব্যবহৃত চেয়ারটি তখনই আমাকে গিফট করে। সেই চেয়ারটি দীর্ঘদিন আমার কাছে সংরক্ষিত ছিলো।
তারপর আবার যখন মোবাইল প্রথম বাজারে এলো। সেই সময় সাইজে মোবাইল অনেক বড় ছিলো। তো আমি সেই মোবাইল ব্যবহার করতে পারতাম না। সালমানই আমাকে একটি চিরকুটে মোবাইল ব্যবহার করার পদ্ধতি প্রথম শিখিয়ে দিয়েছিলো। যে কারণে পরবর্তীতে মোবাইল ব্যবহার করা আমার কাছে বেশ সহজ হয়ে গিয়েছিলো। তো সালমানের নিজের হাতের লেখা সেই চিরকুট’টি এখনো আমার কাছে বেশ যত্নে রাখা আছে। সেই চিরকুটের মাঝেই মাঝে মধ্যে আমাদের হারিয়ে যাওয়া সালমানকে খুঁজে বেড়াই।
আরও পড়ুনসালমান একটি কথা আমাকে প্রায়ই বলতো যে আপনি আমার আপন মা না হলেও আপনি আমার সুইট মা। মা ছাড়া সে আমাকে অন্য কিছুই আর ডাকতোনা। সত্যিই এতোটা বছর পরও তাকে নিয়ে কথা বলতে গেলে আমি ভীষণ আবেগাপ্লুত হয়ে যাই।’ প্রশ্ন রাখি একজন অভিনেতা হিসেবে আপনি সালমানকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? জবাবে ববিতা বলেন,‘ সত্যি বলতে কী সালমান শাহ অনেক বেশি ভালো অভিনেতা ছিলো।
পোশাকে ফ্যাশনে নতুনত্বতো সৃষ্টি করেছিলোই, সেটা সবাই দেখেছেন এবং তার ফ্যাশন এখনো অনেকেই ফলো করেন সাধারণ জীবনেও , শিল্পী জীবনেও। এটা অনেক বড় বিষয়। আর অভিনেতা হিসেবে সালমান নিজেই ছিলো অনন্য।
এমনভাবে সংলাপ বলতো, এমনভাবে এক্সপ্রেশন দিতো এটা বুঝার উপায় থাকতোনা যে অভিনয় নাকী সত্যি। পরিচালকের কাছ থেকে দৃশ্য বুঝে নিয়ে এমনভাবে সংলাপ বলতো যে তার সহশিল্পীর জন্যই সেই অভিনয়ের কাউন্টার দেয়া কঠিন হয়ে যেতো। সালমান সত্যিই অনেক বড় মাপের অভিনেতা ছিলো। তার মতো অভিনেতার অকাল প্রয়াণ সত্যিই আমাদের জন্য অনেক বেদনার, অনেক কষ্টের। এই কষ্টটা আমাদের বয়ে বেড়াতে হবে আরো দীর্ঘদিন। দোয়া করি আল্লাহ যেন তার আত্নায় শান্তি দেন, আল্লাহ যেন তাকে বেহেস্ত নসীব করেন, আমিন।
মন্তব্য করুন