স্টাফ রিপোর্টার : মাদকে সয়লাব বগুড়া। র্যাব, পুলিশ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তররের অভিযান সত্বেও বগুড়ায় থেমে নেই মাদকের কারবার। দিন দিন মাদকের কারবার ও মাদক সেবীর সংখ্যা বাড়ছে। বগুড়া শহরে তো বটেই, গ্রামে-গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে মাদকের কারবার। হাত বাড়ালেই মিলছে নানা ধরণের মাদকদ্রব্য। কোনভাবেই ঠেকানো যাচ্ছেনা মাদকের আগ্রাসন। প্রতিবছর মাদক বিরোধী দিবস আসে,দিবস চলে যায় কিন্তু মাদক পরিস্থিতি পাল্টায় না।
শহরে এখন স্পট কেন্দ্রিক মাদকের কারবারের পাশাপাশি অনলাইনেও মাদক কেনা-বেচা চলছে। অনলাইনে অর্ডার করলে মূহুর্তেই ক্রেতার দোড়গোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে ইয়াবা, ফেনসিডিল,গাঁজা ও মদসহ সব ধরণের মাদক। মোটর সাইকেলে চেপে ভ্রাম্যমানভাবেও মাদক সরবরাহ করা হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে। তবে বগুড়ায় মাদক সেবীর সংখ্যা কত তার পরিসংখ্যান মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর ও বা পুলিশের কাছে নেই। মাদক নিয়ন্ত্রণ নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বগুড়ার উপ- পরিচালক মো; রাজিউর রহমান বলেন, বগুড়া জেলায় মাদক সেবীর সংখ্যা ৫০ হাজারেরও বেশি হতে পারে। এর মধ্যে মাাদক সেবীদের একটি বড় অংশ শহরে বাস করে। এছাড়া তাদের তালিকাভুক্ত মাদক কারবারির সংখ্যা ২ শতাধিক।
এর মধ্যে ৭০ জন বড় মাদক কারবারির নাম রয়েছে। তালিকা ধরে অভিযান চালিয়ে মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তিনি বলেন মাদক নির্মূলে জনগণকে এগ্রিয়ে আসতে হবে। মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মাদক সেবীদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ কিশোরও তরুণ।
তারা মাদকের বিষে বিষে নীল হয়ে যাচ্ছে। নেশা থেকে তারা অপরাধ জগতে পা বাড়াচ্ছে। যুক্ত হচ্ছে চুরি-ছিনতাই থেকে শুরু করে সব ধরণের অপরাধে। মাদকাসক্ত সন্তানদেন নিয়ে দেখা দিয়েছে ঘরে ঘরে অশান্তি। অভিভাবকরা এ সব সন্তানদের কাছে হয়ে পড়েছেন জিম্মি। নেশার টাকা না দিলেই বাড়িতে অত্যাচার করছে, আসবাব পত্র ভাংচুর করাসহ মা-বাবাকে মারপিট করছে। নেশার টাকা না পেয়ে কেউ কেউ আত্মহত্যাও করে থাকে। তবে মাদকসেবীদের চিকিৎসা তেমন ব্যবস্থা নেই বগুড়ায়। যে সব মাদক নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে তার ৯০ শতাংশই মানহীন। আবার সে সব মান সম্পন্ন নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে সেগুলো ব্যয়বহুল। এসব কেন্দ্রে একজন মাদক সেবীর চিকিসা পেতে সহলে ব্যয় হয় মাসে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। তাই মাদক সেবীরা টাকার অভাবে ভালো কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে পারেনা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বগুড়া শহরের চকসুত্রাপুর হাড্ডিপট্টি, সেউজগাড়ী, স্টেশন সড়কে সুইপার কলোনীতে,পুরান বগুড়া মধ্যপাড়া, মালগ্রমে, চক সুত্রাপুর সুইপার কলোনী,কসাইপাড়া, নামাপাড়া, চাপড়পাড়া, হাট্টিপট্টি, সওদাগড়পাড়া, সুলতানগঞ্জপাড়া ঈদগাহ লেন, ঘোনপাড়া, হাকির মোড়, নামাজগড় ট্রাক স্ট্যান্ড জহুরুল নগর ব্যাংকপাড়া, নামাজগড়, ফুলবাড়ি, বাদুড়তলা, কলোনী, বৃন্দাবনপাড়ায়, উপ-শহর,উত্তর চেলোপাড়া সান্দারপট্টিসহ বিভিন্ন স্পটে প্রকাশ্যে ইয়াবা, গাঁজা হেরোইন ও ফেনসিডিলের কারবার চলছে।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়,পুরান বগুড়া, জিলাদারপাড়া,মধ্যপাড়া, মোল্লাপাড়া, ফকিরপাড়া, সেউজগাড়ী আমতলা এলাকায় রেল বস্তি, সেউজগাড়ী রেলওয়ে ঈদগাহ মাঠের আশেপাশে, বগুড়া পৌর পার্কের পিছনে সুইপার পট্টি কাছে, মালগ্রাম উত্তর ও দক্ষিন পাড়া, উত্তর চেলোপাড়া সন্দারপট্টি, রেল লাইন বস্তি, বাদুড়তলা, উপ শহর, বৃন্দাবনপাড়া,ফুলবাড়ি মধ্যপাড়া, কলোনী, নাটাইপাড়া ও মালতিনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় জমজমাটভাবে চলছে মাদক ব্যবসা। সেই সাথে শিবগঞ্জ, শেরপুর, ধুনট, নন্দীগ্রাম, কাহালু, দুপচাঁচিয়া, শাজাহানপুর, সোনাতলা, সারিয়াকান্দি, আদমদিঘী, গাবতলী, সান্তাহার, মোকামতলা, কিচক, মহাস্থান এলাকার গ্রামে গ্রামে গাঁজা, ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরণের মাদকের কারবার চলছে। এসব স্পটে পুলিশ আসে,পুলিশ যায়, পুলিশ গ্রেফতারও করে। কিন্তু মাদক ব্যবসা থেমে নেই।
মাদকে নেশায় পড়ে যুব ও তরুণ সমাজ ধংস হয়ে গেলেও মাদকের আগ্রাসন চলছেই। সেইসাথে সীমান্ত এলাকার ফাঁক ফোঁকর গলিয়েও বগুড়ায় ঢুকছে ইয়াবা ও ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরণের মাদক। পণ্যবাহি ট্রাক ও এমনটি আ্যম্বুলেসসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বগুড়ায় মাদক আনা হচ্ছে। ‘বডি ফিটিং’ এর মাধ্যমেও অভিনব কায়দায় সীমান্ত থেকে বগুড়ায় আনা হচ্ছে মাদকের চালান। প্রায়ই দু’একটি মাদকের চালান বগুড়ায় আইন শৃখংলা বাহিনীর হাতে ধরাও পড়ছে। ধরা পড়ার পর জানা যাচ্ছে মাদক আনার অভিনব এই কৌশল।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো: শরাফত ইসলাম বলেন, মাদক নির্মূলে পুলিশ জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহন করেছে। প্রতিদিনই মাদক স্পটগুলোতে অভিযান চলছে। প্রায়ই পুলিশের হাতে মাদকসহ ধরাও পড়ছে মাদক কারবারিরা। তিনি বলেন, পুলিশের মাদক বিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।