ভিডিও বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

গ্যাস ‘লিকেজ’ থেকে আগুন

গ্যাস ‘লিকেজ’ থেকে আগুন

কোনোভাবেই যেন রোধ হচ্ছে না বিস্ফোরণ অগ্নিকান্ডের মতো ভয়ানক ঘটনা। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হোক আর ঘরের ভেতর রান্নার গ্যাস জমে হোক গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ সংক্রান্ত সব ঘটনাগুলো আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে সর্বাত্মক উদ্যোগ নিশ্চিত করা অপরিহার্য।

গ্যাস ছাড়া এখন সাংসারিক জীবন কল্পনা করা যায় না। গ্যাসের সংকট দেখা দিলে রীতিমতো হাহাকার শুরু হয়ে যায়। মানুষ প্রতিবাদ করে। একইভাবে যানবাহন সহ গ্যাসের ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। সিএনজি স্টেশনগুলোতে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখলেই তা কিছুটা অনুমান করা যায়। পাশাপাশি গ্যাসের অনিরাপদ ব্যবহারও ক্রমেই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জ্বালানি হিসেবে গ্যাসের ব্যবহার সারা দুনিয়ায় রয়েছে। উন্নত বিশ্বে মাথাপিছু গ্যাসের ব্যবহার আমাদের তুলনায় অনেক বেশি, কিন্তু দুর্ঘটনার হার খুবই কম। তার কারণ সেসব দেশে গ্যাস ব্যবহারের নির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে এবং সেই নীতিমালা যাতে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলা হয় সে ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় তদারকি রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের দেশে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই বললেই চলে।

বিভিন্ন সময়ে পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, বিভিন্ন স্থানে প্লাস্টিকের পাইপ দিয়েও অবৈধ সংযোগ নেওয়া হয়। প্রায়ই এসব সংযোগ থেকে দুর্ঘটনা ঘটছে। গাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার লাগানোর ক্ষেত্রেও রয়েছে ব্যাপক অনিয়ম। সিলিন্ডার মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও সেগুলো বদলানো হয় না। পাঁচ বছর পর পর ফের সিলিন্ডার পরীক্ষা করার নিয়ম থাকলেও প্রায় কেউই তা করে না।

এসব ক্ষেত্রে সবাই যাতে নিয়ম মেনে চলে বা চলতে বাধ্য হয়, তার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে গাড়িতে সিলিন্ডার পুন:পরীক্ষায় স্টিকার লাগানো বাধ্যতামূলক করতে হবে। স্টিকার ছাড়া কোনো গাড়িতে গ্যাস দেওয়া হবে না, এ রকম নিয়ম থাকলে অনেক দুর্ঘটনা এড়ানো যেতো।

বাসাবাড়ি সহ বিভিন্ন ভবনে তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ব্যবহার বেড়েছে। এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, সম্প্রতি রূপগঞ্জের এক দুর্ঘটনায় আঁচ করা যায়। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ডহরগাঁও এলাকায় এক বাসায় জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণ থেকে আগুন লেগে নারী ও শিশুসহ এক পরিবারের ৬ জন দগ্ধ হয়েছে। তথ্য মতে শুক্রবার রাতে এ ঘটনার পর দগ্ধদের হাসপাতালেও ভর্তি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

আমরা জানি দাহ্য জনিত বিস্ফোরণে কী ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি হয়। সম্প্রতি রাজধানীর সিদ্দিক বাজারের একটি ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণে অন্তত ২১ জন নিহত ও দেড় শতাধিক মানুষ আহত হয়। ২২ সালের মাঝামাঝি চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে রাসায়নিক বিস্ফোরণজনিত কারণে প্রাণ হারিয়েছিলেন অর্ধ শতাধিক মানুষ। একই ধরনের বিস্ফোরণজনিত আগুনে ২০১০ সালে রাজধানীর নিমতলীতে শিশুসহ ১২৪ জন প্রাণ হারান।

নিমতলীকান্ডের ৯ বছর পর এর অদূরে চকবাজারের চুড়িহাট্টায় একইরূপ আগুনে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৭১  জন। আবার চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির রেশ না কাটতেই নারায়ণগঞ্জে হাসেম ফুডস নামক কারখানায় অবৈধভাবে স্তুপীকৃত রাসায়নিকের আগুনে ৫১ শ্রমিক অঙ্গার হয়ে যান। আমাদের স্মরণে রয়েছে, উপরোক্ত প্রতিটা অগ্নিকান্ডের পর সরকার জনবসতিপূর্ণ এলাকায় রাসায়নিকের কারবার নিষিদ্ধ, তৎসাথে সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা নির্দেশনা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণু প্রদর্শনের অঙ্গিকার করা হয়েছিল।

কিন্তু সীতাকুন্ডে মাত্র ৯ মাসের ব্যবধানে দুটি প্রাণঘাতী রাসায়নিক বিস্ফোরণ ওই সকল অঙ্গীকারকে নিছক বাগাড়ম্বর প্রমাণ করে। জানা গেছে, প্রতি বছর দেশে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনা ঘটছে ৯ লাখের ওপরে। দু:খজনক হলো, এরপরও সুরক্ষা নিশ্চিতে যত্নবান হচ্ছে না সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। সচেতন হচ্ছেন না ব্যবহারকারীরাও।

আমরা বলতে চাই, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হোক আর ‘ঘরের ভেতর রান্নার গ্যাস জমে’ হোক গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ সংক্রান্ত সব ঘটনাগুলো আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে সর্বাত্মক উদ্যোগ নিশ্চিত করা অপরিহার্য।

একই সঙ্গে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের প্রত্যেকটি ঘটনা পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনগুলো পর্যবেক্ষণ করতে হবে। পাশাপাশি অবৈধ গ্যাস সংযোগের ক্ষেত্রেও ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। গ্রাহক ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে গ্যাস ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা ও সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে। গ্যাস বিস্ফোরণ জনিত দুর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক- এমনটি কাম্য।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বগুড়ার সারিয়াকান্দির চরাঞ্চলে জমির দখল নিয়ে সংঘর্ষ বাড়ছে

ডা . শামীমার বড় বোন রঞ্জনার ইন্তেকাল

বগুড়ার বাজার: সবজিতে স্বস্তি, সরবরাহ সংকট সয়াবিনের 

পাখিদের গ্রাম ‘পুন্ডুরিয়া’

এসবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড এর ৫৬তম বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত

নসরুল হা‌মিদসহ পরিবারের তিনজনের বিরু‌দ্ধে ৩ মামলা