আজ ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবস
নিউজ ডেস্ক: গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে নূর হোসেন একটি অবিস্মরণীয় নাম। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর বুকে পিঠে ’গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’ স্লোগান লিখে তিনি রাজপথে নেমেছিলেন। গণতন্ত্রের দাবিতে সোচ্চার স্বৈরাচারের বুলেট বুকে বরণ করে নিয়েছিলেন নূর হোসেন।
গণতন্ত্রের জন্য নূর হোসেনের প্রাণ দেওয়ার তিন যুগ পরও গণতন্ত্রকামী মানুষকে রাস্তায় নামতে হয়েছে। সহস্র প্রাণের বিনিময়ে আরেক স্বৈরশাসনের অবসান ঘটাতে হয়েছে।
ঢাকার নারিন্দায় এক অটোরিকশাচালকের ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন নূর হোসেন। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া শেষে নূর হোসেন গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ নেন।
জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখন ১৯৮৭ সালের এই দিনে নূর হোসেন বুকে ও পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ স্লোগান লিখে রাজপথে বের হয়েছিলেন। সেদিন পল্টন এলাকার ‘জিরো পয়েন্ট’ অতিক্রম করার সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছুড়ে মিছিলটিকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখন নূর হোসেনসহ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
নূর হোসেনের সেদিনের আত্মত্যাগ মানুষের মনকে নাড়া দিয়েছিল। বুকে-পিঠের স্লোগানসংবলিত তার শরীর হয়ে উঠেছিল আন্দোলনের প্রতীক। ওই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আরও রক্তপাতের মধ্য দিয়ে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সরকারের পতন ঘটে। নূর হোসেন শহীদ হওয়ার পর মাস না পেরোতেই ৬ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন এরশাদ। এর তিন মাস পর তিনি জাতীয় সংসদের আরেকটি নির্বাচনের আয়োজন করেন। ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে বড় দলগুলো না নেওয়ায় ওই সংসদ রাজনৈতিক বৈধতা পায়নি।
এরশাদ এরপরও ক্ষমতায় টিকে ছিলেন পৌনে তিন বছর। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর তার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে ঘটনাবহুল একটি দশক শেষ হয়। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দল অংশ নেয়। বিএনপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করে। যে জায়গাটিতে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন নূর হোসেন, সেই জিরো পয়েন্ট এখন শহীদ নূর হোসেন চত্বর।
আরও পড়ুনবিএনপি দিনটি পালন করে ‘ঐতিহাসিক ১০ নভেম্বর দিবস’ হিসেবে।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সেভাবে প্রকাশ্যে কোনো কর্মসূচি পালন করছে না। তবে নূর হোসেন দিবস উপলক্ষ্যে আজ বিকেল তিনটায় গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে নেতা-কর্মীদের জড়ো হয়ে মিছিল করার আহ্বান জানিয়েছে দলটি। আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়ে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
তবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক ফেসবুক পোস্টে আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিস্ট আখ্যা দিয়ে লিখেছেন, তারা আজ কোনো জমায়েত বা মিছিল করার চেষ্টা করলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কঠোর অবস্থানের মুখোমুখি হতে হবে।
অন্যদিকে ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ মঞ্চের ব্যানারে আজ দুপুর ১২টায় গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে কর্মসূচি দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কর্মসূচির শিরোনাম পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে গণজমায়েত।
মন্তব্য করুন