নাটোরের গুরুদাসপুরে কামলার হাট যেখানে দর-কষাকষি করে বিক্রি হয় শ্রম
নাজমুল হাসান, গুরুদাসপুর (নাটোর) : নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বুক চিরে বয়ে গেছে বনপাড়া হাটিকুমড়ুল মহাসড়ক। মহাসড়কের দুইপাশের মাঠে শুরু হয়েছে শত শত বিঘা জমিতে বিনা চাষে রসুন রোপণ ও ধান কাটা। আর এসকল কাজের জন্য ভোরের আলো ফোটার আগেই জীবিকার জন্য কাজ খুঁজতে আসা মানুষের আনাগোনায় মুখরিত হতে শুরু করে নয়াবাজার ‘শ্রমিক হাট’।
প্রতিদিন শিশির ভেজা ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নে অবস্থিত নয়াবাজারে এই হাট বসে। এখানে পণ্যের মত নিজেদের সারাদিনের শ্রম কেনাবেচা হয় দর-কষাকষি করে। গতকাল বুধবার ভোর ৫টায় নয়াবাজার শ্রমিক হাটে গিয়ে দেখা যায়, ছোট ছোট ট্রাক, লেগুনা, সিএনজি, অটোযোগে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলা থেকে হাজার হাজার শ্রমিক নয়াবাজার শ্রমিক হাটে শ্রম বিক্রি করতে এসেছেন।
পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি দেখা যায় নারী শ্রমিকদেরও। এই হাটে শ্রমিকরা যেমন শ্রম বিক্রি করতে আসেন, ঠিক তেমন ভাবে শ্রম কিনতেও আসেন স্থানীয় গৃহস্থরা। মহাসড়কের পাশে হাতে কাস্তে ও ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে শ্রম বিক্রির অপেক্ষায় আছেন শ্রমিকরা। সারাদিনের শ্রমের দর-কষাকষি হলেই চলে যাচ্ছেন গৃহস্থদের সাথে। প্রতিটি শ্রমিক সারাদিনের জন্য কেনাবেচা হচ্ছেন ৫শ’-৬শ’ টাকায়।
তবে একই সমান কাজ করলেও নারীদের দেওয়া হচ্ছে ৩৫০-৪শ’ টাকা বলে অভিযোগ আধিবাসী নারী শ্রমিকদের। ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮টার মধ্যেই শ্রমিক হাটে আর শ্রমিক দেখা যায় না। শ্রমিকদের চাহিদা বেশি থাকায় কোন শ্রমিককে বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে না এ বছর। সারাদিন কাজ শেষে সন্ধ্যায় মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান থেকে যানবাহন যোগে বাড়ি ফিরে যায় শ্রমিকরা।
আরও পড়ুনসিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ, সলঙ্গা, মান্নাননগর, উল্লাপাড়াসহ বিভিন্ন স্থান থেকে শ্রমিক হাটে আসা শ্রমিকরা জানান, ভোর ৫টার আগেই বাড়ি থেকে তারা বের হন। সড়ক-মহাসড়কে কোন বাস তারা পান না। এ কারণে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই ট্রাক, সিএনজি, লেগুনা যোগে শ্রমিক হাটে তাদের আসতে হয়। শ্রমিক হওয়ার কারণে কোন বাস তাদেরকে নিতেও চায় না। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই বেশিরভাগ সময় ট্রাক যোগে শ্রমিক হাটে আসতে হয় তাদের।
তাড়াশের আধিবাসী নারী শ্রমিক বেনতী হাজং বলেন, পুরুষরা যখন শ্রমিক হাটে আসে তারাও তখনি আসেন। পুরুষের সমান কাজ করে কখনও বা বেশি কাজ করলেও মজুরি কম পেতে হচ্ছে তাদের। শ্রমিক হাটে সর্বোচ্চ শ্রম বিক্রি করতে পারেন ৩৫০-৪শ’ টাকায়।
এর বেশি কেউ দাম বলে না। অনেক সময় তো পুরুষ শ্রমিক বেশি থাকলে নারী শ্রমিক কিনতেও চায় না। মজুরি বৈষম্যের কারণে তারা অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন প্রতিটি জায়গায়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা আক্তার বলেন, নয়াবাজর শ্রমিক হাট খুব দ্রুতই পরিদর্শন করবেন তিনি। সেখানে শ্রমিকদের কোন সমস্যা আছে কিনা তাদের সাথে কথা বলে সেই বিষয়গুলো সমাধান করবেন।
মন্তব্য করুন