ভিডিও শনিবার, ১০ মে ২০২৫

ইসলামী দৃষ্টিতে সমাজে নারীর অধিকার ও মর্যাদা

ইসলামী দৃষ্টিতে সমাজে নারীর অধিকার ও মর্যাদা, ছবি : দৈনিক করতোয়া

ইসলাম নারীকে দিয়েছে যথাযথ মর্যাদা ও সম্মান। অন্য ধর্ম বা সমাজ ব্যবস্থা নারীর এত মর্যাদা ও অধিকার দেয়নি। নারীরা মা, স্ত্রী, বোন ও কন্যার পরিচয় বহন করে।

ইসলাম নারীকে যেসব উচ্চ মর্যাদা দিয়েছে তার কিছু দিক তুলে ধরা হলো : মানব ইতিহাসের সর্বনিকৃষ্ট যুগ তথা আরবের 'আইয়ামে জাহেলিয়া'তে নারীর মর্যাদা ও অধিকার বলতে কিছুই ছিল না। সেই যুগটি ইতিহাসে অন্ধকারের যুগ হিসেবে চিহ্নিত করার অন্যতম কারণ হলো- নারীর প্রতি অবমাননা।

সে যুগে নারীদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অধিকারের কোনো বালাই ছিল না। আর নারীর সম্মান ও মর্যাদা; তা ছিল সুদূরপরাহত। কন্যাসন্তানের জন্ম হওয়াকেই মনে করা হতো অপয়া, অলক্ষণে ও মান-ইজ্জতের পরিপন্থি। নারীসমাজের জন্য এমনই এক বিভীষিকাময় অন্ধকারকে দূরীভূত করে নারীর প্রকৃত অবস্থান, উন্নত মর্যাদা আর সব অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করেছে ইসলাম। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে সুরা ‘নিসা’ (অর্থ : নারী) নামে একটি সুরা নাযিল করেছেন।

কন্যা হিসেবে : ইসলাম পুত্রের তুলনায় কন্যাকে কোনো অংশে খাটো করে দেখেনি। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দু’টি কন্যাকে তারা সাবালিকা হওয়া পর্যন্ত লালন পালন করবে, কেয়ামতের দিন আমি এবং সে এ দু’টি আঙ্গুলের মতো পাশাপাশি আসবো (অতঃপর তিনি তার আঙ্গুলগুলি মিলিত করে দেখালেন)। (সহিহ মুসলিম) এ হাদীসের মাধ্যমে ইসলামে নারীর মর্যাদা সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে।

মাতা হিসেবে : মাতা হিসেবে ইসলাম নারীকে সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান প্রদান করেছে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), মানুষের মধ্যে আমার সদ্ব্যবহারের সর্বাপেক্ষা অধিকারী ব্যক্তি কে? তিনি বলেন, তোমার মা। সে বলল, এরপর কে? তিনি বলেন, এর পরও তোমার মা। সে বলল, তারপর কে? তিনি বলেন, তার পরও তোমার মা। সে বলল, এরপর কে? তিনি বলেন, এরপর তোমার পিতা। (বুখারী ও মুসলিম ) রাসুল (স) বলেছেন, "মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত।" (সহিহ মুসলিম)

স্ত্রী হিসেবে : স্ত্রী হিসেবেও ইসলাম নারীকে যথাযোগ্য মর্যাদা প্রদান করেছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, "তারা তোমাদের পোশাক এবং তোমরা তাদের পোশাক"। (সূরা বাক্বারাহ, আয়াত: ১৮৭) "তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সদাচরণ কর"। (সূরা নিসা, আয়াত: ২৯) "নারীর ওপর যেমনি পুরুষের অধিকার রয়েছে, তেমনি নারীরও পুরুষের ওপর অধিকার রয়েছে"। (সূরা বাক্বারাহ, আয়াত: ২২৮)

বাইরে গমন : ইসলাম নারীদেরকে গৃহে অবস্থান করতে বলেছে সত্য, তবে প্রয়োজনে পর্দা করে সংযত হয়ে বাইরে যাওয়ারও অনুমতি দিয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, "আর তোমরা তোমাদের গৃহে অবস্থান করবে। পূর্বের জাহেলী যুগের ন্যায় নিজেদের সাজিয়ে প্রকাশ্যে চলাফেরা করবে না"। (সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৩)

যুদ্ধে অংশগ্রহণ : প্রয়োজনের তাগিদে ইসলামি বিধান অনুযায়ী নারীগণ ধর্মযুদ্ধেও অংশগ্রহণ করতে পারবে। যেমন- উহুদের যুদ্ধে বহু মুসলমান নারী যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াই করেছে এবং আহতদের সেবাযত্ন করেছেন।

সম্পত্তির অধিকার : ইসলামপূর্ব যুগে নারীদেরকে সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হতো, এমনকি বর্তমান যুগেও অন্যান্য ধর্মে সম্পত্তিতে নারীর কোনো অধিকার স্বীকৃত নয়। কিন্তু ইসলামি শরীয়তে নারীদের যথাযোগ্য মর্যাদাসহ তাদের পৈতৃক ও স্বামীর সম্পত্তিতে অংশ নির্ধারিত রয়েছে।

শিক্ষার অধিকার : ইসলাম নারীকে শিক্ষার অধিকার দিয়েছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীদের জন্যও বিদ্যাশিক্ষা ফরজ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহানবি (সা.) বলেছন, 'প্রত্যেক মুসলমানের উপর জ্ঞান অর্জন করা ফরজ'। (ইবনে মাজাহ)

আরও পড়ুন

চাকরির অধিকার : ইসলাম নারীকে অর্থনৈতিক প্রয়োজনে যথাসম্ভব পর্দার সাথে কর্মে নিয়োজিত হওয়ার অধিকারও প্রদান করেছে।

সংসারের তত্ত্বাবধান : ইসলামের দৃষ্টিতে পুরুষ ও নারী পরস্পরের প্রতিযোগী নয়; বরং সহযোগী। এ প্রসঙ্গে মহানবি (স) বলেছেন, "স্ত্রী তার স্বামীর পরিজনবর্গের এবং সন্তানদের তত্ত্বাবধানকারিণী"। (বুখারী ও মুসলিম)

মোহরানা প্রদান : জাহেলী যুগে বিয়ের ব্যাপারে কোনো স্থায়ী বিধান না থাকায় নারীদের জীবন ছিল অনিশ্চিত। পরবর্তীতে ইসলাম পুরুষ কর্তৃক নারীকে মোহরানা দিয়ে বিয়ে করার প্রথা প্রচলন করে তাদের মর্যাদাকে উন্নত করেছে।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন, "তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রদান করবে। যদি তারা সন্তুষ্ট চিত্তে মোহরের কিছু অংশ ছেড়ে দেয় তাহলে তোমরা তা সানন্দে ভোগ করতে পারবে"। (সূরা নিসা, আয়াত: ০৪)

নারী-উন্নয়ন : ইসলাম নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করেছে। বস্তুত মানবতার মুক্তির জন্যই ইসলামের আগমন। নারীরা যখন ছিল অধিকারহারা, বঞ্চিত, নির্যাতিত, লাঞ্ছিত, তখন নারী-উন্নয়নের বার্তা ঘোষণা করেছে ইসলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ইসলামপ্রদত্ত এ অধিকার থেকে নারীদেরকে বঞ্চিত করে তথাকথিত নারীবাদিরা নারী-উন্নয়নের নামে উল্টো পথে যাত্রা শুরু করেছে। তাদের বক্তব্য, "সম্পত্তিতে পুরুষের চেয়ে নারীকে অর্ধেক দিয়ে নারীকে ঠকানো হয়েছে।" অথচ ইসলাম নারীকে অধিকার দিয়েছে পিতার সম্পত্তিতে, স্বামীর সম্পত্তিতে এবং পুত্রের সম্পত্তিতেও।

সম্পত্তিতে অধিকার প্রদানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক যাবতীয় কর্তব্য থেকে নারীকে মুক্তি দিয়েছে ইসলাম। অর্থাৎ নারী অর্থনৈতিক দায়িত্ব পালনে বাধ্য নয়। পক্ষান্তরে পুরুষকে সম্পত্তিতে কেবল অধিকার দিয়েই তাকে নিষ্কৃতি দেওয়া হয়নি; বরং পিতামাতা, ভাই-বোন, স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয়দের প্রতি সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্তব্য পালন তার জন্য অবধারিত করা হয়েছে।

এভাবে নারী-পুরুষের অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে সামঞ্জস্য ও ভারসাম্য রক্ষার জন্যই মূলত পুরুষের তুলনায় নারীকে সম্পত্তিতে অর্ধেক অংশ প্রদান করা হয়েছে। একমাত্র ইসলামই নারীকে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করেছে। নারীর অগ্রযাত্রায় ইসলামি জীবন ব্যবস্থার বিকল্প নেই।

মাহমুদুল হাসান
লেখক : শিক্ষার্থী, আল ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১.৭ ডিগ্রি সূর্য দহনে পুড়ছে রাজশাহী

যুদ্ধে ভারত ও পাকিস্তানের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি: মোদি-শেহবাজের প্রশংসা প্রধান উপদেষ্টার

শাহবাগ ছেড়ে ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে আন্দোলনকারীরা

যুদ্ধবিরতির এক ঘণ্টা পরেই কাশ্মীরে পাকিস্তানের ড্রোন হামলা

বগুড়ার ধুনটে আগুনে পুড়ে নি:স্ব কৃষক পরিবার