দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ভরা মৌসুমেও চালের বাজার অস্থির

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : শস্য ভান্ডার খ্যাত দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী উপজেলায় চলতি মৌসুমের আমন ধান কাটা-মাড়াই প্রায় শেষ পর্যায়ে। বাজারে এসেছে নতুন চাল। তবে দামে স্বস্তি আসেনি। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরণের চাল কেজিতে ৫-৬ টাকা মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তাতে বস্তা প্রতি দাম বেড়েছে ৫-৬শ’ টাকা পর্যন্ত।
একই অবস্থা পুরাতন চালের। এতে করে চরম বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। গতকাল শনিবার পৌর শহরের পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে জানা যায়, ধানের দাম বেশি হওয়ায়, চালের দাম বেড়েছে। আগামীতে চালের দাম আরও বাড়বে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
বাজারে ১শ’ কেজির স্বর্ণা-৫ জাতের চালের বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪ হাজার ৮শ’ টাকা। গুটি স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৯শ’ টাকায়, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৬শ’ টাকা। বাবু কাটারি বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৮শ’ টাকা।
যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ২শ’টাকা। এছাড়াও এশিয়ান কাটারি (মিনিকেট) পুরাতন চাল বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৬শ’টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার টাকায়। ২৮ জাতের (পুরাতন) চাল বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ৪শ’ টাকায়। ২৯ জাতের (পুরাতন) চাল বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৮শ’টাকায়। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার টাকায়।
পৌর শহরের চাল ব্যবসায়ী যুগল কুমার সাহা, শাহিনুর কবির ও খাদেমুল ইসলাম বলেন, বাজারে ধানের দাম বেশি থাকার কারনে চালের দাম বেশি। তারা বলেন, বর্তমানে চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। চালের দাম প্রকারভেদে প্রতি বস্তায় ৫-৬শ’ টাকা বেড়েছে। সামনে হয়তো আরও বাড়তে পারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমে ১৮ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে আমান ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৮ হাজার ৮৭৬ হেক্টর জমিতে সুগন্ধি ব্রি-৩৪ জাতের (জিরা কাটারি ভোগ) ধান চাষ হয়েছে। তা থেকে উৎপাদনের লক্ষ্য ধারা হয়েছে ৩৯ হাজার ৯শ’ মেট্রিকটন। এতে শুধু জিরা কাটারিভোগ বা ব্রি-৩৪ জাতের চিকন ধান চাষ হয়েছে শতকরা ৪৯ ভাগ।
আরও পড়ুনবাকি ৫১ ভাগ জমিতে চাষ করা হয়েছে মোটা এবং মাঝাড়ী স্বর্ণা-৫, গুটি স্বর্ণা, ব্রী-৭৫, ৮৭, ৯০, ৯৩, ৯৪, ৯৫ জাতের ধান, যা থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৯০ হাজার ৬০ মেট্রিকটন। সূত্রটি আরও জানায় ২০০০-২৩-২৪ অর্থবছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ফুলবাড়ী উপজেলায় সাতটি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভার মোট জনসংখ্যা ২ লাখ ১৭ হাজার ৮৫৮ জন। এ উপজেলায় বাৎসরিক খাদ্য চাহিদা ৩৬ হাজার ৬৯ মেট্রিকটন।
ফুলবাড়ী চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, এবার কৃষকরা (জিরাকাটারি) চিকন সুগন্ধি ধান বেশি আবাদ করার কারণে মোটা ধানের সংকট দেখা দিয়েছে। তাই মোটা ধানের সরবরাহ কমে গেছে। এছাড়া ধানের দাম বেশি তাই চালের বাজারও বেশি।
মিল মালিক শামসুল ইসলাম বলেন, এ বছর কৃষকরা বেশি লাভের আশায় উপজেলর ৮০ শতাংশ জমিতে জিরাকাটারি জাতের সুগন্ধি চিকন ধান আবাদ করেছে। বাকি ২০ শতাংশ জমিতে মোটা ধান আবাদ করেছে। সে কারণে মোটা ধানের সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতি আমন মৌসুমে ১০-১২ হাজার মেট্রিকটন ধান কিনি। কিন্তু এবার মাত্র ৩ হাজার মেটিকটন ধান কিনতে পেরেছি।
তিনি বলেন, ধানের দাম বেশি হওয়ার কারণে চালের বাজার বেশি। সরকার ৪৭ টাকা কেজি দরে চালের দাম নির্ধারণ করলেও বাজারে চালের দাম আরও বেশি তাই চুক্তি রক্ষা করতে বাধ্য হয়ে কেজিতে ৪-৫ টাকা লোকসান করে খাদ্য গুদামে চাল দিতে হচ্ছে। এক মণ ধানে ২৭ কেজি চাল হয়। এই চাল শ্রমিকসহ এক মণ চাল প্রসেস করতে খরচ ১শ’ টাকা। এতে চালের উৎপাদন খরচ বাড়ছে।
মন্তব্য করুন