ভোর ৬টায় মারা যান জাকির হোসেন

বিনোদন ডেস্ক : কিংবদন্তি তবলাবাদক ওস্তাদ জাকির হোসেন যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) শিল্পীর পরিবারের পক্ষ থেকে তার বোন খুরশিদ আউলিয়া মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেন। বলেন, ‘সান ফ্রান্সিসকো স্থানীয় সময় রবিবার বিকাল ৪টায় (বাংলাদেশ সময় সোমবার ভোর ৬টা) শান্তিপূর্ণভাবে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। মূলত ভেন্টিলেশনে ছিলেন। সেটির সুইচ অফ করার মধ্যদিয়ে তাকে বিদায় জানাতে হয়েছে।’ বলা হয়েছে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভেন্টিলেশনে ছিলেন।
এর আগে গতকাল রবিবার দিবাগত মধ্যরাতে একই পরিবারের সদস্যরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন, জাকির হোসেনের মৃত্যুর খবরটি মিথ্যা দাবি করে। তবে সেই মৃত্যুর খবর সত্যি এবং পরিবারের ক্ষোভ মিথ্যা প্রমাণ করে সোমবার ভোরে মৃত্যুকে সত্য প্রমাণ করে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তবলা কিংবদন্তি। জাকির হোসেন দীর্ঘদিন রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছিলেন বলে তার ব্যবস্থাপক নির্মলা বাচানী এর আগে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন। তিনি পিটিআইকে বলেন, ফুসফুসজনিত জটিলতা নিয়ে দুই সপ্তাহ আগে জাকির হোসেনকে সান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর অন্যতম সদস্য ছিলেন ওস্তাদ জাকির হোসেনের বাবা আল্লারাখা খান। মুম্বাইয়ে জন্ম নেওয়া এবং কিংবদন্তি তবলা বাদক আল্লা রাখার জ্যেষ্ঠ পুত্র জাকির হোসেন তার বাবার পথ অনুসরণ করে নিজেও ভারতের এবং বিশ্বের অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক আইকন হয়ে ওঠেন। ২০০৯ সালে নিউইয়র্ক টাইমস তার কার্নেগি হলের পারফরম্যান্স সম্পর্কে লিখেছিল, ‘উত্তর ভারতীয় তবলার অতুলনীয় শিল্পী জাকির হোসেন তার নিপুণ কৌশল ও সৃজনশীল উদ্ভাবনশীলতার জন্য পরিচিত। তার আঙুলের গতির ঝাপটা কখনও কখনও উড়ন্ত পাখির ডানার গতির মতোই দ্রুত, কিন্তু তার সংগীত কখনোই কঠিন মনে হয় না।’
আরও পড়ুনএকবার নিজের প্রথম পারফরম্যান্সের গল্প বলার সময় জাকির হোসেন বলেছিলেন, তাদের বাড়িতে তার বাবার জন্য একটি কনসার্টের প্রস্তাব নিয়ে একটি চিঠি আসে। জাকির সেই চিঠির উত্তর দিয়ে জানান যে, তার বাবা ওই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবেন না, তবে তার ছেলে পারফর্ম করতে পারবে। চিঠিতে উল্লেখ করেননি যে, তখন মাত্র ১৩ বছরের শিশু তিনি। সেই সিদ্ধান্ত তার সংগীতজীবনের পথ খুলে দেয়। তিনি বহু প্রখ্যাত ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করেছেন। তবে ১৯৭৩ সালে ইংরেজ গিটারিস্ট জন ম্যাকলফলিন, বেহালাবাদক এল শঙ্কর এবং পারকাশনিস্ট টি এইচ ‘ভিক্কু’ বিনায়াকরামের সঙ্গে তার মিউজিক্যাল প্রজেক্টটি ভারতীয় ধ্রুপদী সংগীত ও জ্যাজের মধ্যে এক অভূতপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়ে গোটা বিশ্ব সংগীতকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। ভারতের অন্যতম সেরা ধ্রুপদী সংগীতশিল্পী হিসেবে পরিচিত এই শিল্পী ১৯৮৮ সালে পদ্মশ্রী, ২০০২ সালে পদ্মভূষণ এবং ২০২৩ সালে পদ্মবিভূষণ পুরস্কারে ভূষিত হন। সূত্র : এনডিটিভি
মন্তব্য করুন