ভিডিও মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারি ২০২৫

নজরুলকে জাতীয় কবির মর্যাদা

নজরুলকে জাতীয় কবির মর্যাদা

কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে মর্যাদা দিয়ে গেজেট প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪) এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এর আগে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। এমন ঘোষণায় আনন্দে আপ্লুত সাহিত্যপ্রেমিরা।

প্রেম, মানবতা ও বিদ্রোহের প্রতীক কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বাংলা কাব্য জগতে কাজী নজরুল ইসলামের আগমন ধূমকেতুর মতো। কারও কারও মতে, কালবৈশাখীর ঝড়ের মতো ঘটে তার আগমন। প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা, বিদেশি শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে কলম ধরেন তিনি। বিদ্রোহ ও বিপ্লবের কবি হিসেবে এলাম এবং জয় করলাম, এর মতো সাফল্যও দেখান এই কবি।

নজরুল একদিকে ছিলেন বিদ্রোহী, অন্যদিকে মানবতাবাদী, বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে তিনি যাবতীয় শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন। বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের যখন আবির্ভাব, তখন কবি রবীন্দ্র নাথ এ দেশের সাহিত্যে এক বিশাল মহীরুহের মতো অবস্থান করছিলেন। সে সময় খুব কম কবিই রবীন্দ্র প্রভাব এড়িয়ে কাব্য চর্চায় সাফল্য পেয়েছিলেন।

কাজী নজরুল ছিলেন সেই মুষ্টিমেয় কবিদের একজন, যিনি রবীন্দ্র প্রভাবের বাইরে বাংলা কবিতায় এক নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন। তখন ভারতসহ পৃথিবীর নানা দেশে বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসন চালু ছিল। তিনি প্রকৃতপক্ষে গোটা ঔপনিবেসিক ব্যবস্থাকেই চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। এদিক দিয়ে নজরুল একক এবং অনন্য। বিশ্ব সাহিত্যে তার মতো কবি বাস্তবিকই খুব কম।

তবু কেউ কেউ কাজী নজরুলের সঙ্গে রুশ কবি মায়কোভস্কি ও তুরস্কের কবি নাজিম হিকমতের কাব্যের মিল খুজে পান। সব কিছু মিলিয়ে নজরুল এক বিচিত্র ও বহুমুখী প্রতিভা। তার গানগুলো জাতিকে জাগরণের পথে প্রেরণা জুগিয়েছে। ইসলামী গানের পাশাপাশি তিনি বেশকিছু শ্যামাসঙ্গীত রচনা করেছিলেন। কিন্তু কোথাও উদার মানবতাবাদকে বিসর্জন দেননি।

আরও পড়ুন

তিনি সারাজীবনই মানবতার সাধনা করেছেন। কাজী নজরুলের কবিতা, গদ্য ও  গান উপমহাদেশের মানুষকে সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছে। সাংবাদিক হিসেবে নজরুল অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন। তার সম্পাদিত ‘ধূমকেতু’ গণমানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছিল। তার ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতা রচনার জন্য কবি রাজদ্রোহের অপরাধে কারাদন্ডে দন্ডিত হন।

মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে ২০২৪ এর অভ্যূত্থান। ছাত্র-জনতা যখনই রুখে দাঁড়িয়েছে তখনই বিদ্রোহী কবি  নজরুলের গান-কবিতাই হয়ে উঠেছে সাম্য প্রতিষ্ঠার শক্তিশালী প্রেরণা। ১৯৮৭ সালে কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবির মর্যাদা দেওয়া হলেও এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয় কোনো স্বীকৃতি ছিল না। শুধু কবি নজরুল ইনস্টিটিউট আইনে জাতীয় কবি হিসেবে কাজী নজরুল ইসলামের নাম উল্লেখ আছে।

এখন তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় কবির স্বীকৃতির সিদ্ধান্তে আনন্দিত সাহিত্যঙ্গন।  নজরুল গবেষক আব্দুল হাই শিকদার বলেন, পৃথিবীতে যতদিন মানুষ স্বাধীনতার কথা বলবে, মাতৃভূমিকে ভালোবাসার কথা বলবে, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলবে, নারী মুক্তির কথা বলবে, অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলবে ততদিন নজরুল পৃথিবীতে প্রাসঙ্গিক থাকবেন। সে জন্য অন্য অনেক কিছু ছাড়া আমাদের চলে কিন্তু নজরুলকে ছাড়া চলে না।

কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা-গান ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অন্যতম প্রেরণা। এই ঢাকাতেই তিনি চির নিদ্রায় শায়িত আছেন। কবি বেঁচে আছেন এ দেশের মানুষের মনে, হৃদয়ে। তিনি তাই মরেও অমর। কবির স্মৃতিকে, তার সাহিত্যকে আমাদের নিজেদের স্বার্থে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কাজী নজরুল বাংলাদেশের জাতীয় কবি। তবে তিনি শুধু বাংলাদেশের সম্পদ নন। তিনি সমগ্র মানব জাতির সম্পদ।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

যারা বিএনপিকে ভয় পায় তারা নির্বাচন দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করছে : বগুড়ায় বিএনপির কর্মী সভায় আ: সালাম

বগুড়ার ধুনটে যমুনায় নৌকার নোঙরে নষ্ট জিও ব্যাগ, ভাঙনের ঝুঁকিতে বাঁধ

নাটোরের বাগাতিপাড়ায় সার ডিলারের দুই লক্ষাধিক টাকা জরিমানা

নকল ছবি কি না বুঝবেন সহজেই, হোয়াটসঅ্যাপে নতুন ফিচার

রংপুরে ৫৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার

টেলিটকের ২ স্পেশাল ডাটা প্যাকেজের উদ্বোধন করলেন নাহিদ