চালের দাম বেড়েই চলছে
দেশে এখন আমনের ভরা মৌসুম হলেও চালের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। গত প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরে নিত্য প্রয়োজনীয় এই পণ্যটির বাজার চড়া। দাম বাড়ার তালিকায় আরো রয়েছে বোতলজাত সয়াবিন তেল, ব্রয়লার মুরগি, আমদানিকৃত পেঁয়াজও। এদিকে বিভিন্ন নিত্য পণ্যের বাজার দরে এ পরিস্থিতিতে কম ভ্যাটের অন্তত ৪৩ ধরনের পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ আরোপের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট বাড়ানোর ফলে সাধারণ ভোক্তার ওপর নতুন করে ব্যয়ের চাপ তৈরি হতে পারে এমন আশংকা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে চাল, ডাল, তেল সহ সব নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে ডিউটি (শুল্ক) জিরো করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, চাহিদা মোতাবেক এসব পণ্য ঠিকমতো আমদানি হচ্ছে কি না, তা মনিটর করা হচ্ছে। চালের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিল পর্যায়ে চালের দাম বেড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে। তবে মিলাররা দাবি করেছেন, ধানের দাম বাড়ায় চালের দাম বেড়েছে। গত শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে মানভেদে প্রতি কেজি চালে দুই থেকে চার টাকা পর্যন্ত বেড়ে মাঝারি মানের চাল পাইজাম, লতা ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা ও সরু জাতের চাল নাজির শাইল/মিনিকেট চার টাকা বেড়ে, তা ৭০ থেকে ৮৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তাদের বাজার দরের প্রতিবেদনে চালের দাম বাড়ার বিষয়টি তুলে ধরেছে।
এদিকে কর অব্যাহতির পরও প্রভাব পড়েনি চালের দামে, উল্টো বাড়ানো হয়েছে দাম। এখন বাড়তি দামেই চাল কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। রাজধানীর মিরপুর-১১ কাঁচা বাজার, পল্লবীর মুসলিম বাজার ৬ ও ১২ নম্বর কাঁচা বাজার ঘুরে শুক্রবার এ চিত্রই দেখা গেছে। মিরপুর-১১ নম্বর বাজারের এক চাল ব্যবসায়ী বলেন, আমনের মৌসুম, ভারত থেকেও চাল আসছে, তবু বাজার চড়া। কোনো কারণ ছাড়াই মিলাররা দাম বাড়াচ্ছে। রমজান সামনে রেখে তারা চালের দাম বাড়াচ্ছেন। মিল পর্যায়ে কড়া তদারকি প্রয়োজন। মিরপুর-৬ নম্বর বাজারের একজন চাল ব্যবসায়ী জানান, কয়দিন আগে ক্ষেত থেকে নতুন ধান উঠানো হয়েছে। ধানের দাম বাড়ছে এমন অজুহাতে মিলাররা চালের বাজার অস্থিতিশীল করে তুলছেন। এর আগে গত বছরের নভেম্বর মাসে চাল আমদানির ওপর ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর রেখে বাকি আমদানি শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করে নিয়েছে এনবিআর। তবুও আমদানি করা চালের দামে কোনো প্রভাব পড়েনি। আমদানি করা মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকার ওপরে।
মুসলিম বাজারের অপর এক চাল বিক্রেতা বলেন, কোথায় কী ভ্যাট-ট্যাক্স কমলো, সেটা তো আমরা জানিনা। আমাদের বেশি দামে কিনতে হয়। বেশিতেই বিক্রি করতে হয়। চালের বাড়তি দামে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে ক্রেতাদের মধ্যে। চাকরিজীবী এক ক্রেতা বলেন, বাজারে একটা জিনিসের দাম কমলে দুইটার দাম বাড়ে। শীতের এই সময়ে চালের দাম বাড়ার কথা না। কেননা নতুন চাল উঠছে বাজারে। তবুও কেন চড়া চালের দাম? এর কোনো উত্তর নেই।
আরও পড়ুনউল্লেখ্য, দেশে মোট চাল উৎপাদনের ৪০ শতাংশ হয় আমন মৌসুমে। চলতি আমন মৌসুমে প্রায় ১ কোটি ৭১ লাখ ৭৮ হাজার টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিই)। মোট ৫৮ লাখ ৭৪ হাজার হেক্টর জমিতে এ বছর ধানের আবাদ করা হয়েছে। গড় ফলন হয়েছে হেক্টর প্রতি প্রায় ৩ টন। উৎপাদন ভালো হওয়ার পরও এবার হঠাৎ করে আমনের ভরা মৌসুমেই মিল পর্যায়ে চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে। গত মাসে প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের নিয়মিত ‘খাদ্য নিরাপত্তা’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ৭১ শতাংশ পরিবার খাদ্য পণ্যের দাম বেশি থাকা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন।
কারণ এ সময়ে দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। আমাদের কথা হচ্ছে, ভাত-প্রধান বাঙালি যদি তাদের চাল কিনতে না পারে, সেটা দু:খজনক। কারণ দেশের স্বল্প আয়ের মানুষ মোটা চাল নির্ভর। মনে রাখতে হবে চালের দাম বেড়ে গেলে সবকিছুর দাম বেড়ে যায়। সুতরাং, সব সময় চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
মন্তব্য করুন