লালমনিরহাটে আ’লীগ নেতা সুমন খানের সম্পত্তি বুঝে নিলো জেলা প্রশাসন
লালমনিরহাট প্রতিনিধি : লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সুমন খানের ক্রোক করা সম্পত্তি বুঝে নিয়ে ব্যানার ঝুলিয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। আজ বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে জেলা প্রশাসকের পক্ষে থেকে একটি দল তার কয়েকটি ভবনসহ স্থাবর সম্পত্তি বুঝে নেয়। এর আগে ১ ডিসেম্বর সুমন খানের স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করার নির্দেশ দেন আদালত। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সিনিয়র দায়রা জজ মোহা. আদীব আলী এ নির্দেশ দেন।
এছাড়াও গত অক্টোবরে সুমন খান এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ২শ’ ৪১ কোটি ৮৯ লাখ ২০ হাজার ৭০ টাকা উপার্জন করে ব্যাংকে রাখায় সিআইডি লালমনিরহাট জেলার এএসপি মোহাম্মদ আব্দুল হাই সরকার বাদি হয়ে মানিলন্ডারিং আইনে মামলা করেন। ওই মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা সুমন খানকে গ্রেপ্তার করে থানা পুলিশ। গত ১১ নভেম্বর রাতে লালমনিরহাট থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় তিস্তা সেতুর টোল প্লাজা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন ১২ নভেম্বর সন্ধ্যায় লালমনিরহাট জেলা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এছাড়াও তাকে আরও একটি মামলায় আরও তিনদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ড শেষে তাকে ঢাকার একটি থানায় দায়ের হওয়া মামলায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়। স্থানীয় সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে আওয়ামী লীগ নেতা সুমন খানের বিরুদ্ধে হত্যা, অর্থ আত্মসাৎসহ মোট ১৬টি মামলা রয়েছে। ৎ
এরমধ্যে চোরাচালান, চাঁদাবাজি, জমি দখল, মাদক, সোনা পাচার, হুন্ডি ব্যবসা আর হুমকি-ধমকিতে গত ১৫ বছরে কয়েকশ’ কোটি টাকা কামিয়েছেন সুমন খান। পেটুয়া বাহিনী গড়ে তুলে হয়েছিলেন অপরাধ চক্রের গডফাদার। জ্ঞাত আয়ের বাইরে সুমনের ব্যাংক হিসাবে মিলেছে মোট ৪৬৫ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য। ওই সূত্রগুলো জানায়, সুমন খান ছিল লালমনিরহাটবাসীর কাছে এক আতঙ্কের নাম। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে শুরু করেন মাদক, ভারতীয় গরু চোরাচালান ও হুন্ডি ব্যবসা। ২০০১ সালে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে বিএনপিতে যোগ দেন সুমন। ২০০৯ সালে পুনরায় ফেরেন আওয়ামী লীগে। নানা অপকর্ম করে গত ১৫ বছরে হয়েছেন অঢেল সম্পদের মালিক। সম্প্রতি সুমন খানের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৪৬৫ কোটি টাকা ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের তথ্য পায় সিআইডি। যার মধ্যে ১৮৬ কোটি টাকার সন্ধান মেলে তার কর্মচারী তৌকির আহমেদ মাসুমের ব্যাংক হিসাবে। পরে এ বিষয়ে মামলা করে সিআইডি।
আরও পড়ুনলালমনিরহাট জেলার এএসপি মোহাম্মদ আব্দুল হাই সরকার জানান, সিআইডি’র মানিলন্ডারিং আইনের মামলায় আসামি সুমন খানকে আদালত ১৭ নভেম্বর শ্যোন অ্যারেস্ট মঞ্জুর করেন। ১৭ থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত মোট তিনদিনের সিআইডি কর্তৃক পুলিশ রিমান্ডে ছিলেন। এরপর গত ১ ডিসেম্বর আদালত তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ, সম্পত্তি ক্রোক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে রিসিভার নিয়োগ করে আদেশ দেন।
এ বিষয়ে লালমনিরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জি আর সারোয়ার বলেন, আমরা আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বর্তমান বাড়ি, নির্মাণাধীন বাড়ি ও একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলো বুঝে নিয়েছি এবং সেগুলোকে সরকারি মালিকানাধীন হিসেবে চিহ্নিত করেছি। তবে এখন থেকে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হবে।
মন্তব্য করুন