ভিডিও রবিবার, ০৪ মে ২০২৫

জয়পুরহাটের কালাইয়ে ১৩ টাকার আলু ঢাকায় ৩০ টাকা

জয়পুরহাটের কালাইয়ে ১৩ টাকার আলু ঢাকায় ৩০ টাকা

কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি : দীর্ঘ পাঁচ বছর পর আলুর বাজারে স্বস্তি ফিরলেও কৃষকের সব স্বপ্ন ভেস্তে যেতে বসেছে। মাঠ বা সড়কের পাশ থেকেই পাইকারি প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ১১ থেকে ১৩ টাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেশ কয়েকবছর ধরে আলুর দামে উত্তাপ ছড়ালেও ফলন ভালো হওয়ায় এবারে বিক্রি হচ্ছে বিগত ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন দামে। জয়পুরহাটের বিভিন্ন উপজেলার আলুর মাঠ ঘুরে এমন তথ্য জানা গেছে।

আলুর মাঠে গিয়ে কৃষক ও পাইকারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আগাম জাতের প্রতি কেজি ডায়মন্ড আলু ১১ থেকে ১৩ টাকায়, কার্ডিনাল ও ক্যারেজ ১০ থেকে ১১ টাকায়, লাল পাকরি (দেশি) ১২ থেকে ১৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চাষিরা উৎপাদন করে লোকশান গুণলেও ব্যবসায়ীরা হাত বদল করেই লাভ করছেন। খুচরা বাজারে জাতভেদে আলুর কেজি আজও ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার জয়পুরহাটে লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে সাড়ে ৪৩ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৯ লাখ ৩১ হাজার ৫শ’ টন আশা করা হচ্ছে। আবওহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর বাম্পার ফলন হচ্ছে, কিন্তু দাম কমে গেছে। দেশের আলু উৎপাদনের শীর্ষ জয়পুরহাটে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে তিন হাজার ৪৭০ হেক্টর বেশি জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এই মৌসুমে আলু চাষে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪০ হাজার হেক্টর জমি। আর আলু চাষ হয়েছে ৪৩ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে।

রোববার পাইকারি দামে আলু কিনতে কালাই উপজেলার হারুঞ্জা মাঠে এসেছেন নওগাঁর ধামুরহাট উপজেলার মুনশ কান্তি নামে এক খুচরা ব্যবসায়ী। কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, আমি আলুসহ সব সবজি খুচরা বিক্রি করি। আমার ৩৫ বছরের দোকানদারি। পাঁচ বছরের মধ্যে আলুর দামে রেকর্ড এবার। মাত্র তিন মাস আগে পুরনো এক কেজি আলু ৬০-৬৫ টাকা পর্যন্ত কিনেছি আমি। ৬০ কেজি ওজনে দুই বস্তা আলু কিনতে সাড়ে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা লাগতো। আজ সেই দুই বস্তা আলু নিছি ১৪৫০ টাকা দিয়ে। কোনো অভিযোগ নেই। এতো কম দামে কয়েকবছরে কিনতে পারিনি। এটা একটা রেকর্ড।

আরেক পাইকার মিঠু ফকির বলেন, রোববার জয়পুরহাটের বিভিন্ন মাঠে আলু বাজার গেছে সর্বোচ্চ ১৩ টাকা কেজিতে। গত রাতে মোকাম থেকে এরকম দামেই আলু কিনতে বলা হয়েছে। তবে বলে দেওয়া দাম অনেক সময় ঠিক থাকে না। কারণ, দাম কম হলে কৃষকরা অনেক সময় আলু ওঠাতে চান না। তখন ২/১ টাকা বাড়তি দামে আলু কিনতে হয়। অর্থাৎ সরবরাহের ওপর নির্ভর করে বাজারদর। বর্তমানে বাজারে আলুর দাম কম যাচ্ছে। কাঁচামালের দাম নিয়মিত ওঠানামা করে।

আরও পড়ুন

হারুঞ্জা গ্রামের কৃষক এনামুল হক বলেন, ৪০ শতক জমিতে ক্যারেজ আলুর ফলন হয়েছে ১২০মণ। খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। ৪৬০ টাকা মণ দরে আলু বিক্রি করেছি ৫৫ হাজার ২০০ টাকা। নিজের শ্রম তো আছেই। লোকশান হয়েছে ২৪ হাজার ৮০০ টাকা। মাঠে আরও আলু আছে, সেগুলোও তুলতে হবে। তা না হলে আলু নষ্ট হয়ে যাবে। এখন কী করবো ভেবে পাচ্ছি না। তিনি আরও বলেন, ইচ্ছে ছিল এবার আলুর টাকায় মেয়েটাকে ধুমধাম করে বিয়ে দিবো। কিন্তু তা আর এবার হবে না।

জয়পুরহাটের ১৩ টাকা কেজির আলু ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে অর্ধেকেরও বেশি বাড়তি দামে অর্থাৎ ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান এ এলাকায় আলু ক্রেতা কারওয়ান বাজারে ফাতেমা ট্রের্ডাস নামে এক আড়ৎদারের প্রতিনিধি মফিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, পাইকারি-খুচরায় দামের ব্যবধান থাকবেই। কাঁচামাল, ঢাকায় পৌঁছাতে শুকিয়ে কমতি, পরিবহন, শ্রমিকসহ নানা খরচ রয়েছে। খুচরায় দাম একটু বেশিই হবে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জয়পুরহাটের বাজারে বিগত পাঁচ বছরে আলুর গড় পাইকারি দাম ছিল ২০২০ সালে ২৯.৫০ টাকা, ২০২১ সালে ২৫.৭০ টাকা, ২০২২ সালে ১৯.২০ টাকা, ২০২৩ সালে ৬০.৮০ টাকা এবং ২০২৪ সালে ৪৮.৫০ টাকা।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মানবিক করিডর নিয়ে কোনও চুক্তি হয়নি : নিরাপত্তা উপদেষ্টা

ভারতের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুঁশিয়ারি 

ঐকমত্য তৈরি করতে হলে সবাইকে ছাড় দিতে হবে : আলী রীয়াজ

মেসির গোলে জয়ে ফিরল মায়ামি

রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক বিএনপি’র

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আপিল শুনানি মঙ্গলবার