দুই উপজেলার সেতুবন্ধন একটি বাঁশের সাঁকো

রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি : নওগাঁর রাণীনগর-আত্রাই উপজেলাবাসীর সেতুবন্ধন এই বাঁশের সাঁকো। স্থানীয়দের রাত-দিন যাতায়াতের জন্য দুই উপজেলার একমাত্র ভরসা। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার হলেও রাণীনগর উপজেলার গোনা ইউনিয়নের ঘোষগ্রাম থেকে আত্রাই উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের মধ্যদিয়ে বয়ে যাওয়া নওগাঁর ছোট যমুনা নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণ না হওয়ায় চরম দুর্ভোগে আছেন এই এলাকার জনগণ।
এই নদী পারাপার হতে শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকো আর বর্ষা মৌসুমে নৌকা একমাত্র ভরসা দাঁড়ায়। ডিজিটাল বাংলাদেশের গ্রামীণ জনপদের ভাল যোগাযোগের ভরসা হিসেবে ঘোষগ্রাম-ক্ষিদ্র কালিকাপুর নামক স্থানে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হলে দুই উপজেলাবাসীর বদলে যাবে জীবনযাত্রা মান।
স্বাধীনতার পর থেকে এই জনপদে বসবাসরত দুই উপজেলার বিশেষ কয়েকটি গ্রামের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগামী ছাত্র-ছাত্রী ও কৃষকসহ হাজার হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। সরকারের নানা উন্নয়নমূলক প্রকল্প আসে প্রকল্প গেলেও ঘোষগ্রাম-কালিকাপুরবাসীর ভাগ্যে জোটেনি একটি পাকা ব্রিজ। যোগাযোগ ব্যবস্থার তেমন উন্নয়ন না হওয়ায় সরকারি অনেক জরুরি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে এই দুই উপজেলার দুই ইউনিয়নের বাসিন্দা।
ভোটের মৌসুম এলে জনপ্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণের নানা আশ্বাস দিলেও শেষ মুহূর্তে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি বলে এলাকাবাসী জানান। জানা যায়, রাণীনগর উপজেলার সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণে গোনা ইউনিয়নের ঘোষগ্রাম এবং আত্রাই উপজেলার সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে কালিকাপুর ইউনিয়নের ক্ষিদ্র কালিকাপুর গ্রামের বুকচিরে বয়ে গেছে নওগাঁর ছোট যুমনা নদী।
প্রায় ৫৩বছর পার হলেও এই নদীতে কোন প্রকার খনন কাজ করা হয়নি। ফলে দিন দিন নাব্যতা সংকটে পড়েছে এই নদী। নদীর বুকে বিশেষ বিশেষ স্থানে চর জেগে উঠার কারণে কৃষি জমিতে সেচ ব্যবস্থা ও নৌ চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সরকারি পর্যায়ে কোন প্রকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়নি। বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি যখন ফুলে-ফেপে উঠে তখন পারিবারিক প্রয়োজনে যাতায়াতের একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়ায় নৌকা।
কিন্তু শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই নদীর পানি কমতে থাকায় নৌকা চলাচল বন্ধ হলে রাণীনগর উপজেলা গোনা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ওই স্থানে ইজারাদার নিয়োগ করা হয়। প্রায় ৩০হাজার টাকা চুক্তিতে ক্ষিদ্র কালিকাপুর গ্রামের আয়মুদ্দিন প্রামানিকের ছেলে বেলাল উদ্দিন লীজ নিয়ে প্রায় আড়াইশ’ ফিট বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে জন সাধারণ পারাপার করেন।
আরও পড়ুনতবে স্থানীয়দের জনপ্রতি বছরে ৭ কেজি ধান এবং বহিরাগত প্রতি জনের ৫ টাকা দিয়ে পারাপার হতে হয় এমনটাই জানান, বেলালের বড় ভাই ফারুক হোসেন। পায়ে হেঁটে সাঁকো পার হয়ে বিশেষ করে কালিকাপুর ইউনিয়নের বসবাসকারি জনসাধারণ তাদের প্রয়োজনের তাগিদে জেলা ও উপজেলা সদরে যেতে হয়।
যানবাহন চলাচলের উপযোগী সরাসরি কোন পথ না থাকায় স্থানীয় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধানসহ অন্যান্য কৃষি পন্যসামগ্রী সহজভাবে বাজারজাত করতে না পারায় নায্য মূল্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে মোটা অংকের লোকসান গুনতে হয়। অনেকটা বাধ্য হয়েই ফড়িয়া ও মহাজনদের কাছে চলমান বাজার মূল্যের চেয়ে কমদামে কৃষিপণ্য বিক্রি করতে হয়।
আত্রাই উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য মিলন হোসেন জানান, আমরা বড় অবহেলিত জনপদে বসবাস করি। চারদিকে নদী-নালা খাল-বিলে ভরা। নির্ভোরযোগ্য কোন যোগাযোগ ব্যবস্থা আমাদের ভাগ্যে জোটেনি। জরুরি বিপদ-আপদে আমাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্যরা এই গ্রামে এসে একটি ব্রিজ নির্মাণের বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও কেউ কথা রাখেনি। তাই এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি জনস্বার্থে একটি নির্মাণ করা হোক।
রাণীনগর উপজেলার গোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক জানান, আমার ঘোষগ্রাম এলাকার অধিক অংশ মানুষের কৃষি জমি কালিকাপুর মাঠে আছে তারা অনেক কষ্ট করে নদী পার হয়ে জমি চাষ করতে হয়। কৃষি পণ্য সামগ্র আনতে তাদের অনেক অসুবিধা হয়। সীমানাগত কারণে আমার পরিষদ থেকে ইজারা দিয়ে ওখানে সাঁকো তৈরি করা হয়। এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হলে দুই উপজেলার মানুষের জীবন যাত্রার মান আনেকটা বদলে যাবে।
রাণীনগর উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইসমাইল হোসেন জানান, ঘোষগ্রাম-কালিকাপুর নামক স্থানে যমুনা নদীর ওপর জনস্বার্থে একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যেই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রস্তাবনা প্রেরণ করেছি। অনুমোদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন