হাতে তৈরি বাহারি নকশার টুপিতে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন কাজিপুরের সহস্রাধিক নারী

আবদুল জলিল, (কাজিপুর) সিরাজগঞ্জ থেকে ঃ সবেমাত্র শীত শেষ হয়েছে। কিন্তু তার আমেজ এখনো রয়ে গেছে। বসন্তের সোনারোদে বসে হাত দিয়ে সুঁই, সুতা দ্বারা টুপি বুনছেন গ্রামের নারীরা। তাদের বয়স কারো ৬৩ আবার কারো ১৪ থেকে ২৫ বছর। সাদা সুতো নখের সাথে বিশেষ কায়দায় আটকে নিয়ে একের পর কুরশ কাঁটা দিয়ে বুনছেন টুপি। এমন দৃশ্য চোখে পড়ে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাড়া-মহল্লায়। সাদা টুপির পাশাপাশি রঙিন সুতোয় বুনছেন নানা রংয়ের টুপি। তাকে ইচ্ছেমতো নানা নকশাও করছেন তারা।
উপজেলার কাজিপুর সদর, সোনামুখী, মাইজবাড়ি ও চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়নের প্রায় সহস্রাধিক নারী কাজের অবসরে টুপি তৈরির কাজ করে। বয়ষ্কদের পাশাপাশি স্কুল-কলেজ পড়ুয়া মেয়েরাও এই কাজ করে বাড়তি অর্থ উপার্জন করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে 'মূলত বগুড়া থেকে পাইকাররা এসে কাজিপুর থেকে টুপিগুলো কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করেন। বর্তমানে তৈরিকৃত টুপিগুলোর মধ্যে চান্দাফুল ৪৫ টাকা, ঢেওফুল ৪০ টাকা, মেহেদিপাতা ১০৫ টাকা, করলার চাক ১১০ টাকা, মাকড়সা ৬৫ টাকা। টুপি তৈরি করে প্রতি জনের মাসিক আয় হয় কাজ ভেদে ১ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকার বেশি। কিন্তু সুতার দাম বেশি হওয়ায় আমাদের কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে চিকন সুতার দাম ছোট নাছি ৭০ টাকা, মোটা সুতার দাম ৭৫-৮০ টাকা। চিকন সুতার দ্বারা টুপি তৈরি হয় সবচেয়ে বেশি।'
চরভানুডাঙ্গার টুপি কারিগর গৃহবধূ স্বপ্না বেগম বলেন, ১০/১২ বছর ধরে এই কাজ করি। অভাবের সংসারে নিজের এবং বাচ্চাদের কাপড় চোপর থেকে শুরু করে তাদের হাত খরচ, কাঁচা বাজারের খরচ মেটাই এই টুপি বিক্রির টাকা দিয়ে।'
৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিতা বলেন, 'আমি লেখাপড়ার পাশাপাশি টুপি তৈরির কাজ শিখেছি মা-চাচিদের কাছে। এখন নিজেই টুপি তৈরি করছি। স্কুল থেকে ফিরে সে টুপি সেলাই করে। এতে করে যা আসে তাই দিয়ে তার লেখাপড়ার ব্যয় মেটানো যায় বলে জানান মিতার মা।
আরও পড়ুনচালিতাডাঙ্গা গ্রামের বিধবা নারী মরিয়ম খাতুন স্বামী সন্তানসহ যমুনার পাড়ে বসবাস করছিলেন। বছর দুয়েক আগে তার স্বামীকে হারিয়েছেন। সেইসাথে যমুনায় হারিয়েছেন তার বাড়িটিও। সব হারিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপনের এক পর্যায়ে তিনি টুপি বুননের কাজ শুরু করেন। ভাইদের সহায়তা আর টুপি বিক্রির অর্থে এখন চলছে তার সংসার।
মাইজবাড়ী ইউনিয়নের ছালাভরা গ্রামের বিধবা আজিরন বেওয়া জানান, ঈদের সময়ে টুপির চাহিদা বেড়ে যায়। আমরা সারা বছর টুপি বানিয়ে কিছু রেখে দেই ঈদের জন্যে। তখন দামও ভালো পাওয়া যায়। তিনি জানান, সরকার যদি আমাদের এই শিল্পের দিকে দৃষ্টি দেয় তাহলে ভালো হতো। নানা প্রশিক্ষণ পেলে আমাদের টুপির মানও ভালো হবে।
টুপি ব্যবসায়ী আবুল কালাম জানান, কাজিপুরে তৈরিকৃত টুপির মান অনেক ভালো। তাই সারা দেশব্যাপী এর চাহিদা রয়েছে। কাজিপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা চিত্রা রানী সাহা জানান, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে নারীদের টুপি তৈরির ব্যাপারে খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। তাদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে টুপি তৈরির প্রশিক্ষণ প্রদানসহ সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন