ভিডিও সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫

জেলায় ২৫ হাজার ৬৩৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ

কুড়িগ্রামে সরিষার বাম্পার ফলন বীজ সংরক্ষণ কাজে ব্যস্ত চাষিরা

কুড়িগ্রামে সরিষার বাম্পার ফলন বীজ সংরক্ষণ কাজে ব্যস্ত চাষিরা

কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের প্রান্তিক কৃষকরা সরিষায় বাম্পার ফলন পাওয়ায় আগামীতে আরও ফলন পেতে নিজেরাই সরিষার বীজ সংরক্ষণ করছেন। এতে কৃষকের অর্থ এবং সময় দুটোই সাশ্রয় হচ্ছে। জেলায় আগামীতে আরও ব্যাপক হারে সরিষা চাষের জন্য প্রান্তিক চাষিরা সরিষা বীজ সংরক্ষণ শুরু করেছে।

জেলায় চলতি মৌসুমে ২৫ হাজার ৬৩৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। আর বিঘা প্রতি গড়ে ফলন পাওয়া যাচ্ছে প্রায় ৫মণ করে। আমন ধান কাটার পর এবং বোরো ধান রোপণ করার আগে এই সময় জমি অনাবাদি থাকতো। তাই অল্প খরচে স্বল্পমেয়াদী ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করে দু’ফসলি জমিকে তিন ফসলি জমিতে রুপান্তরিত করে অর্থনৈতিক লাভবান হচ্ছেন কৃষকগণ।

সরকারি ও বেসরকারি তথ্য অনুসারে জানা যায়, সরিষা বাংলাদেশের প্রধান ভোজ্য তেল ফসল। দেশে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয় এবং প্রায় আড়াই লাখ টন তেল পাওয়া যায়। বিভিন্ন জাতের সরিষার বীজে প্রায় ৪০-৪৪ শতাংশ তেল থাকে। খৈলে প্রায় ৪০ শতাংশ আমিষ থাকে। তাই খৈল গরু ও মহিষের জন্য খুব পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

দেশে টরি, শ্বেত ও রাই এই তিন প্রকার সরিষার চাষ করা হয়। আমন ধান কাটার পর সরিষা লাগানো হয় এবং স্বল্পমেয়াদী এই ফসল চাষ শেষে বোরো ধান রোপণ করা হয়। জেলায় বারি সরিষা-৭ জাতের গাছের পাতা বোটাহীন ও তল মসৃণ। ফুলের পাঁপড়ির রং সাদা। প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ৯০-১২৫টি। বারি সরিষা-৯ এ জাতটি টরি-৭ এর চেয়ে শতকরা ১০-২৫ ভাগ বেশি ফলন দেয়।

আমন ধান কাটার পর এবং বোরো ধান চাষের আগে। স্বল্পমেয়াদী এ জাতটি সহজে চাষ করা সম্ভব। বীজে তেলের পরিমাণ শতকরা ৪৩-৪৪ ভাগ। ফসল পাকতে ৮০-৮৫ দিন সময় লাগে। পরিমাণমত সার ও সেচ দিলে হেক্টরে ১ দশমিক ২৫ হতে ১ দশমিক ৪৫ টন ফলন পাওয়া যায়। বারি সরিষা-১৪ জাতের ফসল ৭৫-৮০ দিনে হয়। হেক্টর প্রতি গতে ফলন হয় ১ দশমিক ৪ হতে ১ দশমিক ৬ টন। আমন ধান কাটার পর স্বল্পমেয়াদী জাত হিসেবে চাষ করে বোরো ধান রোপণ করা যায়।

সরিষা বারি-৭, বারি-৯, বারি-১৪ চাষ হয়েছে বেশি। এরমধ্যে বারি-১৪ জাতের সরিষা কম সময়ে ফলন আসে এবং ফলনও ভালো হয়। তাই কৃষকরা নিজেরাই সরিষা বীজ সংরক্ষণের জন্য কাজ করছে। বীজ সংরক্ষণের জন্য প্রথমে মাড়াই করার পর রোদে ভালো করে শুকানো হয়। এরপর বীজগুলো ঠান্ডা করে প্লাস্টিকের পাত্রে, টিনে বা ড্রামে রেখে মুখ বন্ধ করে রাখেন। যেন পাত্রের ভিতরে বাতাস প্রবেশ করতে না পারে। বীজসহ পাত্র আদ্রর্তা কম এমন ঘরের শীতল স্থানে এক বছর থেকে দু’বছর পর্যন্ত বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা বজায় রাখে।

আরও পড়ুন

রাজারহারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের বিশাল পাড় গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান বলেন, বীজ, হালচাষ, সেচ, ওষুধ, কাটামাড়াসহ বিঘা প্রতি সরিষা চাষে ৫-৬হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গড়ে ৪-৫মণ সরিষা পেয়েছেন। বর্তমান তিন হাজার টাকা মণ হিসেবে ১২ হতে ১৫ হাজার টাকা বাড়তি আয় করেছেন। তাই বারি-১৪ জাতের সরিষা থেকে বীজ সংরক্ষণ শুরু করেছেন। আগামীতে নিজে চাষ করবেন এবং বীজ বিক্রি করবেন।

কৃষাণী মর্জিনা বেগম বলেন, আগে আমাদের জমি বছরে আমন ও বোরো ধান দু’বার চাষ করতাম। কিন্তু এবার আমন শেষে আরডিআরএস বাংলাদেশের সহায়তায় বারি-১৪ জাতের সরিষা চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। এবার সরিষা বিক্রি করে বোরো চাষ করেছি। সয়াবিন তেলের সংকটে সরিষার তেলের চাহিদা বেড়েছে। গরিব কৃষকরা নিজেদের আবাদি সরিষা তেল, শাক খাবার পাশাপাশি সরিষা গাছ জ¦ালানি হিসেবে ব্যবহার করে সাংসারিক খরচ কমিয়ে আনছেন।

আরডিআরএস বাংলাদেশের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক সুবল কুমার প্রামাণিক বলেন, বেসরকারি সংস্থা পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় আরডিআরএস বাংলাদেশের বাস্তবায়নে কৃষি ইউনিটের আওতায় ১০০একর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। তেলজাতীয় ফসল চাষ সম্প্রসারণ, প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে জেলার কৃষি অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে।

রাজারহাট উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুন্নাহার সাথী বলেন, তেল আমদানির নির্ভরতা কমাতে সরকারি-বেসরকারিভাবে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও সরিষার বীজ সংরক্ষণে কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঈদের সামনে বগুড়ায় টানাপার্টি ও পকেটমারদের তৎপরতা বেড়েছে

বগুড়ার ধুনটে বিস্ফোরক মামলায় যুবলীগ নেতা গ্রেফতার

বিসিবির সব ফর্মেটে কেন্দ্রীয় চুক্তিতে রিয়াদের নাম প্রত্যাহার

হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের উপাধ্যক্ষকে কুপিয়ে হত্যা

নারী ও শিশুর প্রতি যৌন সহিংতা বৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ

হৃদয়স্পর্শী বার্তা দিলেন তামান্না