রাজা চার্লসের কাছে পরিচয়পত্র পেশ করলেন বাংলাদেশের হাইকমিশনার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম বাকিংহাম প্যালেসে রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছে আনুষ্ঠানিক পরিচয়পত্র পেশ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১ মে) রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছে পরিচয়পত্র পেশ করার সময় কূটনীতিক প্রটোকল অনুযায়ী হাইকমিশনারের সঙ্গে উপ-হাইকমিশনার হযরত আলী খান ও আরও কয়েকজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
রীতি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিক শোভাযাত্রা সেন্ট জেমসেস কোর্ট থেকে শুরু হয়। যেখান থেকে বাকিংহাম প্যালেসের কর্মকর্তারা হাইকমিশনারকে একটি উন্মুক্ত ঘোড়ার গাড়িতে করে প্রাসাদ পর্যন্ত নিয়ে যান। এ সময় হাইকমিশনের অন্য কর্মকর্তারা পৃথক একটি গাড়িতে করে হাইকমিশনারকে বহনকারী উন্মুক্ত ঘোড়ার গাড়িকে অনুসরণ করেন।
প্রাসাদে পৌঁছানোর পর কাউন্টেস অব অ্যারান, লেডি মার্গারেট ডগলাস এবং বাকিংহাম প্যালেসের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হাইকমিশনারকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানান।
প্রথা অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকতা শেষে, ডিপ্লোমেটিক কোরের মার্শালের নেতৃত্বে হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছে পরিচয়পত্র পেশ করেন।
এ সময় তাদের মধ্যে কুশল বিনিময় হয় এবং এরপর একটি অর্থবহ আলোচনা হয়।
বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ থেকে হাইকমিশনার রাজা চার্লসকে বাংলাদেশ সফরের জন্য আন্তরিকভাবে আমন্ত্রণ জানান। বাংলাদেশে জুলাই-আগস্ট ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের পর চলমান রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের কথা রাজা তৃতীয় চার্লসকে অবহিত করেন হাইকমিশনার।
আরও পড়ুনতিনি আরও উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের জনগণ গণতান্ত্রিক সংস্কারকে আলিঙ্গন করছে এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আরও প্রসারিত হচ্ছে।
হাইকমিশনার আরও জানান, যে তিনজন ছাত্রনেতাকে সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে একজন সম্প্রতি পদত্যাগ করে একটি নতুন রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়েছেন, যা নাগরিক অংশগ্রহণে প্রজন্মগত পরিবর্তনের দিক নির্দেশ করে।
রাজা চার্লস অধ্যাপক ইউনূসকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান এবং তার দাতব্য সংস্থা ও গ্রামীণ ব্যাংকের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে স্মৃতিচারণা করেন।
তিনি জানান যে, এক সময় তিনি বাংলাদেশ সফরের পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু রাণী এলিজাবেথ দ্বিতীয়ের প্রয়াণের কারণে তা সম্ভব হয়নি। সময়সূচি অনুকূল হলে বাংলাদেশ সফরের সম্ভাবনা নিয়েও আশাবাদ ব্যক্ত করেন রাজা চার্লস।
হাইকমিশনারের সঙ্গে রাজা চার্লসের আলোচনায় বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ, বিশেষত জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিও উঠে আসে। তিনি বাংলাদেশের ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও নদী ভাঙনের মতো দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর অবস্থা তুলে ধরেন। জলবিদ্যুৎ বিষয়ে প্রশ্ন করলে হাইকমিশনার তাকে অবহিত করেন যে, বাংলাদেশ নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
রাজা চার্লস বিস্ময় প্রকাশ করেন যে, যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী বাংলাদেশি অভিবাসীদের একটি বড় অংশ সিলেট অঞ্চল থেকে আগত। তিনি জানতে চান হাইকমিশনার কীভাবে এই প্রবাসী জনগোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত আছেন। তিনি প্রবাসী সম্প্রদায়ের ভূমিকাকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করেন এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বকে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেন।
মন্তব্য করুন