বগুড়ায় এবারও চাহিদার তুলনায় কুরবানির পশু বেশি

স্টাফ রিপোর্টার : দেশে কুরবানির গরু ও সারা বছরের মাংসের চাহিদা মেটাতে একসময় ভারতের ওপরই সবচেয়ে বেশি নির্ভর করতে হতো। তবে ভারত থেকে গরু আসা বন্ধের পর সরকারি-বেসরকারি ও স্থানীয়ভাবে পশু উৎপাদনের উদ্যোগে দেশের উৎপাদিত পশুতেই মিটছে চাহিদা। তবে এজন্য দিতে হচ্ছে চড়া মূল্য। গত প্রায় এক দশক ধরেই দেশের উৎপাদিত পশু দিয়েই মিটছে প্রতি বছর কুরবারিন চাহিদা, থাকছে উদ্বৃত্তও। বগুড়াতেও গত কয়েক বছর ধরে কুরবানির পশুর চাহিদার তুলনায় পশু উদ্বৃত্ত থাকছে। তবে পশু প্রতিপালনের খরচ বাড়ায় প্রত্যাশিত বাজেটে মিলছে না কাঙ্খিত পশু।
এবারের ঈদ উল আযাহাকে সামনে রেখে বগুড়ার খামারে খামারে প্রস্তুত করা হচ্ছে কুরবানির পশু। তবে এবছরও গো-খাদ্যের বাড়তি দামের কারণে প্রস্তুতকৃত পশুর প্রত্যাশিত দাম নিয়ে শঙ্কায় আছেন খামারিরা। আবার কুরবানির পশুর দাম সাধ্যের মধ্যে না থাকলে সংকটে পড়বেন মধ্যবিত্ত কুরবানিরদাতারাও। এমন পরিস্থিতিতে কুরবানির পশু প্রস্তুতকারী ও কুরবানি দিতে আগ্রহীরা কিছুটা অস্বস্তিতে। এদিকে বগুড়ায় কুরবানির পশুর চাহিদার বিপরীতে প্রস্তুতকৃত পশু বেশি বলে জানিয়েছে বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস বগুড়া সূত্রে জানা গেছে, এবারের কুরবানির জন্য জেলার মোট ৫১ হাজার ১৪৬ জন খামারি তাদের পশু প্রস্তুত করেছেন, যা গত বছরের তুলনায় দুই হাজার ৬৯৩ জন বেশি। গত বছর জেলায় খামারির সংখ্যা ছিল ৪৮ হাজার ৪৫৩ জন। গত বছর কুরবানির জন্য পশু প্রস্তুত ছিল ৭ লাখ ৩৪ হাজার ৪১৫টি। এবার প্রস্তুত করা হয়েছে ৭ লাখ ৪৬ হাজার ৮৪২টি পশু। গত বছরের তুলনায় এবার পশু বেশি প্রস্তুত আছে ১২ হাজার ৪২৭টি।
প্রস্তুতকৃত পশুর সাথে এবার বেড়েছে কুরবানির পশুর চাহিদাও। গত বছর পশুর চাহিদা ছিল ৭ লাখ ৫ হাজার ২৬০টি। চলতি বছর জেলায় কুরবানির পশুর চাহিদা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯ হাজার ১০টি, যা গত বছরে তুলনায় তিন হাজার ৮৫০টি বেশি। বগুড়ায় এবার চাহিদার তুলনায় কুরবানির পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে ৩৮ হাজার ৪৩২টি। কুরবানির জন্য প্রস্তুতকৃত পশুর মধ্যে ষাঁড় রয়েছে এক লাখ ৯৩ হাজার ৫৯৯টি, বলদ ৪২ হাজার ৭৪৬টি, গাভী রয়েছে ৮০ হাজার ৪২৬টিসহ মোট গরুর পরিমাণ ৩ লাখ ১৬ হাজার ৭৭১টি। এছাড়াও মহিষ রয়েছে দুই হাজার ৩০৪টি, ছাগল রয়েছে ৩ লাখ ৮০ হাজার ৬৩২টি, ভেড়া রয়েছে ৪৭ হাজার ১৪০টি।
বগুড়ার অতিরিক্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নাসরিন পারভিন বলেন, বিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও বগুড়ায় কুরবানির পশুর চাহিদার তুলনায় প্রস্তুতকৃত পশুর সংখ্যা বেশি। এবছর জেলায় যে পরিমাণ কুরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে তার চেয়ে প্রস্তুতকৃত পশুর উদ্বৃত্ত রয়েছে ৩৮ হাজার ৪৩২টি, যা গত বছরের চেয়েও বেশি। তিনি আরও বলেন, আগের যেকোন সময়ের চেয়ে বগুড়ায় খামারি ও পশু প্রতিপালনের পরিমাণ বেড়েছে। জেলায় যে পরিমাণ কুরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে তার চেয়েও বেশি পশু প্রস্তুত থাকায় কুরবানিতে পশুর কোন সংকট হবে না। প্রাণি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর স্টেরয়েড ও হরমোনজাতীয় ওষুধ ব্যবহারের ব্যাপারে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার করে পশু মোটাতাজাকরণের প্রবণতা নেই বললেই চলে।
আরও পড়ুনএদিকে বাড়তি গো-খাদ্যের দামের কারণে এবারের পবিত্র ঈদ উল আযহার কুরবানির পশুর প্রত্যাশিত দাম নিয়ে শঙ্কায় আছেন পশু প্রতিপালনকারীরা।
খামারিরা বলছেন, প্রতিবছর গো-খাদ্যের দাম পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। বিশেষ করে গত এক বছরের ব্যবধানে পশুখাদ্য ভুষি, ধানের কুড়া, খৈল, খড়, ঘাসসহ অন্যান্য খাদ্যের দাম বেড়েছে। সব মিলিয়ে গড়ে প্রতি গরুতে খরচ বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। গত বছর ১শ’ কেজি ওজনের একটি গরু প্রস্তুত করতে যে পরিমাণ টাকা খরচ করতে হয়েছিল এবার তা বেড়েছে, ফলে গত বছর কুরবানির পশুর হাটগুলোতে একই ওজনের গরু যে দামে বেচাকেনা হয় এবার তা স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে।
মন্তব্য করুন