ভিডিও বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

বিশ্বের ‘সবচেয়ে দরিদ্র প্রেসিডেন্ট’ হোসে মুজিকার জীবনাবসান

উরুগুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট, বামপন্থি বিদ্রোহী থেকে জনপ্রিয় নেতা হয়ে ওঠা হোসে ‘পেপে’ মুজিকা। ছবি: সংগৃহীত।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : উরুগুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট, বামপন্থি বিদ্রোহী থেকে জনপ্রিয় নেতা হয়ে ওঠা হোসে ‘পেপে’ মুজিকা ৮৯ বছর বয়সে মারা গেছেন। মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বার্তায় উরুগুয়ের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইয়ামান্দু ওর্সি তার মৃত্যুর খবর জানান।

২০২৪ সালে মুজিকার গলায় ক্যানসার ধরা পড়ে। মৃত্যুর ঘোষণা দিয়ে ওর্সি লেখেন, গভীর দুঃখের সঙ্গে আমাদের সহকর্মী পেপে মুজিকার মৃত্যু ঘোষণা করছি। আপনি আমাদের জন্য যা রেখে গেছেন, এবং আপনার মানুষদের প্রতি যে ভালোবাসা দেখিয়েছেন, তার জন্য ধন্যবাদ।
২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মুজিকা। বিশ্বজুড়ে তিনি পরিচিত ছিলেন তার সরল জীবনধারার জন্য। প্রেসিডেন্ট থাকার সময়ও তিনি বিলাসবহুল প্রাসাদ ছেড়ে রাজধানী মন্টেভিডিওর উপকণ্ঠে নিজ ফুলচাষের খামারে থাকতেন। ২০২২ সালে আল জাজিরাকে তিনি বলেছিলেন, রাজনীতি যদি বিলাসে ডুবে যায়, তা মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আমি বিশ্বাস করি, রাজনীতিবিদদের দেশের সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন করা উচিত, বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্তদের মতো নয়। 

১৯৭৩ সালে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উরুগুয়ে এক বর্বর সামরিক শাসনের অধীনে চলে যায়, যেখানে গুম, নির্যাতনসহ নানা মানবাধিকার লঙ্ঘন সংঘটিত হয়। তবে ১৯৮৫ সালে গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটলে মুজিকাসহ অন্যান্য বিদ্রোহীরা সাধারণ ক্ষমায় মুক্তি পান। এরপর তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং কেন্দ্র-বাম জোট ‘ফ্রেন্তে অ্যাম্পলিও’তে যোগ দেন। ৭৪ বছর বয়সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে তিনি গর্ভপাত ও সমকামী বিয়েকে বৈধতা দেন, গাঁজা বৈধকরণে নেতৃত্ব দেন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে গুরুত্ব দেন, যা পরিবেশ নিয়ে উরুগুয়েকে অগ্রণী অবস্থানে নিয়ে যায়। তার স্ত্রী লুসিয়া তোপোলানস্কি, যিনি তুপামারোস আন্দোলনের সময়েই তার সঙ্গে পরিচিত হন, তিনিও সক্রিয় রাজনীতিক ছিলেন এবং পরে মুজিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট হন।

আরও পড়ুন

মুজিকা প্রেসিডেন্ট থাকাকালে বাস করতেন একটি সাধারণ খামারে, চালাতেন পুরনো একটি নীল রঙের ভক্সওয়াগন বিটল গাড়ি। এ কারণে অনেকেই তাকে ডাকতেন বিশ্বের সবচেয়ে গরিব প্রেসিডেন্ট বলে। ২০২২ সালে আল জাজিরাকে তিনি বলেছিলেন, আমরা একজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করি, আর যেন রাজা নির্বাচন করি -লাল গালিচা, প্রাসাদ, রাজকীয় আচরণ। কিন্তু দোষ শূকরছানার নয়, যারা তার পিঠ চুলকায়, তাদের।

প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়ার পরও তিনি লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং উরুগুয়ের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন। ২০২৪ সালে তিনি রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, সমস্যা হলো, দুনিয়া চালায় বৃদ্ধরা, যারা ভুলে যায় তারা কখনো তরুণ ছিল।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের চিকিৎসায় ক্যানসার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে জানা যায় এটি তার যকৃতে ছড়িয়ে পড়েছে। শেষ জীবনে তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে, আমি মরতে চলেছি। তবে একজন যোদ্ধার বিশ্রাম নেওয়ার অধিকার তো থাকেই’।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সিরাজগঞ্জে মহাসড়কে ১২ দিনে মামলা অর্ধশত, জরিমানা ৬ লাখ টাকা

গরমে অন্তঃসত্ত্বা নারীর সুস্থ থাকবেন যেভাবে

গাজীপুরে গাড়ির জন্য অপেক্ষা বাসচাপায় নারী শ্রমিক নিহত

গাইবান্ধায় বিপিএস কারেন্ট পোকার আক্রমণ ঠেকাতে পর্যুদস্ত কৃষক

নেত্রকোনায় বজ্রপাতে যুবকের মৃত্যু

 হবিগঞ্জের ইউপি চেয়ারম্যানকে পিটিয়ে পুলিশে দিয়েছে যুবকেরা