ভিডিও রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন,সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচারণায়

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচারণায় ।

ইসহাক আসিফ, ঢাকা অফিস :  ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি অনুষ্ঠিত হওয়ার বিয়ষে অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপি একমত হয়েছে। ফলে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সৃষ্টি জটিলতা কেটেছে।

এদিকে, ঈদুল আজহা পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ের মধ্যদিয়ে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন। তারা উঠান বৈঠক, আলোচনা সভা, সেমিনার এবং গণসংযোগ বাড়িয়েছেন। মূলত তারা যার যার মত করে এ সব আয়োজনের মধ্যদিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙা করছেন। সেই সাথে ভোটারদের কাছে দলীয় প্রতীক ধানের শীষে ভোট চাচ্ছেন।


বিএনপির একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী জানিয়েছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। তাই সেই দিকে লক্ষ্য রেখে তারা প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন। তবে আসন্ন এই নির্বাচনের প্রচারণায় দল থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। তাই, ইন্ডাইরেক্টলি (পরোক্ষভাবে) প্রচারণার কথা বলছেন বিএনপির ওই প্রার্থীরা। জানতে চাইলে বগুড়া জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো: মোশারফ হোসেন করতোয়াকে বলেন, আমরা যখনই এলাকায় আসি তখনই দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের কাছে ভোট প্রার্থনা করে থাকি।


বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু) আসনের সাবেক এমপি মোশারফ হোসেন ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির সমর্থনে ওই আসনে নির্বাচিত হন। তিনি জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওই আসন থেকে তিনি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। সেইদিক লক্ষ্য রেখে ব্যাপক গণসংযোগ চালাচ্ছেন। মোশারফ হোসেন বলেন, ঈদুল আজহা উদযাপন উপলক্ষে আমার নির্বাচনী আসনে দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক গণসংযোগ করেছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের চিন্তা ভাবনা দেশ এবং জাতিকে ভালো কিছুর উপহার দেওয়া। আমার নেতা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানও সেই কথা বলে থাকেন।


অপরদিকে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের মধ্যে উৎসাহ ও উদ্দীপনার কমতি নেই। ঈদের ছুটিতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রদের রাজনৈতিক সংগঠন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা নিজ নিজ নির্বাচনী আসনে গিয়ে গণসংযোগ চালিয়েছেন। খোঁজখবর নিয়েছেন দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের। বিশেষ করে তাদের বিভিন্ন আয়োজন ও মহড়া ছিল চোখে পড়ার মতো। দলগুলো সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ আসনে দুস্থ, অসহায় মানুষের জন্য উপহার এবং জাকাত-ফিতরা বিতরণ করেছেন। এখন তারা ঈদের পর জেলা-উপজেলায় নেতাকর্মীদের নিয়ে ঈদ পুনর্মিলনী করছেন।


প্রার্থী চূড়ান্তের বিষয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারণী মহলে থেকে জানা গেছে, দলটির হাইকমান্ড এবার কয়েক দফায় যাচাই-বাছাই করেই চূড়ান্ত করবেন। আর তিনশ আসনে প্রায় জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ঠিক করা হয়েছে। বিশেষ ক্ষেত্রে যোজন-বিয়োজন হতে পারে বলে দলটির সূত্রে জানা গেছে।


জানা গেছে, এবার ঈদুল আজহা উপযাপন ছিল বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে অন্যরকম। কারণ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এবার প্রথম ঈদুল আজহা উদযাপন করতে পেরেছেন ফ্যাসিস্ট বিরোধী বিএনপিসহ রাজনৈতিক অন্য দলগুলোর নেতারা।


বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, ঈদের ছুটি পেয়ে দলটির সাবেক এমপি ও সম্ভাব্য প্রার্থীরা ছুটে গেছেন নেতাকর্মীদের কাছে। হেভিওয়েট থেকে শুরু করে তরুণ সাবেক সংসদ সদস্য ও নেতাদের বেশিরভাগ এলাকায় ঈদ করেছেন। এতে নিজ নিজ আসনের তৃণমূল মানুষের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক তৈরি করতে পেরেছেন তারা।

আরও পড়ুন

অপরদিকে ফ্যাসিস্ট বিহীন (আওয়ামী লীগ) আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনী মাঠে ভিন্ন আবহের সৃষ্টি হয়েছে দেশে। ফলে বিএনপির শীর্ষ নেতা ও সম্ভাব্য প্রার্থীরা ঈদের আগে এবং ঈদ পরবর্তী ব্যাপক গণসংযোগ করেছেন।


বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ (জিএম সিরাজ)। এর আগেও এই আসন থেকে একাধিকবার বিএনপির সমর্থনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এদিকে ওই আসন থেকে জিএম সিরাজের ছেলে বগুড়া জেলা এবং শেরপুর উপজেলা বিএনপির নির্বাহী সদস্য আসিফ সিরাজ রব্বানীও দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন। মূলত পরিবারের মধ্যে থেকে দলের মনোনয়ন নিশ্চিতে তিনি এই প্রত্যাশা করছেন। আসিফ সিরাজ রব্বানী এসআর গ্রুপের এমডিও। আসিফ সিরাজ রব্বানী জানান, জাতীয় নির্বাচন খেয়াল রেখে তার বাবা ও তিনি নির্বাচনী আসনের (শেরপুর-ধুনট উপজেলা) বিভিন্ন স্থানে দলের নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষের সাথে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ের মধ্যে দিয়ে ব্যাপক গণসংযোগ করেছেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও গণসংযোগ করে আমরা নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মাঝে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রেরিত বার্তা, ঈদ শুভেচ্ছা পৌঁছে দিয়েছি। এবং দেশের সমসাময়িক রাজনীতি ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।


কুড়িগ্রাম-১ আসনে (ভুরুঙ্গামারী ও নাগেশ্বরী) থেকে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য বিশিষ্ট কার্ডিওলজিস্ট সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো: ইউনুস আলী। তিনি করতোয়াকে বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে আমার নির্বাচনী আসনে দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছি। এক প্রশ্নের জবাবে ইউনুস আলী বলেন, যেহেতু দল থেকে এখনো নির্দেশ আসেনি নির্বাচনী গণসংযোগের, তাই ব্যক্তিগতভাবে (ইনডাইরেক্টলি) দলীয় নেতাকর্মী ও ভোটারদের সঙ্গে যতটুকু যোগাযোগ রাখা যায় ততটুকু করে যাচ্ছি।


রংপুর-২ (তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ) আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামী। দলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে আসনটির প্রার্থী করা হয়েছে। আজহারুল ইসলাম জানান, অন্তর্বর্তী সরকার যেন দ্রুত সংস্কার কাজ শেষ করে নির্বাচন দেন। কারণ বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। তিনি অনুরোধ করেন এই সরকার যেন ভোট বিপ্লব ঘটান। আজহারুল ইসলাম বলেন, আমি ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৯ সালে নির্বাচন করেছি। কিন্তু ভোটারেরা আমাকে চাননি। তাই এমপিও হতে পারিনি। তবে, এবার নির্বাচনে তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।


সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া-সলঙ্গা) আসন থেকে দলের প্রার্থীতা পেয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। এবার ঈদের আগে এবং ঈদ পরবর্তী আসনটির বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করেছেন তিনি। দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়-এর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের খোঁজখবর নিয়েছেন রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার এরমধ্যে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে। জনগণ এবার রায় দেবে দখলদার, চাঁদাবাজ ও গণতন্ত্র হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে। রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রিয় উল্লাপাড়া ও সলঙ্গা আগামীদিনে সুখী সমৃদ্ধশালী আধুনিক এবং মানবিকভাবে গড়ে তুলতে দলমত নির্বিশেষে এগিয়ে যাব। যেখানে কোন চাদাবাজ, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, শোষন, দুর্নীতি ও দখলবাজদের কেউ থাকবে না। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচনে এই আসন থেকে তিনি ধানের প্রতীকে এমপি নির্বাচন করেছিলেন রফিকুল ইসলাম খান।


পঞ্চগড়-১ (সদর, তেঁতুলিয়া ও আটোয়ারী) আসন থেকে নির্বাচন করতে চান এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। ঈদুল আযহা উপলক্ষে তিনি দলের প্রচারণা চালিয়েছেন গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, দিনাজপুর এবং নীলফামারীর ৩১টি উপজেলায়। এর আগেও সারজিস আলম পঞ্চগড়ে ব্যান্ডপার্টিসহ শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে গণসংযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, দলের ফোরাম আমাকে যদি পঞ্চগড়-১ আসনের জন্য নির্ধারণ করে-তাহলে কাজ করতে পারব। তিনি বলেন, এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য, কে কোন আসনে নির্বাচন করবেন সেটি নয়। বরং বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়নকে দলের ব্যানারে সংগঠিত করা।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কুড়িগ্রামে এখনও বিতরণ করা হয়নি ভিজিএফ এর ১৮ মে.টন চাল

দীর্ঘদিন বন্ধ করে রাখা বাগাতিপাড়ার ‘ইউএনও পার্ক’ এখনও খোলা হচ্ছে না

বগুড়ার সান্তাহারে সড়ক দুর্ঘটনায় শিশুর মৃত্যু, চালক গ্রেফতার

বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় শিশু ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে মামলা, গ্রেফতার ১

বগুড়ার কাহালুতে পাহারাদারকে বেঁধে ট্রান্সফরমারের কয়েলসহ মিটার চুরি

বগুড়ার শেরপুরে বেড়েছে চুরি ডাকাতি ও ছিনতাই, আতঙ্কিত এলাকাবাসী