নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত শাকিলের পরিবার
বগুড়ায় বহিস্কৃত স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা জিতুর যত অপরাধ

স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়ায় ৮ম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় রিকশাচালক বাবা শাকিলকে তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত বেশিরভাগ আসামি ধরাছোঁয়ার বাইরে।
তবে প্রধান আসামি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের বহিস্কৃত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিতু ইসলাম (৫০) ও তার দুই সহযোগী শফিকুল হাসান (২৮) ও মতিউর রহমানকে (২৫) গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার বাকি ২৪ আসামি এখনও অধরা। যে কারণে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত শাকিলের স্ত্রী মামলার বাদি মালেকা বেগম।
আজ মঙ্গলবার (১৭ জুন) তিনি দৈনিক করতোয়াকে বলেন, তার এবং তার মেয়ের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত তিনি। তার মেয়ে ভয় পেয়েছে। ঈদের ছুটির পর আগামী ২২ জুন থেকে মেয়ের স্কুল খুলবে। তার মেয়ে শিববাটিতে হাসনা-জাহান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। কিন্তু মেয়েকে স্কুলে পাঠাতে তিনি ভয় পাচ্ছেন। কারণ এখনও বেশিরভাগ আসামি বাইরে রয়েছে। এজন্য তিনি ও তার মেয়েসহ পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
এদিকে সদর থানার ওসি হাসান বাসির বলেন, শাকিলের পরিবারের কোন ভয় নেই। যথাযথ নিরাপত্তা দেওয়া হবে। বিয়টি পুলিশের নজর দারিতে আছে। ইতিমধ্যে এ হত্যা মামলার প্রধান আসামি জিতুসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই তিন আসামিকে পাঁচ দিনের রিমান্ড নেয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (১৭ জুন) রিমান্ডের ২য় দিন পার হয়েছে। এ হত্যাকান্ডে মূল নায়ক জিতু শাকিলকে হত্যার কথা স্বীকারও করেছে।
পুলিশের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে জিতু বলে, শিববাটি শাহি মসজিদ এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক শাকিল মিয়ার স্কুলপড়ুয়া মেয়ের দিকে চোখ পড়ে তার। কিশোরীকে বিয়ে করতে বাবা শাকিল মিয়াকে চাপ দেয়, কিন্তু শাকিল রাজি হননি। এ নিয়ে বিরোধের জেরে গত ১৪ জুন শনিবার বিকেলে বাড়ি থেকে ক্যাডার বাহিনী দিয়ে শাকিলকে তুলে নিয়ে গিয়ে তিনি ও তার বাহিনীর সদস্যরা পিটিয়ে হত্যা করে।
অপরদিকে, অনুসন্ধানে হত্যা ছাড়াও জিতুর নানা অপরাধের তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। স্থানীয়রা জানান, কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত বগুড়া জেলা যুবলীগের সভাপতি পলাতক শুভাশীষ পোদ্দার লিটনের এক সময়কার সহচর, শহরের ফুলবাড়ি ও শিববাটি এলাকার ত্রাস জিতু এমন কোন অপরাধ নেই যা করেনি। হত্যা থেকে শুরু ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে যুক্ত সে। ২০০৮ সালে শহরের ফুলবাড়িতে রবিউল ইসলামকে খুন করা হয়।
আরও পড়ুনপরে সেই হত্যা মামলয় প্রধান আসামি হয় জিতু। বালু ব্যবসা নিয়ে বিরোধে জিতু ও তার সহযোগীদের হাতে সেসময় খুন হন রবিউল। পরে এ হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয় জিতু। পরে হত্যা মামলার রায়ে বিচারক তাকে ১৪ বছরের কারাদন্ড দেন। কিন্তু কারাগারে ৮-৯ বছর বন্দি থাকার পর উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে বেরিয়ে আসে সে।
কারাগার থেকে বছর তিনেক আগে বেরিয়ে এসে বগুড়া জেলা যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে জিতু। যুবলীগের বগুড়া জেলা সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার লিটনের সহচর ছিল সে। এলাকায় প্রতিষ্ঠা করে নিজের আধিপত্য।
গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরও এলাকায় তার সেই দাপট আরও বেড়ে যায়। পরে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা হয়ে এলাকায় মোটরসাইকেলে দাপিয়ে বেড়ায় নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। গড়ে তোলে জিতু বাহিনী। চলাফেরা করত ২০-২৫ জনকে নিয়ে, বনে যান অপরাধ জগতের কিং।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল বলেন, ‘জিতু ইসলামের অপকর্মের দায় সংগঠন নেবে না। এ কারণে ঘটনার পরপরই সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাকে বহিস্কারের সুপারিশ করে কেন্দ্রে চিঠি পাঠানো হয়। স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এসএম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসানের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে রাতেই জিতু ইসলামকে বহিস্কার করা হয়।
মন্তব্য করুন