লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানায় হামলা চালিয়ে ২ আসামি ছিনতাই, ওসিসহ আহত ২৩

লালমনিরহাট প্রতিনিধি : লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানায় সংঘবদ্ধভাবে হামলা চালিয়ে সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ছিনিয়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) অন্তত ২৩ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত দুই পুলিশ সদস্যকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গত বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনাটি ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২ থেকে আড়াইশ’ লোক একযোগে থানায় হামলা চালায়। তারা থানার ভেতরে প্রবেশ করে চেয়ার, টেবিল, কম্পিউটার, ল্যাপটপ ভাঙচুর করে এবং গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র তছনছ করে। ইট-পাটকেল ছুঁড়ে জানালার কাঁচ ও দরজা ভেঙে ফেলে। পুলিশ বাধা দিলে উভয়পক্ষে সংঘর্ষ শুরু হয়।
পাটগ্রাম থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, দুর্বৃত্তরা পুলিশের কাছ থেকে জোরপূর্বক হাজতখানার তালার চাবি নিয়ে সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামি বেলাল ও সোহেল রানা চপলকে ছিনিয়ে নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হলেও উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়।
পরে লালমনিরহাট, হাতীবান্ধা ও কালীগঞ্জ থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্য এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এর আগে বিক্ষুব্ধরা পাটগ্রাম প্রবেশ পথের রাস্তায় ব্যারিকেট দিলে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের ঘটনাস্থলে পৌছাতে কিছুটা বিলম্ব হয়। পুলিশের ওই অফিসার আরও বলেন, হামলায় জড়িতদের অনেককে চিহ্নিত করা গেছে।
পুলিশের দায়িত্বশীল সুত্র গুলো জানায়, এদিন সন্ধ্যায় সরোরবাজার এলাকায় চাঁদাবাজির সময় বেলাল ও সোহেলকে হাতেনাতে আটক করা হয়। পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উত্তম কুমার দাশ আটক ওই দু’জনকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। সাজা দেয়ার বিষযটি নিশ্চিত করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওই বিচারক ও পাটগ্রামের ইউএনও উত্তম কুমার দাশ।
তবে বিএনপির পাটগ্রাম উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ওলিউর রহমান সোহেল দাবি করেন, এটি বিএনপির সঙ্গে পুলিশের কোনো সংঘর্ষ নয়। মূল বিষয়টি পাথর কোয়ারি ইজারাদারদের সাথে সংশ্লিষ্ট। এঘটনায় পাটগ্রামের পাথরমহালের ইজারাদার মাহমুদ হোসেন গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এনিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।
আরও পড়ুনসংবাদ সম্মেলন থেকে তিনি উল্লেখ করেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) উত্তম কুমার দাশ এবং থানার ওসি মিজানুর রহমান তাদের কাছে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। এই টাকা না দেওয়ায় ২ জুলাই চেকপোস্ট থেকে তাদের দুইজন কোয়ারি কর্মীকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। বিষয়টি জানার জন্য আমরা এ রাতে থানায় গেলে ওসি আমাকেসহ আমার কয়েকজন সহযোগীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ব্যবসায়ীসহ শুভাকাক্সক্ষীরা থানার সামনে জড়ো হয়। তখন ওসির নির্দেশে পুলিশ টিয়ারশেল ও গুলি চালায়। এতে আমাদের অন্তত ১৭ জন আহত হন। ফলে পরিস্থিতি বেগতিক হয়। এদিকেই রাতেই ঘটনার খবর পেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার, পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পাটগ্রাম থানা পরিদর্শন করেন।
দিনভর তদারকি শেষে ডিআইজি আমিনুল ইসলাম উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, পাটগ্রামের সরেওর বাজার এলাকায় চাঁদা আদায়ের সময় ইউএনও ও ওসি ঘটনাস্থল থেকে দুইজনকে ধরে এনে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেন। পরে সাজাপ্রাপ্তদের থানায় নেওয়ার সময় দুর্বৃত্তরা তাদের দু’জনকে ছিনিয়ে নেয়। এসময় বিক্ষুব্ধরা থানার ল্যাপটপ, পুলিশের পিকআপসহ অন্যান্য সরঞ্জাম ভাঙচুরসহ ব্যপক ক্ষতিসাধন করে বলে জানায় পুলিশের একাধিক সূত্র।
থানায় হামলাকারীদের কোন দল নেই জানিয়ে ডিআইজি আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, অপরাধীরা যেই হোক না কেন তাদেরে ছাড় দেয়া হবে না। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) উত্তম কুমার দাশ এবং থানার ওসি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করার বিষয়ে জানতে চেয়ে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
বর্তমানে থানায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবির টহল চলছে। পুরো বিষয়টি নিয়ে পাটগ্রামে উত্তেজনার পাশাপাশি থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
মন্তব্য করুন