রাত ১২টার পর ঘুমালে আপনার যে ৫টি রোগ অবধারিত

বর্তমান যুগে রাত জাগা যেন এক অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কেউ কাজের চাপ, কেউ মোবাইল বা সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি, আবার কেউ নিছক অভ্যেসের বশে প্রতিদিনই দেরিতে ঘুমাতে যাচ্ছেন। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না—এই অভ্যাস শরীরে ডেকে আনতে পারে ভয়ংকর বিপদ।
বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব শুধু দৈনন্দিন কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয় না, বরং শরীরে বাসা বাঁধায় দীর্ঘস্থায়ী ও জটিল রোগ। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে চিকিৎসকরা এমনই ৫টি মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা উল্লেখ করেছেন, যা নিয়মিত রাত জাগার কারণে হতে পারে।
চলুন জেনে নিই, দেরি করে ঘুমালে শরীরে কী কী ক্ষতি হতে পারে—
১. মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়
যুক্তরাজ্যের একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মানুষ নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম থেকে বঞ্চিত হন, তাদের মধ্যে মৃত্যুহার তুলনামূলকভাবে বেশি। বিশেষত, ঘুমের ঘাটতির ফলে হৃদরোগ ও সংবহনতন্ত্রের রোগের আশঙ্কা বেড়ে যায়। একটানা রাত জাগা হৃদপিণ্ডের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যা মারাত্মক পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়।
২. দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা
ঘুমের অভাব শুধু সাময়িক ক্লান্তিই নয়, বরং এটি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের কারণ হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অনিদ্রায় ভোগা প্রায় ৯০% মানুষই কোনো না কোনো দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক সমস্যায় ভুগে থাকেন।
৩. মানসিক অবসাদ ও উদ্বেগ বৃদ্ধি
ঘুম ও মানসিক স্বাস্থ্যের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। একাধিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যাঁরা রাতে গড়ে ৬ ঘণ্টারও কম ঘুমান, তাঁদের মধ্যে মানসিক অবসাদ, দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগের প্রবণতা বেশি। দীর্ঘ সময় ঘুমের ঘাটতি থাকলে মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের ভারসাম্য নষ্ট হয়, যা বিষণ্ণতা ও মানসিক অস্থিরতা বাড়িয়ে দেয়।
আরও পড়ুন৪. স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে
ঘুমের সময় মস্তিষ্ক ‘শার্প ওয়েভ রিপালস’ নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্মৃতি সংরক্ষণ করে। এটি নিওকর্টেক্স ও হিপোক্যাম্পাসের মাধ্যমে ঘটে এবং এই প্রক্রিয়া গভীর ঘুমেই সবচেয়ে কার্যকর হয়। দেরি করে ঘুমাতে গেলে বা ঘুম কম হলে, এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। ফলে ভুলে যাওয়া, মনোযোগের ঘাটতি এবং শেখার ক্ষমতা কমে যায়।
৫. যৌন সমস্যার আশঙ্কা
পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব সরাসরি যৌন ইচ্ছা ও কর্মক্ষমতায় প্রভাব ফেলে। গবেষণায় দেখা গেছে, বিশেষত পুরুষদের মধ্যে ঘুমের ঘাটতির কারণে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা হ্রাস পায়। এর ফলে যৌন আকর্ষণ কমে যেতে পারে, সম্পর্কের ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়ে। নারীদের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, ঘুম না হলে সঙ্গীর প্রতি আগ্রহ হ্রাস পায় এবং যৌন জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
ঘুমের আদর্শ সময় ও পরামর্শ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং স্লিপ ফাউন্ডেশন-এর মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। অনিয়মিত ঘুমের সময়সূচি, দেরি করে ঘুমানো এবং ঘন ঘন ঘুম ভেঙে যাওয়া—সবকিছুই দীর্ঘমেয়াদে শরীর ও মনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন- প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া, শোবার আগে মোবাইল বা টিভি থেকে দূরে থাকা, ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় এড়িয়ে চলা, ঘুমের পরিবেশ শীতল, অন্ধকার ও নিরিবিলি রাখা।
ঘুম কোনো বিলাসিতা নয়, এটি শরীর ও মনের সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। যারা নিয়মিত রাত জাগেন বা দেরিতে ঘুমান, তারা আজই ঘুমের রুটিনে পরিবর্তন আনুন। কারণ একবার বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে গেলে, তা পুষিয়ে নেওয়া কঠিন হতে পারে।
মন্তব্য করুন